শত কোটি টাকার মালিক হয়েও করোনায় অসহায় তারা

  © সংগৃহীত

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যার দিক দিয়ে আগেই শীর্ষ ৩০ দেশের তালিকায় উঠে এসেছে বাংলাদেশ। প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা, দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। রাজধানী ঢাকা এবং আশেপাশের কয়েকটি জেলার সঙ্গে চট্টগ্রামেও দ্রুত ছড়াচ্ছে করোনাভাইরাস। আক্রান্ত ও মৃত্যুর তালিকায় রয়েছে সব শ্রেণি পেশার মানুষ।

এরমধ্যেও কিছু করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা আলোড়ন তুলেছে দেশজুড়ে। কারণ তাদের কেউ কেউ লাখ শত কিংবা হাজার কোটি টাকার মালিক। জীবন-যাপন করেন বিলাসী। সামান্য অসুস্থ বোধ করলেই ছুটে গেছেন সিঙ্গাপুর কিংবা ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্রে। তবে করোনা তাদেরকে সে সুযোগ তো দেয়ইনি, উল্টো রীতিমতো অসহায় অবস্থায় ফেলেছে। এরমধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রামে।

জানা গেছে, চট্টগ্রামে শুধুমাত্র করোনা রোগীদের জন্য বিশেষায়িত জেনারেল হাসপাতালের ১০ শয্যার আইসিইউ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছিলেন ৪১ জন। এর মধ্যে প্রয়োজনীয় সাপোর্ট না পেয়ে মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের। তার মধ্যে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপের পরিচালক মোরশেদ আলম রয়েছেন। একটি সূত্র বলছে, শেষ মুহুর্তে তার ভেন্টিলেটর সাপোর্টের দরকার হলেও তা সময়মতো তিনি পাননি।

মোরশেদ আলম এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের বড় ভাই। তিনিসহ তার পরিবারের ছয় জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এরমধ্যে মোরশেদ আলম আইসিইউ ওয়ার্ডে মারা যান তিনি। একই হাসপাতালে তার আরেক ভাই করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

বড় শিল্পপতিদের মধ্যে করোনায় আক্রান্তদের তালিকায় আরেকটি আলোচিত নাম হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে আজাদ। করোনায় আক্রান্ত হলে গত ২০ মে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) তার শরীরে প্লাজমা থেরাপি দেয়া হয়। অবশ্য পরে সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন তিনি।

করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের তালিকায় অপর আলোচিত নাম বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এবাদুল করিম। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনের সংসদ সদস্য। ঈদের দু’দিন তার করোনা টেস্টের ফল পজিটিভ আসে। বর্তমানে নিজ বাড়িতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি। বিকন ফার্মা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি। ২০০টিরও বেশি জেনেরিক ওষুধ এবং ক্যানসারের ৬৫টি ওষুধ উৎপাদন করার পাশাপাশি এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ ও লাতিন আমেরিকায় রফতানি করে কোম্পানীটি।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী ও তাঁর স্ত্রীও। সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী এপেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা। তার স্ত্রী নিলুফার মঞ্জুর সানবীমস স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও অধ্যক্ষ। নিলুফার মঞ্জুর ইতিমধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন।

শুধু শিল্পপতি কিংবা ব্যবসায়ীরাই নয় এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন সংসদ সদস্য, মন্ত্রী, বিটিভির মহাপরিচালক, সচিব, বিভিন্ন সরকারি সংস্থার শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদসহ আরও অনেক পরিচিত মুখ। ইতোমধ্যে কয়েকজন করোনা জয় করতে না পেরে মৃত্যু মুখে পতিত হয়েছেন।

অভিযোগ রয়েছে, করোনায় আক্রান্ত হলেও অনেকেই সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছেন না। বিশেষ করে সঙ্কটাপন্ন রোগীদের জন্য আইসিইউ ও ভেন্টিলেটরের সংস্থান করা কঠিন হয়ে উঠেছে। আর নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য চিকিৎসা রীতিমতো দূরবোধ্য হয়ে উঠেছে।

অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, স্বাস্থ্য খাতে সীমাহীন দুর্নীতির কারণে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা অবকাঠামো গড়ে ওঠেনি। ফলে এ ধরণের মহামারি পরিস্থিতি সামাল দিতে চরম বেগ পেতে হচ্ছে। আর শিল্পপতিরাও হাজার হাজার কোটি টাকা আয় করলেও দেশের চিকিৎসা খাতের জন্য কিছুই করেনি বলে তাদের অভিযোগ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘স্বাস্থ্যখাতের সীমাহীন অনিয়ম দুর্নীতি আমাদেরকে এই নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে ফেলেছে। কোটিপতিরা এতদিন অসুস্থ হলেই বিদেশে ছুটে গেছে। অথচ তারা মুনাফার কিছু অংশ স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ করলে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার চিত্র পাল্টে যেত। তাদের নিজেদেরকেও এমন করুন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হতো না।’

জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব ডা. সুশান্ত বড়ুয়া বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রকেই এর দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। শিল্পপতিদের এটা ব্যর্থতা বলেও মনে করেন তিনি।

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আ ন ম মিনহাজুর রহমান বলেন, বেসরকারি হাসপাতাল যেহেতু আইসিইউ সেবাটা সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করছে না, তাই এই সমস্যা দেখা দিয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ