জলাতঙ্ক রোগ থেকে শিশুদের সুরক্ষা

প্রতীকি ছবি
প্রতীকি ছবি  © সংগৃহীত

জলাতঙ্ক বা Rabies হলো ভাইরাস জনিত এক ধরনের জুনোটিক রোগ (অর্থাৎ এই রোগ টি প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে ছড়ায়) রেবিজ ভাইরাস নামক এক ধরণের নিউরোট্রপিক ভাইরাস দিয়ে এই রোগ হয়।এই রোগ সাধারনত গৃহপালিত প্রাণী ও বন্য প্রাণীদের প্রথমে সংক্রমিত করে, মানুষ এ প্রাণীগুলোর বা এদের লালার সংস্পর্শে আসলে বা এই প্রাণীগুলি যদি মানুষকে কামড়ায় অথবা আচুড় দেয় তাহলে এই রোগ মানুষের মধ্যে ছড়াতে পারে।

বিশ্বের প্রায় সকল দেশের প্রাণীর মধ্যেই এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়।প্রতি বছর বিশ্বে যত মানুষ কুকুরের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে মারা যায় তার ৯৯ শতাংশই এই রোগের কারণে হয়। জলাতঙ্ক রোগ এন্টার্কটিকা ছাড়া প্রায় সব মহাদেশেই দেখা গেছে।

প্রতি বছর ২৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস পালিত হয়।একটি অ- লাভজনক প্রতিষ্ঠান "গ্লোবাল এলায়েন্স ফর রেবিজ কন্ট্রোল" তার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের দফতর থেকে এ দিবস পরিচালনায় প্রধান সমন্বয়ের ভূমিকা পালন করে। বরাবরের মত এবছরও পালিত হচ্ছে বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস । এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় Rabies; Vaccinate to Eliminate.

জলাতঙ্ক একটি মরণব্যাধী।এ রোগে মৃত্যুর হার প্রায় শতভাগ।প্রতি মিনিটে একজন করে মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে এবং আক্রান্তদের শতকরা ৫০ ভাগই শিশু যাদের বয়স ১৫ এর নিচে। অর্থাৎ এ রোগে আক্রান্তদের মধ্যে শিশুর সংখ্যাই বেশি।

২০২২ সালের মধ্যে জলাতঙ্ক মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে।স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা,সিডিসি অপারেশন প্লানের জুনোটিক ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রাম ও কাজ করে যাচ্ছে।

এ বছর বিদ্যালয়ের শিশুদের জলাতঙ্ক রোগ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে বিশ্ব জলাতঙ্কদিবসে বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। বিদ্যালয়েে ক্ষুদে ডাক্তারদের মাধ্যমে প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে গিয়ে তারা শিখাবে- কুকুরে কামড় দিলে জলাতঙ্ক রোগ হয়,জলাতঙ্ক রোগ হলে কেউ বাঁচে না,আমরা কুকুরকে ঢিল ছুড়বোনা ইত্যাদি।
এবং তারা একটি নাটিকা উপস্থাপন করবে।বিদ্যালয়ের দৈনিক সমাবেশ শেষে এই নাটিকাটি উপস্থাপিত হবে।যেখানে ক্ষুদে শিক্ষাথীরা অভিনয়ের মাধ্যমে দেখাবে অযথা কুকুরকে ক্ষ্যাপালে সে কামড় দেয়।এবং তার জলাতঙ্ক হওয়ার ভয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।এভাবে একটি সচেতনতা মূলক কার্যের মাধ্যমে শিশুদের সচেতন করা হবে।এটি একটি ভালো উদ্যোগ বলে আমরা মনে করি।

শিশুদের শেখানোর জন্য বেশ কিছু শ্লোগানও রয়েছে ।যা বিদ্যালয় পর্যায়ে র্যালীর মাধ্যমে শিশুরা বলবে।যেমন"-কুকুর কে মারবোনা, কুকুরের কামড় খাবনা।"কুকুর যদি কামড় দেয়,সাবান দিয়ে ধুতে হয় "।"জলাতঙ্ক ঠেকাতে, টিকা নিব সাথে সাথে" ইত্যাদি।এ সকল শ্লোগান ও যাবতীয় নির্দেশনা দিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর পরিপত্রের মাধ্যমে সকল বিদ্যালয়ে ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে।

কাউকে যদি কুকুর কিংবা বিড়াল আঁচড় দেয় তাকে জলাতঙ্ক প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে হবে।তাৎক্ষনাৎ ক্ষারযুক্ত পানি ও সাবান দ্বারা কমপক্ষে ১৫ মিনিট ধরে ধুয়ে ফেলতে হবে।ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে জলাতঙ্ক প্রতিরোধে টিকা দিতে হবে( প্রতিটি জেলা সদর হাসপাতালে বিনামূল্যে টিকা পাওয়া যায়)।

শিশুরা মনের অজান্তেই অনেক সময় রাস্তা ঘাটে কুকুর, বিড়াল দেখলে তাকে ঢিল ছোড়ে।এটা তার দুষ্টামি কিংবা শিশুসুলভ আচরনেরই বহিঃপ্রকাশ। তখন ঐ অবুঝ প্রাণিগুলো তাদের কামড়ে কিংরা আঁচড়িয়ে দেয়।আমাদের সামনে যদি এ জাতীয় ঘটনা ঘটে তাহলে উচিত সাথে সাথে আক্রান্ত শিশু কিংবা ব্যক্তিকে সুরক্ষা এবং চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থা করা।

জলাতঙ্ক একটি মারাত্মক মরণ ব্যাধি।কিন্তু এ রোগটি শতভাগ প্রতিরোধ যোগ্য।সঠিক সময়ে যথাযথ টিকাদানের মাধ্যমে এ রোগ থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব। শিশুদের এ রোগ থেকে সুরক্ষা দিতে সকলে এগিয়ে আসি,কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করি।অভিভাবকত্বের জায়গা থেকে নিজ নিজ শিশুকে সচেতন করি। এবং নিজেও সচেতন হই।২০২২ সালের মধ্যে জলাতঙ্ক মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে সরকারকে সহযোগিতা করি।
তাই একসাথে বলি-
সকলে মিলে কাজ করি
জলাতঙ্ক মুক্ত বাংলাদেশ গড়ি

লেখক: সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার নোয়াখালী সদর, নোয়াখালী


সর্বশেষ সংবাদ