রাজধানীতে পিপিই পরে নারীর লাশ দাফন

ঠাণ্ডা-জ্বর ও সর্দিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে মৃত্যু হওয়া ৫০ বছর বয়সী এক নারীকে রোববার রাজধানীর খিলগাঁও তালতলা কবরস্থানে দাফন করা হয়। তিনি রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা। তবে সেই নারীর দাফন করেছেন যারা তারা পুরো শরীরেই ব্যক্তিগত সুরক্ষার সরঞ্জাম (পিপিই) পরিহিত ছিলেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে সেই দাফনের একটি ভিডিও ঘুরতে দেখা গেছে।

ভিডিওতে দেখা যায়, অ্যাম্বুলেন্স করে পাঁচজন ব্যক্তি এসে কবরস্থানের শেষ মাথায় ঝিলপাড়ের প্রান্তে এসে থামে। তাদের প্রত্যেকের পরনে ছিল পিপিই। তারা প্রথম অ্যাম্বুলেন্স থেকে একটি স্ট্রেচারে করে সাদা কাফনে মোড়ানো লাশ নামান। এরপর কবরস্থানের ইমাম ও উপস্থিত আটজন মিলে জানাজা পড়েন। জানাজা শেষে স্ট্রেচারে করে তারা মৃতদেহটি কবরের কাছে আনেন। এরপর পিপিই পরা তিনজন মিলে মৃতদেহটি কবরে নামান। কবরে দেহ নামানোর পর মাটি দেওয়া হয়।

সব শেষে দাফনে অংশ নেওয়া ওই পাঁচজন কবরস্থানের ঝিলের পাড়ে এসে পিপিই খুলে ফেলেন। পিপিইগুলোতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে তা নষ্ট করেন তারা। দাফনের বিষয়ে খিলগাঁও তালতলা কবরস্থানের স্টাফ মো. ফেরদৌস বলেন, দাফনের সময় ওই নারীর স্বামী ও সন্তান উপস্থিত ছিলেন।

মৃতের স্বামী জানান, সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে (আইইডিসিআর) জানানো হলে রোববার সকালে তাঁদের মোহাম্মদপুরের বাসায় এসে নমুনা নিয়ে যাওয়া হয়। তবে সেই পরীক্ষার ফল আসেনি। তিনি বলেন, ‘এখন আর পরীক্ষার ফল দিয়ে কী হবে। আমি এর বেশি কিছু বলতে পারছি না।’

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা গেলে তাঁকে খিলগাঁওয়ের তালতলা কবরস্থানে দাফনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। কিন্তু এই কবরস্থানে প্রথমে দাফন করতে দিচ্ছিলেন না স্থানীয় বাসিন্দারা। এতে আক্রান্ত হওয়া ব্যক্তিদের লাশ দাফন নিয়ে একটা জটিলতা তৈরি হয়।

এরপর গত বুধবার (২৫ মার্চ) খিলগাঁও তালতলা কবরস্থানে করোনাভাইরাসে মারা যাওয়া প্রথমবারের মতো এক ব্যক্তিকে দাফন করা হয়েছিল। সেই দাফনে অংশ নিয়েছিলেন স্থানীয় এক যুবক। তিনি বলেন, ‘প্রথমবার দাফন করা ওই ব্যক্তির কোনো আত্মীয় আসেননি লাশের সঙ্গে। যাঁরা মৃতদেহটি অ্যাম্বুলেন্সে করে এনেছিলেন, তাঁরাও কেউ লাশ ধরতে রাজি হননি। পরে আমরা মহল্লার চার যুবক মিলে পিপিই পরে ওই দেহ দাফন করি। এলাকার অনেকেই দাফন না করার পক্ষে ছিল। কিন্তু সরকারি সিদ্ধান্ত আর এভাবে লাশ পড়ে থাকতে দেখে আমাদের মায়া হয়।’