ছাত্র-ছাত্রী অনুপস্থিতির হার ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে: গণশিক্ষা সচিব

  © টিডিসি ফটো

দেশের সার্বিক উন্নয়নের অংশ হিসেবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসকদের অংশীদারিত্ব ও তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব মোঃ আকরাম-আল-হোসেন। আজ সোমবার জেলা প্রশাসক সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপস্থাপনায় তিনি এ কথা বলেন।

বর্তমান সরকারের সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে প্রাথমিক শিক্ষায় গুণগত পরিবর্তন এসেছে উল্লেখ করে সচিব জানান, ২০০৯ সালে ছাত্র শিক্ষক অনুপাতের নির্ধারিত লক্ষ্য ১:৪৬ এর স্থলে বর্তমানে ১:৩৬ এ উন্নীত হয়েছে এবং ঝরে পড়ার হার ১৮দশমিক ছয় শতাংশ যা নিম্নগামী হয়েছে। বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রী অনুপস্থিতির হার ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে।

তিনি বলেন, প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় ২০০৯ সালের পাশের হার ৮৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০১৮ সালের পাশের হার হয়েছে ৯৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ। এ অর্জন প্রাথমিক শিক্ষার মান বৃদ্ধির উল্লেখযোগ্য উদাহরণ।

প্রতিটি শিশুর জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণ সাংবিধানিক দায়িত্ব উল্লেখ করে সচিব বলেন, এমডিজি অর্জনের পর জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ২০৩০ সালের মধ্যে সকল ছেলেমেয়ের জন্য সম্পূর্ণ অবৈতনিক, একীভূত মানসম্মত ও জীবনব্যাপী প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণের জন্য সরকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও, অনগ্রসর এলাকার গরীব পরিবারের শিশুদের শিক্ষার জন্য স্থানীয় অবস্থাসম্পন্ন পরিবারের সহায়তাকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষার মান নিশ্চিতকল্পে শিশুদের মায়ের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একটি বৃহৎ কর্ম-পরিসর উল্লেখ করে সচিব বলেন, তৃণমূল থেকে জাতীয় পর্যায়ের যে কোন গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ ভূমিকা পালন করেন।

জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি প্রশমন করতে প্রাথমিক শিক্ষার কাঠামোগত সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে প্রকৃতি সৃষ্ট যে কোন দুর্যোগ, অতিমাত্রার ভূমিকম্প, জলোচ্ছ্বাস, সুনামির মতো দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি নিতে আহ্বান জানান সচিব। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে প্রাথমিক স্তরের কারিকুলাম ও পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এজন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং সমাজে পিঁছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীকে শিক্ষায় আলোকিত করতে হবে।

বর্তমান সরকার দেশ থেকে নিরক্ষরতা দূরীকরণে বদ্ধপরিকর উল্লেখ করে তিনি বলেন, সকল পর্যায়ে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে ‘দিন বদলের’ সুস্থ সমাজ গঠনে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। এ কাজে স্থানীয় প্রশাসন, বিভিন্ন অংশীজন ও দলমত নির্বিশেষে সকলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সাক্ষরতা কার্যক্রমকে সামাজিক আন্দোলন হিসেবে রূপান্তর করতে হবে। আনুষ্ঠানিক শিক্ষার পরিপূরক হিসেবে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষায় গতি এলে ‘দিন বদলের সনদ’ ও রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমকে আরো বিস্তৃত করে জীবনব্যাপী শিক্ষায় নিবিষ্ট করার আহ্বান জানান সচিব। তিনি আরো বলেন, গোটা প্রাথমিক শিক্ষা পরিবারের চলমান অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে হলে মাঠ পর্যায়ে নিয়মিত মনিটরিং বাড়াতে হবে। এছাড়া, পরিদর্শনকালে প্রাথমিক শিক্ষার সমস্যাদি চিহ্নিত করে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করলে মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়িত কাজের মান উন্নয়নে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ সহজ হবে।

প্রাথমিক শিক্ষা শিশুর সাংবিধানিক অধিকার উল্লেখ করে সচিব বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে আধুনিক, গতিশীল ও সম্প্রসারিত করার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের সংবিধানে প্রাথমিক শিক্ষাকে সর্বজনীন, বাধ্যতামূলক করে নিরক্ষরমুক্ত সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন। শিক্ষার জন্য বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। মন্ত্রিপরিষদ সচিব অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।


সর্বশেষ সংবাদ