বড়দিনের আয়োজনে হরেক রকমের খাবার

স্বজনদের সাথে সাক্ষাৎ, শুভেচ্ছা বিনিময়, একসাথে দুপুরের খাবার আর প্রার্থনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে পালিত হয়ে গেলো খ্রিষ্টানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব- বড়দিন। বাংলাদেশে খ্রিস্টানদের মধ্যে বড়দিনের উল্লেখযোগ্য খাবার নানা ধরনের পিঠা। ঘরে অতিথি আপ্যায়ন ছাড়াও আত্মীয়-স্বজন আর পাড়া প্রতিবেশীদেরও উপহার হিসেবে দেয়া হয় এই পিঠা।

এছাড়া গির্জায় সম্মিলিত ভোজের পাশাপাশি বাড়িতে বাড়িতে তৈরি হয় নানা রকমের মুখরোচক খাবার। রাজধানী ঢাকার মিরপুরে সেভেনথ ডে-অ্যাডভেন্টিস্ট চার্চের পরিসরের মধ্যেই একটি ভবনের ছ'তলায় সপরিবারে থাকেন সুইটি রিচিল। তার বাসায় গিয়ে দেখা যায়, ঘর ভর্তি অতিথিরা এসেছেন।

রিচিল তখন আমাকে বসতে দিয়েই নিয়ে আসেন বিশেষ এক ধরনের শুভেচ্ছা পানীয়। তারপর আসে পিঠা। তিনি বলেন, পিঠা বা কেকই হচ্ছে বাংলাদেশে বড়দিনের প্রধান খাবার, যা উপহার হিসেবেও প্রতিবেশী ও আত্মীয়দের জন্য পাঠানো হয়।

অতিথিদের আপ্যায়নের ফাঁকে ফাঁকে রিচিলের সাথে কথা হয় বড়দিনের খাবার দাবার আর নানা ধরনের আনুষ্ঠানিকতা নিয়ে। তিনি বলেন, সকালের নাস্তার পর পরিবারের সবাইকে সাথে নিয়ে গির্জায় যান প্রার্থনা করতে। প্রার্থনা শেষে গির্জায় রান্না করা খাবার সবার সাথে বসে খান। এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি জাতীয় খাবার ও বিরিয়ানি। এছাড়াও ঘরে আরো অনেক রকমের খাবার রান্নার কথাও জানান তিনি।

তিনি বলেন, পিঠা তো থাকেই। সাথে কেক থাকে। কিন্তু অনেকেই বানানোর ঝামেলা এড়াতে এসব কিনেও আনেন। মাংস দিয়ে বিভিন্ন ধরনের খাবার তৈরি করেন অনেকে। মাছ তো আছেই।" তবে বড়দিনের খাবার তৈরির বিষয়টি পছন্দ আর সামর্থ্যের উপর নির্ভর করে বলেও উল্লেখ করেন রিচিল।

রাজধানীর মগবাজারের দিলু রোড এলাকার বাসিন্দা রুপালি টেরেসা। তিনি একজন গৃহিণী। বড়দিন উপলক্ষে সকাল এবং দুপুরে নানা রকমের খাবার বাড়িতেই বানিয়ে থাকেন তিনি। রুপালি টেরেসা জানান, দুপুরে ভারি খাবারের আয়োজন করা হলেও রাতে সেই মেন্যু কিছুটা হালকা হয়ে যায়।

"হরেক রকমের পিঠা বানানো হয়। তেলের পিঠা বানানো হয়। সেইসাথে মিষ্টি থাকে, কেক থাকে। কেক গুলো আমরা বাসাতেই বানাই।" তিনি বলেন, "দুপুরে যা আয়োজন করা হয় তার মধ্যে আছে পোলাও, মাংস, রোস্ট, কাবাব। যে যেরকম পারে বানাই। সাথে ডেসার্টও থাকে।"

রুপালি টেরেসা বলেন, রাতে সবাই ঝুঁকে পড়ে হালকা খাবারের দিকে। তবে আলাদা করে কোন ধরনের পানীয় থাকে না বলেও জানান তিনি। "ড্রিংকস বলতে ওরকম আমাদের দেশে হয় না। নরমাল যে ড্রিংকস যেমন সেভেন-আপ এগুলোই থাকে। আলাদা করে কিছু হয় না," বলেন তিনি।

ঢাকাতে আত্মীয়দের সাথে বড়দিন উদযাপন করতে এসেছেন ড. লর্না। তিনি বলেন, বড় দিনের খাবার-দাবার নিয়েও পার্থক্য রয়েছে বিভিন্ন ধারার বিশ্বাসীদের মধ্যে। ক্যাথলিক এবং প্রোটেস্টান্টদের মধ্যে এই পার্থক্য বেশি থাকে। ক্যাথলিকরা অ্যালকোহল এবং শুকরের মাংস খেলেও প্রোটেস্ট্যান্ট বা সেভেন্থ ডে অ্যাডভেন্টিস্টরা এই খাবারগুলো এড়িয়ে চলেন।

ডা. লর্না বলেন, "ক্যাথলিকরা এই সময়ে অনেক বেশি সেলিব্রেট করে, তারা অনেক বেশি অ্যালকোহলও খায়। বাইরের দেশে এটা আরো বেশি হয়। কিন্তু প্রোটেস্টটান্টরা অ্যালকোহল খায় না। সেভেন্থ ডে অ্যাডভেন্টিস্টরা আরো রক্ষণশীল। তারা অ্যালকোহল খায় না, ধূমপান করে না, মাংস বিশেষ করে শুকরের মাংস খায় না।

তবে খাবারের মেনুতে কিছুটা তারতম্য থাকলেও যে বিষয়টি সবার মাঝেই থাকে তা হচ্ছে বড়দিনের আনন্দ। যা অনেক গুণ বেড়ে যায় স্বজনদের সাথে সাক্ষাতের মাধ্যমে। 


সর্বশেষ সংবাদ