যে কারণে ঘুমের মধ্যে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়

  © বিবিসি

‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’ অনেকের জন্য ভয়াবহ একটি অভিজ্ঞতা। এই সমস্যায় যারা ভোগেন ঘুমন্ত অবস্থায় হঠাৎ তাদের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। আর তারা হাসফাস করতে থাকেন।

গবেষকরা বলছেন, ঘুমন্ত অবস্থায় নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার এই সমস্যা বা স্লিপ অ্যাপনিয়ার কারণ হতে পারে জিহ্বায় বাড়তি চর্বি বা মোটা জিহ্বা। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এমন ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।

স্লিপ অ্যাপনিয়ায় ভোগা ব্যক্তিরা ঘুমের মধ্যে জোরে নাক ডাকেন বেশি, তাদের নিঃশ্বাস অনেক উঁচু শব্দযুক্ত হতে পারে। অনেক সময় নিশ্বাস না নিতে পারার কারণে ঘুমের মধ্যে তাদের শরীর ঝাঁকুনি দিয়ে ওঠে। এতে করে তাদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে যা অনেক বড় সমস্যা তৈরি করতে পারে। এসব রোগীদের অনেকেরই তাই পরদিন ঘুমঘুম ভাব থাকে।

গবেষকরা বলছেন, স্থূলকায় ব্যক্তিদের মধ্যে বাড়তি চর্বিযুক্ত জিহ্বা বেশি পাওয়া যায়। গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন স্লিপ অ্যাপনিয়ার রোগীরা শরীরের ওজন কমালে সেই সাথে জিহ্বা থেকেও চর্বি কমে যায়। আর তাতে রোগটি কমে আসে।

তবে স্থূলকায় না হলেও অনেকের চর্বিযুক্ত জিহ্বা হতে পারে। তারাও এই সমস্যায় ভোগেন। গবেষকরা এখন খোঁজার চেষ্টা করছেন এমন খাবার যা জিহ্বায় কম চর্বি যোগ করে।

এই গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন ফিলাডেলফিয়ার পেরেলম্যান স্কুল অফ মেডিসিন প্রতিষ্ঠানের ড. রিচার্ড শোয়াব। তিনি বলছেন, ‘আপনি কথা বলেন, খাবার খান, নিশ্বাস নেন-কিন্তু তারপরও কেন জিহ্বায় চর্বি জমে?’

‘বিষয়টা ঠিক পরিষ্কার না। হতে পারে এটা জন্মগত অথবা পারিপার্শ্বিক কোন কারণে। তবে জিহ্বায় চর্বি যত কম হবে, ঘুমের মধ্যে তাতে সমস্যা তৈরি করার সম্ভাবনা তত কম হবে।’

স্লিপ অ্যাপনিয়ার অন্যতম একটি বিষয় হল ঘুমন্ত অবস্থায় শ্বাসনালীর উপরের দিক আংশিক অথবা পুরোটা আটকে যাওয়া। যাদের ওজন বেশি অথবা ঘাড় ও টনসিল বড় তাদের এতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

৬৭ জন স্থূলকায় লোকের উপর গবেষণা করে দেখা গেছে, তারা শরীরের ওজন ১০ শতাংশ কমানোর পর তাদের স্লিপ অ্যাপনিয়ার লক্ষণগুলো ৩০ শতাংশ কমে গেছে। ওজন কমার পর তাদের শ্বাসনালীর উপরের অংশের আকার পরীক্ষা করে এই পরিবর্তনের ব্যাপারে বুঝতে সক্ষম হয়েছেন গবেষকরা। ওজন কমার কারণে চোয়ালের মাংসপেশিও কমে যায়।

চোয়ালের মাংসপেশিও শ্বাসনালীর দুইপাশের অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। তাই চোয়ালের মাংসপেশি কমে যাওয়াতেও উপকার পাওয়া গেছে।

ড. রিচার্ড শোয়াব বলছেন, ‘এখন যেহেতু আমরা জানি যে জিহ্বাতে থাকা বাড়তি চর্বি একটি ঝুঁকির কারণ এবং সেই চর্বি কমিয়ে আনলে স্লিপ অ্যাপনিয়া কমে আসে, আমরা এখন তাই অনন্য এক চিকিৎসা পদ্ধতির ব্যাপারে মনোনিবেশ করেছি।’

তবে চিকিৎসকদের অনেকে কিছুটা ভিন্ন মত দিচ্ছেন। যেমন ব্রিটিশ লাঙ ফাউন্ডেশনের ড. নিক হপকিনস। তিনি বলছেন, ‘আমরা জানি যে ওজন কমানোর মাধ্যমে শ্বাসনালীর উপরের অংশ সরু হয়ে যাওয়া ঠেকানো যায়। স্লিপ অ্যপনিয়ার সাথে জড়িত প্রক্রিয়া সম্পর্কে এই গবেষণা কিছু তথ্য যোগ করেছে। কিন্তু জিহ্বার চর্বি কমানোর তেমন সুনিশ্চিত কোন পদ্ধতি নেই। তাই এই সমস্যায় যারা ভোগেন তাদের জন্য এখনি কোন কার্যকর সমাধান এই গবেষণায় নেই।’ বিবিসি: বাংলা।


সর্বশেষ সংবাদ