জ্বরহীন করোনায় বাড়ছে ভয়, লক্ষণ— মলিন চেহারা, অদ্ভুত আচরণ

দেশে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ জ্বরহীন করোনা রোগী থাকার আলামত মিলেছে বলে জানিয়েছেন করোনা চিকিৎসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। যা মহামারি পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে রীতিমতো ভয় জাগাচ্ছে। বর্তমানে বিপুলসংখ্যক জ্বরহীন করোনা রোগী তাদের রোগ সম্পর্কে না জেনে নির্দ্বিধায় সবখানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এতে সংক্রমণের মাত্রা তীব্র আকারে ছড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া এ ধরনের রোগীর করোনা শনাক্তে দীর্ঘ বিলম্ব হওয়ায় মৃত্যুর হারও বৃদ্ধি পাবে বলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা আশঙ্কা করছেন।

করোনা চিকিৎসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মেডিসিন বিভাগের এক চিকিৎসক জানান, তাদের কাছে এখন অনেক রোগী আসছেন, যাদের শরীরে জ্বর ছিল না। তাদের কারও দু-একদিন গা-হাত-পা ব্যথা কিংবা কনজাংটিভাইটিস (চোখ ওঠা) ছিল। কেউ কেউ ভীষণভাবে ক্লান্ত বোধ করছিলেন। অথচ নমুনা পরীক্ষার পর তাদের করোনা পজিটিভ এসেছে।

বিশেষজ্ঞ ওই চিকিৎসক জানান, তাদের কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং করে দেখা গেছে, তাদের মাধ্যমে আরও অনেকে করোনায় সংক্রমিত হয়েছে। যদিও তাদের কারও কারও শরীরে জ্বর ছিল।

স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা বলেন, শরীরে জ্বর না থাকলেও যদি কারও সর্দি-কাশি বা গলায় ব্যথা থাকে কিংবা প্রায়ই অবসাদগ্রস্ত অনুভূত হয় তবে তার স্বদ্যোগেই করোনা পরীক্ষা করাতে হবে। এছাড়া ঠোঁট বেগুনি রঙের হয়ে যাওয়া, দ্রুত শ্বাস নেওয়া, হঠাৎ দম বন্ধ হয়ে আসার অনুভূতি, অল্প হাঁটাচলা বা কায়িক পরিশ্রম করলেই শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, বুকে ব্যথা, শুয়ে থাকতে না পারা, উঠে না বসলে শ্বাস নিতে না পারা, শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, হঠাৎ শব্দ করে শ্বাস নিতে শুরু করা, অনিয়মিত নাড়ির স্পন্দন, মলিন চেহারা, অদ্ভুত আচরণ করা বা অন্যমনস্কভাবে প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মতো কোনো উপসর্গ থাকলে তারও করোনা পরীক্ষা করা জরুরি।

যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের একদল বিজ্ঞানী তাদের গবেষণা প্রতিবেদনে জানিয়েছে, অব্যাহত কাশি, জ্বর এবং ঘ্রাণশক্তি নষ্ট হয়ে যাওয়াকে কোভিড-১৯ এর প্রধান তিনটি লক্ষণ হিসেবে ধরা হলেও তাদের কাছে যে ডাটা আছে তাতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেও অনেকের জ্বর না-ও থাকতে পারে। তবে তাদের কাশি, মাথা-বুক ও গলায় কিংবা মাংসপেশিতে ব্যথা থাকবে। তারা ঘ্রাণশক্তি হারাবে। এছাড়া ক্ষুধামন্দা ও ডায়রিয়া থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলোজি বিভাগের এক চিকিৎসক এ প্রসঙ্গে বলেন, জ্বর না থাকলেও যে কেউ করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন- এ বিষয়টি অনেকেরই অজানা। তাই সবার আগে এ ব্যাপারে জনসচেতনতা গড়ে তোলা জরুরি। পাশাপাশি চিকিৎসকদেরও সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। নির্দিষ্ট অন্য কোনো রোগ নিয়ে কেউ হাসপাতালে ভর্তি হলে তার করোনা টেস্ট করিয়ে নেওয়ার তাগিদ দেন এ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।

দেশের করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণকারী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, জ্বরহীন করোনা রোগীরাই এখন সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের আশঙ্কা, ঈদ উপলক্ষে লাখ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যবিধি না মেনে বাড়ি ও কর্মস্থলে আসা-যাওয়া, কোরবানির পশুর হাটে সামাজিক দূরত্ব না মেনে চলা এবং গাদাগাদি করে ঈদ কেনাকাটা করায় নতুন করে বিপুল সংখ্যক মানুষ করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

দেশের করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণকারী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান, করোনা পজিটিভ রোগীদের ডেথ রিভিউ করতে গিয়ে দেখা গেছে, উপসর্গহীনভাবে করোনা আক্রান্ত রোগীর মৃতু্যর সংখ্যাও একেবারে কম নয়। কোনো কোনো সময় তা ১০ থেকে ১২ শতাংশও ছাড়িয়েছে। এ অবস্থায় নতুন করে জ্বরহীন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লে এ ধরনের রোগীদের মধ্যেও যদি মৃতু্য হার আরও বাড়তে থাকে তবে পরিস্থিতি সামাল দিতে মুশকিল হবে।


সর্বশেষ সংবাদ