পুঠিয়ায় অপারেশন করতে ভাড়ায় আসেন ভুয়া চিকিৎসক

রেজিস্ট্রেশন ছাড়া চলছে ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক

রাজশাহীর পুঠিয়ায় কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে রেজিস্ট্রেশন বিহীন চলছে প্রায় ডজন ক্লিনিক ও অগণিত প্যাথলজি সেন্টার। হাতে গোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের রেজিস্ট্রেশন থাকলেও নেই কোনো ক্লিনিক-প্যাথলজির নিজেস্ব কোনো চিকিৎসক, প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত সেবক সেবিকা। দু’একটি প্যাথলজি সেন্টার বাদে কোনোটির প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত টেকনিশিয়ান নেই।

এছাড়া ক্লিনিকে অপারেশনের জন্য ভাড়া করে আনা হয় বেশিরভাগ ভুয়া ডাক্তার। বাকিরা নিজেরাই ডাক্তার সেজে অপারেশন করছে। যার ফলে মাঝে মধ্যে রোগীরা মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছেন। পাশাপাশি অনেক ক্লিনিকে রোগী মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলায় কোনো ক্লিনিকেই নিয়ম অনুসারে রোগীদের সেবা দেয়া হচ্ছে না। তবে স্থানীয় প্রভাবশালী রোগীদের ক্ষেত্রে দু’একটি ক্লিনিক মালিক শুধু অপারেশনের জন্য নামিদামি পরিচয়ে অদক্ষ চিকিৎসক ডেকে আনছেন। ক্লিনিকগুলোতে অপারেশন ও পরবর্তী চিকিৎসা সেবার জন্য বাস ড্রাইভার, সাইকেল মেকার, ওডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার রয়েছে।

পুঠিয়া উপজেলায় সরকারী তালিকাভুক্ত ৮টি ক্লিনিক ও ছয়টি প্যাথলজি সেন্টার রয়েছে। তবে ওই তালিকার বাহিরে আরো ১১টি প্যাথলজি ও ২টি ক্লিনিক অবৈধভাবে কোনো প্রকার কাগজপত্র ছাড়াই ব্যবসা করে যাচ্ছে। সরকারী নিয়ম অনুসারে একটি বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে ১০টি বেডের জন্য সার্বক্ষনিক একজন এমবিবিএস চিকিৎসক ও একজন প্রশিক্ষিত সেবিকা থাকার বিধান রয়েছে। কিন্তু পুঠিয়া উপজেলাধীন কোনো ক্লিনিকের নিজেস্ব ডাক্তার ও প্রশিক্ষিত সেবিকা নেই।

এদের মধ্যে কেউ চিকিৎসা বিষয়ে প্রশিক্ষন প্রাপ্ত নয়। আবার অনেকেই অল্প খরচের প্রতিশ্রতি দিয়ে নিজেরা ডাক্তার সেজে রোগীদের বিভিন্ন রকম অপারেশন করছে। আর গর্ভবতী নারীদের আল্টাসনোগ্রাম করছে কর্মরত আয়ারা। এদের মধ্যে একজন বিভিন্ন উপজেলার ক্লিনিকগুলোতে কখনো সহকারী সার্জন আবার অবসকারী চিকিৎসক হিসাবে পরিচয় দিয়ে নিয়মিত অপারেশন করছে। তার অপচিকিৎসার কারণে জেলার তিনটি উপজেলায় ৫ রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

এদিকে প্যাথলজিগুলোতে চলছে আরো ভয়াভহ অনিয়ম। রোগীরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য প্যাথলজিতে গেলে অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ানদের ভুয়া সীল ব্যবহার করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিচ্ছে। অপরদিকে একাধিক ক্লিনিক ও প্যাথলজি সেন্টার মালিকরা চিকিৎসার আড়ালে অবৈধ গর্ভপাত ও অসামাজিক কার্যকলাপ চালাচ্ছে। এমন অভিযোগে একটি ক্লিনিকে অভিযান চালান উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। সেখানে হাতে-নাতে একডজন পতিতা আটক করে ক্লিনিকটি সীলগালা করা হয়। পরে ওই ক্লিনিক মালিক বিভিন্ন প্রভাবশালী নেতা ও স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে পুনরায় ক্লিনিকটি চালু করে।

বর্তমানে পুঠিয়া উপজেলাধীন এলাকায় দু’টি ক্লিনিক ও তিনটি প্যাথলজি সেন্টারে দেহ ব্যবসা চলছে রমরমা ও অবৈধ গর্ভপাত করানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নাম প্রকাশ না করা শর্তে একাধিক ক্লিনিক ও প্যাথলজি মালিকরা বলেন, আমাদের এখানে ভাড়া ডাক্তার দিয়ে শুধু অপারেশন করানো হয়। বাকি কাজগুলো ক্লিনিক মালিক ও তাদের নিয়োগকৃত লোকজন করে থাকেন। আর এতে মাঝে মধ্যে রোগীরা বিভিন্ন সমস্যায় পড়েন।

অনেক সময় সঠিক চিকিৎসার অভাবে রোগী ও নবজাতকের মৃত্যুর হয়। এ ব্যাপারে রাজশাহী পুঠিয়া নির্বাহী অফিসার মোঃ ওলিউজ্জামান বলেন, উপজেলার বেসরকারী ক্লিনিক ও হাসপাতালের স্বাস্থ্য সেবার বিষয় সিভিল সার্জন এবং পুঠিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ তদারকি করে। তবে রোগীদের সাথে কোনো প্রতিষ্ঠান অনিয়ম করলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে রাজশাহী পুঠিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডাক্তার নাজমা আক্তার বলেন, পুঠিয়া উপজেলাতে এই সমস্যা দীর্ঘদিন থেকেই। তবে করোনা প্রভাবের কারণে আমরা ব্যস্ত। এই সুযোগে আরো তৎপর হয়েছে কিছু বেসরকারী সেবা প্রতিষ্ঠান। রেজিস্ট্রেশন বিহীন যে সকল ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক ব্যবসা করছে তাদের বিরুদ্ধে আমরা সিভিল সার্জনের সাথে কথা বলে প্রশাসনের মাধ্যমে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।


সর্বশেষ সংবাদ