ফেসবুক লাইভে কবর দিয়েছি ভাইকে

আমার চাচাতো ভাই ক্রিস-এর শেষকৃত্যে মাত্র ১৫ জন উপস্থিত থাকতে পেরেছিল। আর সবগুলো কাজ সম্পন্ন হয়েছে স্থানীয় সময় সকাল ৯টার মধ্যে। কিন্তু দাফনের তোড়জোর শুরু হয়েছিল ৭টায়। আর আমরা সেসব দেখেছি মোবাইল ও কম্পিউটারে বসে ফেসবুকের মাধ্যমে। কথাগুলো বলেছেন ক্রিসের চাচাতো ভাই মারচি জুমা।

তিনি আরও বলছেন, অন্তত তিন ফুট দূরে দূরে চেয়ারগুলো রাখা ছিল। গির্জার লোকজন একপাশে বসেছিল, অন্যপাশে বসেছিল আমার পরিবারের লোকজন। সবাই মাস্ক পরে ছিল। সবাই জানে কেনিয়া সরকারের কঠোর নিয়মের কথা। বিশেষ করে করোনাভাইরাসের কবলের মধ্যে কিভাবে শেষকৃত্য করতে হবে, সে ব্যাপারে সবারই জানা।

কিন্তু আমার চাচাতো ভাই ক্রিস ছিল শত শত মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত। পারিবারিক আড্ডা সে জমিয়ে তুলতো। সারা বাড়ি মেতে থাকতো তার হাসিতে। এমনকি বাড়ি থেকে ২০০ মিটার দূরেও তার হাসির আওয়াজ পৌঁছে যেত। যে কোনো অনুষ্ঠান মাতিয়ে তুলতে পারতো সে। বিয়ে হোক আর কারো শেষকৃত্য, সবার আগে উদ্যোগী হতো সে। সে কারণে তার জন্যও ওইদিন আমরা দাঁড়াতাম। কিন্তু সে এগুলোর কিছুই পাইনি। এমনকি আমরা তার পছন্দের গানও তার জন্য গাইতে পারিনি।

ক্রিস আর আমি সমবয়সী। একই বাড়িতে আমরা বড় হয়েছি। সে আমার কাছে ভাইয়ের চেয়ে বেশি কিছু। সে মারা গেছে কেনিয়ার পশ্চিমাঞ্চলের কিসুমু এলাকায়। লিভারে সমস্যায় এক সপ্তাহ ভোগার পর ইস্টার সানডের দিন সে চলে গেল। সরকার থেকে আমাদের নির্দেশনা দেওয়া হলো- ক্রিসকে কবর দিতে হবে। তিনদিনের মধ্যে তাকে সমাহিত করা হলো।

কিন্তু তার বেশিরভাগ স্বজন লকডাউনের কারণে শহরে আটকে আছে। সে কারণে বেশিরভাগ স্বজনই আসতে পারেনি তার দাফনে। সংক্ষেপে রীতি মেনে তাকে সমাহিত করা হয়েছে। ক্রিস গান খুব পছন্দ করতো। সে ড্রামের আওয়াজ পছন্দ করতো। কিন্তু সেখানে তার পছন্দের গান কেউ বাজাতে পারেনি।

লাইভে তার বন্ধু ও সহকর্মীরা হৃদয় বিদারক মন্তব্য করছিল। আমরা সেসব ফেসবুকে দেখেছি। ডিজিটাল মাধ্যমে লোকজন বলাবলি করেছে, ক্রিস কতো ভালো মানুষ ছিল। আমি ভেবেছি সেসব স্ক্রিনশট রাখবো। তারপর সেগুলো প্রিন্ট করবো। কারণ, আমাদের সহমর্মিতার বইয়ে সেসব গুরুত্বপূর্ণ।

সবকিছুই ভিন্ন ধরনের মনে হচ্ছে। আমরা জড়াজড়ি করে কাঁদতে পারিনি, স্পর্শ করতে পারিনি এমনকি কারো চোখের জলও দেখিনি। কবরে নামানোর পর আমরা মুষ্টিবদ্ধভাবে মাটিও দিতে পারিনি।

সূত্র : বিবিসি


সর্বশেষ সংবাদ