করোনা হলে কেমন লাগে— সেরে ওঠা ৫ রোগীর অভিজ্ঞতা

মধ্যবয়সী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ক্লে বেন্টলি পুরোনো গ্রন্থিবাত রোগে (রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস) ভুগছিলেন। চার্চে একটি প্রার্থনায় যোগ দেওয়ার পর তিনি করোনায় আক্রান্ত হন। ১ মার্চ অসুস্থতা বোধ করতে শুরু করেন, ৬ মার্চ হাসপাতালে ভর্তি হন। তাঁর শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। এতটা দুর্বল লাগছিল যে, নিজে একা উঠে দাঁড়াতে পারছিলেন না বেন্টলি।

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। আবার অনেকে সেরেও উঠছেন। সেরে ওঠা পাঁচজনের অভিজ্ঞতা কী ছিল, তা নিয়ে মার্কিন গণমাধ্যম বিজনেস ইনসাইডার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। মঙ্গলবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সেরে ওঠার অভিজ্ঞতা একেকজনের একেক রকম। এটা নির্ভর করে আক্রান্ত ব্যক্তির লক্ষণের মাত্রা, বয়স, আক্রান্ত হওয়ার আগে স্বাস্থ্যের অবস্থা ইত্যাদির ওপর। কারও কারও ক্ষেত্রে সেরা ওঠা মানে পুরোপুরি করোনার বিদায়, কারও কারও ক্ষেত্রে স্থায়ীভাবে ফুসফুসের ক্ষতি। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন বেন্টলি।

করোনা ভাইরাসকে পরাজিত করা বেন্টলি আরও বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছিল আমি শ্বাস নিতে পারব না। এমনকি আমি বসা অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়াতে পারতাম না।’ তিনি জানান, ১৭ মার্চ থেকে তিনি আগের চেয়ে ভালো বোধ করতে থাকেন। তখন চিকিৎসকেরা তাঁকে বলেন, তাঁর ফুসফুসে যে তরল জমা হয়েছিল, সেটা আর নেই।

বেন্টলিকে এরপর হাসপাতাল থেকে বাসায় পাঠানো হয়; যদিও দুই সপ্তাহ তাঁকে আলাদা কক্ষে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে হয়েছে। নিউইয়র্কের টড হারমানের বয়স ৪৪ বছর। তিনি যখন ইনফ্লুয়েঞ্জা থেকে সেরে উঠছিলেন, তখন শ্বাসকষ্ট দেখা যায়। পরের দিন তিনি পরীক্ষা করানোর একটা সুযোগ পেয়ে যান। পরীক্ষায় তাঁর করোনা ধরা পড়ে।

হারমান বলেন, তাঁর ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট (শর্টনেস অব ব্রেথ) ছিল সবচেয়ে বড় লক্ষণ। এমনকি নিজের অ্যাপার্টমেন্টের এক পাশ থেকে অন্য পাশে হেঁটে গেলেই শ্বাসকষ্ট শুরু হতো। তাঁর কিছুটা ক্লান্তি বোধ হতো এবং মাথাব্যথা করত।

ওয়াশিংটনের এলিজাবেথ স্নেইডার ২২ ফেব্রুয়ারি বাসায় এক অনুষ্ঠান থেকে আক্রান্ত হন। তিন দিন পর থেকে তিনি অসুস্থ বোধ করতে থাকেন। শুরুতে তিনি মনে করেছিলেন, তিনি ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত।

এলিজাবেথ বলেন, ‘আমার কোনো কাশি ছিল না। শ্বাস-প্রশ্বাসের কোনো সমস্যা ছিল না। বুকে কোনো সমস্যা অনুভব করিনি। এ জন্য আমি মনে করেছিলাম আমি ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত।’

ওই অনুষ্ঠানে যাঁরা উপস্থিত ছিলেন, তাঁদের অনেকেই একই ধরনের লক্ষণের কথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানাচ্ছিলেন। তা দেখে এলিজাবেথ চিকিৎসকের কাছে যান। ঘটনার দুই সপ্তাহ পর তাঁর পরীক্ষায় করোনা ধরা পড়ে। এমনকি অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া অন্য লোকদের পরীক্ষা করেও করোনা পাওয়া যায়।

এলিজাবেথ বলেন, তাঁর জ্বর চলে গেছে। এখন আর তিনি কোনো ধরনের অসুস্থতা বোধ করছেন না।

ডায়মন্ড প্রিন্সেস ক্রুজ শিপের যাত্রীদের একজন কার্ল গোল্ডম্যানের বয়স ৬৭ বছর। তিনিও করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। তিনি জানান, শুরুতে লক্ষণ ছিল ব্যাপক জ্বর ও শ্বাসকষ্ট। পরে শুষ্ক কাশি দেখা যায়। তিনি বলেন, ‘এটা একটা ভিন্ন ধরনের রোগ। ঠান্ডা বা ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো নয়। আমার নাক বন্ধ হয়নি, গলাব্যথা হয়নি। মাথাব্যথাও ছিল না।’

পঞ্চম ব্যক্তি হিসেবে বিজনেস ইনসাইডার স্কটল্যান্ডের এক নাগরিকের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছে, যাঁর বয়স ৫০ বছর। যদিও তাঁর নাম প্রকাশ করা হয়নি। ওই ব্যক্তি বলেন, ইতালি থেকে ফেরার ১০ দিন পর পরীক্ষা করে তাঁর করোনা ধরা পড়ে। তিনি বলেন, তাঁর শরীরে কোনো লক্ষণ ছিল না। দুই দিন তিনি অফিসেও গিয়েছিলেন। দ্বিতীয় দিন রাতে তাঁর সামান্য জ্বর আসে। শীতে তিনি কাঁপতে থাকেন। শরীরে ব্যথা শুরু হয়, বিশেষ করে পায়ে। পরে শ্বাসকষ্ট আর কাশিও দেখা দেয়। করোনা ধরা পড়ার পর তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি বলেন, কয়েক দিন পরেই লক্ষণগুলো দূর হয়। এখন তাঁর আর জ্বর, ব্যথা, কাশি বা শ্বাসকষ্ট নেই।


সর্বশেষ সংবাদ