চীনে করোনার সময় ১০ নিয়ম মেনে বাঁচলেন বাংলাদেশি ছাত্রী

চীনের জজিয়াং প্রদেশের একটি শহর চিনহুয়া। পড়াশুনা করার জন্য জজিয়াং প্রদেশকে বেছে নেওয়ার অন্যতম একটি কারণ হলো, এখানকার পরিবেশ ও বিশুদ্ধ বাতাস। চীনের বনাঞ্চলের ৬৭% ই এখানে। দিন ভালোই যাচ্ছিল। এরই মধ্যে হঠাৎ বিধিবাম। আমাদের সকলকে আতঙ্কিত করে চীনে দেখা দিল কভিড ১৯। নোভেল করোনাভাইরাস সম্পর্কে সামাজিক যোগাযোগগুলোর মাধ্যমে আমরা কম বেশি সবাই জেনেছি। অনেক তথ্য জানার পাশাপাশি কিছু গুজবেও আমরা কান দিয়েছি এবং সত্য মিথ্যা না জেনে অন্যকে জানিয়ে নিজেরা আতঙ্কিত হয়েছি এবং অন্যকে আতঙ্কিত করছি। আতঙ্কিত না হয়ে চলুন দেখে নেওয়া যাক আমি ও আমার বন্ধুরা করোনাভাইরাস সংক্রমণের দিনগুলোতে কিভাবে সচেতন ছিলাম...

১. মাস্ক ছাড়া রুমের বাইরে এক পা-ও যেতাম না কেউ। এখনও না।
২. কিচেনে ৩-৪ জন থাকলে আমরা আর কেউ প্রবেশ করে জনসমাগম বাড়াতাম না। (বি. দ্র. এক রুমে দুজন থাকি সবাই)
৩. করোনাভাইরাস প্রতিরোধে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিকল্প নেই। তীব্র শীতেও প্রতিদিন গোসল করেছি এবং ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত ধুয়েছি। (বি. দ্র. আমরা কোনো হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করিনি)। রুম পরিষ্কার রেখেছি।
৪. রুমের বেলকনির দরজা-জানালা সর্বদা বন্ধ থাকত। দম বন্ধ হয়ে আসলে সকালে ও বিকালে ৫ মিনিট করে খুলে রাখতাম।
৫. প্রতিদিন নিয়মিত ব্যায়াম করেছি।
৬. প্রতিদিন কুসুম গরম পানি পান করেছি, দুধ, ডিম, ভিটামিন 'সি' জাতীয় খাবার, এর মধ্যে কমলালেবু বেশি ছিল। আমরা অতিরিক্ত তেল জাতীয় ও ডিপ ফ্রাইড কোনো খাবার খাইনি, এখনও না।
৭. প্রতিদিন পুলিশ ও হল কর্তৃপক্ষ শরীরের তাপমাত্রা মেপে যেত।
৮. প্রতিদিন নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও সাহায্য প্রার্থনা করেছি।
৯. যারা ক্যান্টিনে খাওয়া দাওয়া করত, এক টেবিলে একজনের বেশি বসত না ও মাঝে এক টেবিল গ্যাপ থাকত।
১০. অফ ক্যাম্পাসের বন্ধুদের ক্যাম্পাসে প্রবেশের অনুমতি তখনো ছিল না, এখনো নেই।

চীনের রিকভারি
এ ক্ষেত্রে সবার প্রথমেই বলতে হয় চীনের জনগণের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতা ও সরকারের প্রতি ভরসা। চীনে ৫ দিনের মধ্যে হাসপাতাল গড়ে তোলার খবর কারোরই অজানা নয়। আমরা যারা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বসে হাতে চাইনিজ ফোন নিয়ে একটুতেই চীনের পেছনে লাগার চেষ্টা করি, তাদেরকে আমি শুধু এতটুকুই বলতে চাই যে, চীনকে কাছে থেকে পর্যবেক্ষণ না করলে বোঝা যায় না যে চীন কেন অর্থনীতিতে এত এগুচ্ছে এবং কেন এত তাড়াতাড়ি এই মহামারি থেকে রিকভার করছে। এর কারণ হিসেবে আমি খুঁজে পেয়েছি চাইনিজদের একনিষ্ঠ শ্রম, আইনের প্রতি প্রবল আস্থা ও শ্রদ্ধা। চীনা সরকার ঘোষণা দেওয়ার ২ মিনিটের মধ্যে একটি শহর, প্রদেশ লকডাউন হয়ে যায়, রাস্তায় একজন লোককেও দেখা যায় না, তো এরা রিকভারি এত তাড়াতাড়ি করবে না? অপরদিকে বাংলাদেশের চিত্র অনেকাংশেই ভিন্ন!

চীনের রিকভারির পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান এ দেশের ডাক্তার, নার্সদের; যারা নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও পিছপা হননি। কভিড ১৯ বারবার নিজের জিন পরিবর্তন করার জন্য উন্নত বিশ্বের কোনো দেশ এখনও এর প্রতিষেধক আবিষ্কার করতে পারেনি। চীনা ডাক্তাররা সেবা চালিয়ে যাচ্ছেন সাধারণ সর্দি-জ্বরের ওষুধ দিয়ে ও রোগীদের অক্সিজেন সরবরাহ করে। আর সরকার তাদের সাহায্য করেছেন তাদের যাবতীয় প্রয়োজনীয় জিনিসের যোগান দিয়ে। তাদের পর্যাপ্ত টেস্টিং কিট আছে, সাসপেক্টদের সঠিক সময়ে টেস্ট করা হয়েছে এবং করোনা পজিটিভ থাকলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ