উদ্বেগজনক তথ্য: শরীরচর্চায় শিশুদের অভ্যস্ত করুন

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাম্প্রতিক গবেষণায় যে তথ্যটি উঠে এসেছে তা রীতিমতো উদ্বেগজনক। গবেষণায় বলা হয়েছে, বিশ্বে ১১ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের প্রতি পাঁচজনের মধ্যে চারজনেরই নেই পর্যাপ্ত শরীরচর্চার অভ্যাস। তারা যথেষ্ট শারীরিক অনুশীলন করছে না। ডাব্লিউএইচও বলছে, এতে শিশুদের স্বাস্থ্য যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি তাদের মস্তিষ্কের বিকাশ এবং সামাজিক দক্ষতা অর্জনও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ডাব্লিউএইচওর গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, ১১ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের পরীক্ষার জন্য প্রচুর পড়াশোনার চাপ থাকে। তাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হয়।

কখনো কখনো অনেকক্ষণ ধরে তাদের স্কুলে বসিয়ে রেখে ‘হোমওয়ার্ক’ করানো হয়। তারা শারীরিক অনুশীলন করার সুযোগই পাচ্ছে না। এ ছাড়া নিরাপদভাবে খেলা এবং অবসর সময় কাটানোর ভালো ব্যবস্থা না থাকার কারণেও শিশুদের শারীরিক অনুশীলন বিমুখতার জন্য দায়ী। যেমন—রাস্তাঘাট ভালো না হলে সেখানে সাইকেল চালানো, হেঁটে স্কুল বা বন্ধুবান্ধবের বাসায় যাওয়াও নিরাপদ নয়।

তা ছাড়া ফোন, ট্যাবলেট ও কম্পিউটারে ডিজিটাল খেলার চল বেড়ে যাওয়ায় বাইরে শিশুদের দৌড়ঝাঁপ করে খেলার প্রবণতা কমে গেছে। অন্যদিকে বিবিসির সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ধনী ও অনুন্নত দেশগুলোতে শিশুরা দৈনিক এক ঘণ্টাও শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকছে না। সাইক্লিং, সাঁতার, ফুটবল খেলা, লাফানো, দড়ি লাফ, জিমন্যাস্টিকসের মতো শারীরিক কসরত—যা হৃৎস্পন্দন বাড়ায়, ফুসফুসকে আরো বেশি সক্রিয় করে, এমন যেকোনো দৈহিক কর্মকাণ্ডকে ‘ব্যায়াম’ হিসেবে ধরে এই সমীক্ষা চালানো হয়েছে।

এই পরিস্থিতিকে গবেষকরা দেখছেন একটি ‘বৈশ্বিক সংকট’ হিসেবে।  তবে বাংলাদেশের শিশুরাও এই ঝুঁকির বাইরে নয়। ১৪৬টি দেশে ডাব্লিউএইচও এই সমীক্ষা চালিয়েছে, তার মধ্যে বাংলাদেশেই শিশুদের নিষ্ক্রিয়তার মাত্রা সবচেয়ে কম। তার পরও এ দেশের ৬৬ শতাংশ, অর্থাৎ প্রতি তিনজনে দুজন শিশু শরীরচর্চার পেছনে দৈনিক এক ঘণ্টাও সময় ব্যয় করে না।

অর্থাৎ এখানে শরীরচর্চাকে আলাদা করে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। আগে পর্যাপ্ত খেলার মাঠ ছিল। পুকুর, নদী ছিল। কিন্তু নাগরিক জীবনযাপন যখন থেকে বিকশিত হতে শুরু করেছে তখন থেকেই শহুরে জীবনে খেলাধুলার গুরুত্ব কমতে শুরু করেছে। শিশুদের নিষ্ক্রিয়তার মাত্রা সবচেয়ে কম হলেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণাই বলছে বাংলাদেশও এই সংকট থেকে মুক্ত নয়। কাজেই আমাদের এখনই সচেতন হতে হবে। অন্যথায় এই শিশুরা বড় হয়ে নানা রোগে আক্রান্ত হবে। কাজেই শিশুদের উপহার দিতে হবে সত্যিকারের শৈশব। (সূত্র: কালের কণ্ঠ)


সর্বশেষ সংবাদ