করোনার নতুন তথ্য— মস্তিষ্কেরও ক্ষতি করছে ভাইরাসটি

করোনা সংক্রমণে দেখা দিচ্ছে নতুন নতুন উপসর্গ। ডায়রিয়া, ঘ্রানশক্তি চলে যাওয়া, খাবরের স্বাদ বুঝতে না পারা, চোখ গোলাপী হয়ে যাওয়া এরকম নানা নতুন নতুন উপসর্গ জেগে উঠছে করোনা সংক্রমণে— এমনই জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। শ্বাসকষ্ট না হলেও সর্দি, কাশি, জ্বরের সঙ্গে এই উপসর্গগুলো দেখা দিলে চিকিত্‍সকরে পরামর্শ নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

এবার করোনা রোগীদের আরো এক নতুন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে সর্দি, কাশি, জ্বরের সঙ্গে মস্তিষ্কে স্নায়ুবিক সমস্যাও দেখা যাচ্ছে। চিকিত্সকরা পর্যবেক্ষণ করেছেন, কিছু রোগীদের মধ্যে স্নায়ুবিক সমস্যাও করোনাভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণ হতে পারে। কিছু করোনা রোগীর শরীরে খিঁচুনি দেখা দিয়েছে। কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে আবার মস্তিষ্কেরও অস্বাভাবিক ক্ষতি করেছে করোনাভাইরাস। বিভিন্ন দেশ থেকে প্রাপ্ত নতুন প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গবেষকরা এই তথ্য জানিয়েছেন।

এ নিয়ে থাইল্যান্ড মেডিকেল নিউজে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। যেহেতু করোনাভাইরাসটি একটি নতুন ভাইরাস যা দ্রুত বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে এবং সর্বনাশ ডেকে আনছে। এর আগে ভাইরাসটি সম্পর্কে কোনও যাচাই-বাছাই করা হয়নি। এখন গবেষকরা দিনদিন এটি সম্পর্কে কেবল নতুন নতুন তথ্য আবিষ্কার করতে শুরু করেছে। যেহেতু করোনাভাইরাস নিজেও বিকশিত হচ্ছে। তাই বিষয়টি নিয়ে চীনা গবেষকরাও কঠোর পরিশ্রম করতে ব্যস্ত সময় পার করছে।

এর আগে রোগীর প্রকাশিত লক্ষণগুলির কারণে করোনভাইরাস শ্বাসযন্ত্রের সিস্টেমে কীভাবে আক্রমণ করে সেদিকে দৃষ্টি রেখেছিল। নতুন গবেষণা এবং গবেষণাগুলি একটি বিরক্তিকর ইঙ্গিত প্রকাশ করছে যে নতুন করোনভাইরাসটি বিভিন্নভাবে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রমণ করতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে সিএনএসের আক্রমণগুলির কারণে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষয়ক্ষতি বা এমনকি প্রাণহানির কারণ হয়।
 
মেডআরসিভ-এ প্রকাশিত একটি নন-পিয়ার পর্যালোচনা সমীক্ষায় বলা হয়েছে, উহানের মাঠ পর‌্যায়ে কাজ করা অনেক ডাক্তার নিশ্চিত করেছেন, করোন ভাইরাস স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রমণ ও ক্ষতি করতে পারে। চীন হুয়াজং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কিত ইউনিয়ন হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগের পরিচালক ডঃ হু বো এই গবেষণাপত্রটি প্রকাশ করেছেন। গবেষকরা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র সম্পর্কিত লক্ষণগুলি যেমন মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, চেতনা ব্যাঘাত, মৃগী সহ তীব্র সেরিব্রোভাসকুলার ডিজিজ এবং স্বাদ হ্রাস, গন্ধ হ্রাস এবং ক্ষুধা ইত্যাদির মতো পেরিফেরাল স্নায়ুতন্ত্রের লক্ষণমসূহে ভাগ করেছেন।
 
এর আগে সারস (সিরিয়ার তীব্র শ্বসনতন্ত্র সিন্ড্রোম) এবং এমইআরএস (মিডিল ইস্ট রেসপিটারি সিন্ড্রোম) এর কর্নোভাইরাসগুলি নিয়ে অতীত গবেষণাগুলো প্রমাণ করেছে যে সেগুলো নার্ভ এবং সিএনএসের ক্ষতি এবং স্নায়ুবিক বৈকল্যের কারণ ঘটায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে। গবেষকরা বলেন- নতুন করোনাভাইরাস কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে রক্ত ​​বা রেট্রোগ্রেড নিউরোনাল সার্কিটের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি করতে পারে।
 
একইসঙ্গে গবেষকরা সতর্ক করেছিলেন, কোভিড-১৯ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্টের লক্ষণগুলি ছাড়াও, ডাক্তারদের কোনও স্নায়ুবিক প্রকাশের দিকে গভীর মনোযোগ দেওয়া উচিত। বেইজিংয়ের ডাইটান হাসপাতালের চিকিত্সকভাবে নিশ্চিত করেছেন যে করোন ভাইরাস সিএনএসের ক্ষতি করতে সক্ষম হয়েছে।

এছাড়া স্বাদ ও ঘ্রানশক্তি হারানোও করোনাভাইরাসের নতুন উপসর্গ। এই উপসর্গ নিয়ে একাধিক করোনা আক্রান্ত রোগী ভর্তি হতে শুরু করেছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। বিশেষ করে আমেরিকায় তো এই উপসর্গ অধিকাংশ করোনা আক্রান্ত রোগীর দেখা যাচ্ছে। এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি করোনা সংক্রমণ হয়েছে আমেরিকাতেই।

হজম শক্তি কমে যাওয়া করোনাভাইরাসের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপসর্গ। যার কারণে ডায়রিয়া উপসর্গ দেখা দিচ্ছে আক্রান্তদের শরীরে। করোনা সংক্রমণের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপসর্গ হলো চোখ গোলাপী হয়ে যাওয়া। তবে এই উপসর্গ খুব কম রোগীর শরীরেই দেখা দিয়েছে। এক থেকে তিন শতাংশ করোনা আক্রান্ত রোগীর চোখ গোলাপী হওয়ার প্রবণতা দেখা দিয়েছে। তার সঙ্গে চোখ ফুলে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে।

টিএমএন’র প্রতিবেদনটি দেখতে ক্লিক করুন


সর্বশেষ সংবাদ