মরদেহ থেকে করোনা না ছড়ালেও সাবধানতা জরুরি, বলছেন বিশেষজ্ঞরা

  © সংগৃহীত

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ক্রমেই বিস্তার লাভ করছে করোনাভাইরাস। এ অবস্থায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা গেলে তার মরদেহ থেকে ভাইরাস ছড়ায় কিনা তা নিয়ে নানা প্রশ্ন ও আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। রয়েছে।

তবে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, করোনায় আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা গেলে মরদেহ থেকে করোনা ভাইরাস ছড়ায় না। সেজন্য ভীত হওয়ার কিছু নেই। তবে দাফন কিংবা সৎকারের সময় সতর্ক থাকার পরামর্শ তাদের। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, মৃতদেহ থেকে করোনা সংক্রমিত হয়েছে এমন তথ্য পাওয়া যায়নি।

সোমবার (৬ এপ্রিল) গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর গণমাধ্যমে এ নিয়ে বিবৃতি দিলে বিষয়টি দেশে আলোচনায় আসে। বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ‘করোনাভাইরাসে মারা যাওয়া ব্যক্তিকে নির্ভয়ে নিয়ম অনুযায়ী শরীয়ত মোতাবেক দাফন-কাফন করা যাবে। অন্যরাও নির্ভয়ে ধর্মের নিয়ম অনুযায়ী সৎকার করুন।’

তিনি বলেন, ‘মৃত ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাস বাঁচতে পারে না। মৃত ব্যক্তির শরীর থেকে অন্য কোনও ব্যক্তির শরীরে করোনা প্রসারিত হয় না। মৃত ব্যক্তিকে ধর্মীয় মতে সাবান দিয়ে গোসল করালে এ ভাইরাসের প্রসার বন্ধ হয়।’

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. ফরহাদ স্বাক্ষরিত বিবৃতির বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে জাফরুল্লাহ চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিবৃতিতে ঠিকই বলেছি, এটা স্টেটমেন্ট অব ফ্যাক্ট। করোনাভাইরাসের বেঁচে থাকার জন্য জীবিত বস্তু লাগে। মৃত ব্যক্তির মধ্যে ভাইরাস বেঁচে থাকে না। ভাইরাসটি মাটিতে পড়ে ৮-১০ ঘণ্টার বেশি বাঁচে না। এটি সোজা বিজ্ঞান, না বোঝার কিছু নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘অনেকে বলছেন, করোনায় রোগী মারা গেলে ছোঁয়া যাবে না। এটা ভুল। বরং বাইরে পড়ে থাকলে জীবাণুর প্রসার হবে। তাই করোনায় মৃত ব্যক্তিকে দ্রুত গোসল করাতে হবে। কিন্তু জীবিত ব্যক্তি হলে এবং তার শরীরে করোনা থাকলে সেটায় আক্রান্ত হবে। এটা সোজা কথা,  ভালোভাবে বলা দরকার।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এটি নতুন ভাইরাস, প্রতিদিন নতুন নতুন তথ্য পাচ্ছি। তাই আমরা ঝুঁকি নিতে চাই না। বলা হয় ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত ভাইরাস থাকতে পারে। এখন ছড়ায় না বলে যদি অসাবধান থাকলে সেখান থেকে ছড়িয়ে গেলো, সেই ঝুঁকি নিতে চাই না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যা বলেছে—সেটা আমরা বিশ্বাস করছি। তার পরও অতিরিক্ত সতর্ক থাকার চেষ্টা করছি।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সী বলেন, ‘মৃতদেহ থেকে শ্বাস-প্রশ্বাস বের না হওয়ায় করোনা ছড়ায় না। তবে এর নাকের শ্লেষ্মা, মলমূত্র, সর্দি থেকে ছড়াতে পারে। এজন্য সৎকারের সময় মৃতদেহ ব্যাগের ঢুকিয়ে জিপার) দিয়ে আটকাতে হবে। ব্যাগের পুরুত্ব হবে ১৫০ মাইক্রোন। ছয় মিটার দূর থেকে দাফন করতে হবে। সনাতন ধর্ম হলে একই দূরত্বে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।’

এ বিষয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, ‘মৃত ব্যক্তি থেকে ভাইরাস ছড়ায় না। তবে মরদেহ থেকে নমুনা নিয়ে শনাক্ত করা যায়, সংক্রমিত করা যায় না।’

জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘মৃতদেহ থেকে করোনা সংক্রমিত হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। করোনায় মৃত ব্যক্তিকে সাবান পানি দিয়ে গোসল করালে ভাইরাস শেষ হয়ে যায়। তবে যিনি গোসল করাবেন তাকে পিপিই পরে গোসল করাতে হবে। গোসল করানো ব্যক্তিকেও সাবান-পানি দিয়ে গোসল করতে হবে। আর পরিধেয় পোশাক আধঘণ্টা ধরে সাবান-পানি দিয়ে ভিজিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।’

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন।


সর্বশেষ সংবাদ