ডিমেনশিয়া রোগ: কাছের মানুষের নাম ভুলে যাচ্ছেন?

  © ফাইল ফটো

খুব পরিচিত কিংবা আত্মীয়স্বজনদের কারও সঙ্গে কথা বলছেন। হঠাৎ খেয়াল করলেন, যার সঙ্গে কথা বলছেন তার নামটাই যে মনে নেই। বাজারের ফর্দ হোক বা সংসারের খরচ, সহজ হিসেবও গুলিয়ে যাচ্ছে প্রায়ই। কথাবার্তায় দেখা দিচ্ছে অসংলগ্নতা। সেই সঙ্গে বহু বছর আগের কোনো ঘটনা একেবারে নিখুঁতভাবে মনে পড়ে যাচ্ছে।

অথচ সকালে কী খেলেন মনে পড়ছে না কিছুতেই। প্রিয় কারও জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী এ সব মনে পড়ছে সে সব দিন পেরিয়ে যাওয়ার অনেক পরে। এই ভয়ংকর রোগের নাম ডিমেনশিয়া।

আগে ধারণা ছিল, বৃদ্ধ বয়সেই সাধারণত এই রোগে আক্রান্ত হয় মানুষ। তবে আধুনিক গবেষণা এর বিপরীতটাই বলছে। বায়ুদূষণের কারণে কম বয়েসেই মানুষ শিকার হচ্ছে ডিমেনশিয়ার। বায়ুদূষণে ধুঁকতে থাকা শহরের বাতাস ফুসফুসের পাশাপাশি ক্ষতি করছে মস্তিষ্কের। বিজ্ঞান পত্রিকা 'প্রসিডিং অব ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস এ এই বিষয়ক গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। ধোঁয়ার পার্টিক্যুলেট ম্যাটার খুব সূক্ষ্ম হওয়ায় তা আমাদের শ্বাসনালী দিয়ে সরাসরি ফুসফুসে পৌঁছে যেতে পারে।

সারা বিশ্বেই মানুষের গড় আয়ু কমিয়ে দেওয়ার নেপথ্যে অন্যতম ভূমিকা পালন করে দূষণ। বায়ুদূষণের সূচকে অধিকাংশ সময়েই কলকাতা পিছনে ফেলে দেয় অন্য বড় ও ব্যস্ত শহরগুলোকে। এর ফলে স্নায়ুর নিউরোনগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও মস্তিষ্কে তথ্য পৌঁছে দেওয়ার কাজে ঢিলেমি আসে। কখনও কখনও স্নায়ু এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয় যে তথ্য আদানপ্রদানে আর অংশ নিতেই পারে না।

যানবাহনের ধোঁয়া থেকে বের হওয়া নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড,পার্টিক্যুলেট ম্যাটার (পিএম), সালফার ডাই অক্সাইড এবং অন্য দূষণপদার্থ সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মির সঙ্গে বিক্রিয়া করে। তৈরি হয় ওজোন গ্যাস। বিশেষত পিএম খুব সূক্ষ্ম হওয়ায় তা আমাদের শ্বাসনালী দিয়ে সরাসরি ফুসফুসে পৌঁছে যেতে পারে। এটাই জমতে জমতে সিওপিডি অর্থাৎ ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ ডেকে আনে।

ফুসফুসের কাজকর্ম কমতে শুরু করে। ফুসফুসের অ্যালভিওলাই শুকিয়ে অক্সিজেনের অভাব দেখা যায় শরীরে। ফুসফুসকে যেমন শেষ করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে এই দূষণ, তেমনই নিউরোনের কার্যকারিতাও কমিয়ে দেয় এই পিএম।

ডিমেনশিয়া দূরে রাখতে তাই শরীরচর্চা ও ডায়েটে পরিবর্তন আনলেই হবে না; বায়ুদূষণের কারণগুলোর হাত থেকেও বাঁচতে হবে। শুধু বাইরের ধোঁয়াই নয়, ঘরের বাতাসও নষ্ট হয় লাগামছাড়া কীটনাশক ধূপ, স্প্রে, রুম ফ্রেশনার ইত্যাদি থেকে। রান্নার ধোঁয়া, ফোড়নের ঝাঁঝ- এসবের কারণেও ঘরের বাতাস দূষিত হয়। পাশাপাশি ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, মাছের তেল, ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। তেল-মশলা এড়িয়ে শাকসবজি খাওয়ায় জোর দিতে হবে। শরীরচর্চা স্নায়ুর কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে বলে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্তদের প্রয়োজনীয় ব্যায়ামের পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।


সর্বশেষ সংবাদ