এমপিও’র তালিকা বিকেলে, শতাধিক থানায় যোগ্য প্রতিষ্ঠান নেই!

  © ফাইল ফটো

কয়েক বছর এমপিওভুক্তি না করায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বড় ধরনের অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। আন্দোলনও করছেন শিক্ষকরা। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে চলতি জুলাই মাসিই এমপিওর কথা বলা হলেও এখনো জটিলতার মধ্যে রয়েছে বিষয়। পাশাপাশি সংসদ সদস্য ও প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন করে এমপিওভুক্তির জন্য চার মানদণ্ডের ভিত্তিতে যোগ্য স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা এমপিও দিতে চান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-উপমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টরা। তবে এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বিভিন্নভাবে চাপে রয়েছে মন্ত্রণালয়। এতে এমপিওভুক্তি প্রক্রিয়া দেরি হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছিলেন, ‘জুলাইর মধ্যে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির কাজ শেষ করা সম্ভব হবে। চার মানদণ্ড অনুযায়ী উপযুক্ত ও যোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকেই এমপিও দেয়া হবে। পাশাপাশি যেসব উপজেলায় যোগ্য প্রতিষ্ঠান পাওয়া যায়নি সেসব উপজেলায় অপেক্ষাকৃত যোগ্য প্রতিষ্ঠানকে এমপিও দেয়া হবে।’

এছাড়া নিয়মের মধ্যে থেকে বিশেষ বিবেচনায় হাওর-বাঁওড়, চর ও দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলের কিছু প্রতিষ্ঠানকে এমপিও দেয়া হবে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা না হলে শিক্ষক-কর্মচারীরা নিরুৎসাহিত হয়ে যাবেন। যদিও শতাধিক থানায় যোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পাওয়া যায়নি বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

পড়ুন: এমপিওভুক্ত ৪৩৯ স্কুলের তালিকা দেখুন

পড়ুন: এমপিওভুক্ত ৯৯৪ স্কুলের তালিকা দেখুন

জানা গেছে, চলতি মাসেই এমপিও পাওয়া নতুন প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেজন্য ছুটির দিনসহ তালিকা চূড়ান্ত করার কাজ চলছে। সর্বশেষ গত শুক্র ও শনিবার বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোতে (ব্যানবেইস) মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগ তালিকা তৈরির কাজ করেছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ওই তালিকা নিয়ে আজ বিকাল ৫টায় শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে বৈঠকে বসছেন কর্মকর্তারা। 

তবে কিছু সংসদ সদস্যসহ প্রভাবশালীরা নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করছেন বলে সূত্র জানিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের কিছু শীর্ষ কর্মকর্তাও এতে সমর্থন দেওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে গেছে। এ কারণে তালিকা তৈরির কাজ বিলম্বিত হচ্ছে।

সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে দুই বিভাগ আলাদা প্রস্তাব তৈরি করেছে। এর মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এমপিও নীতিমালার ২২ ধারার আলোকে অনগ্রসর ও দুর্গম এলাকার প্রতিষ্ঠানকে এমপিও দিতে চায়। এছাড়া ১১১ থানায় সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমপিও দেয়ার প্রস্তাব তৈরি করেছে। অপরদিকে কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগ এমপিও নীতিমালার ৩৫ ও ৩৬ ধারার আলোকে এমপিও দিতে চায়।

কিন্তু ওই বিভাগের এক শীর্ষ কর্মকর্তা এ ক্ষেত্রে ৭৭ উপজেলা থেকে ইচ্ছামতো এমপিও দিতে চান। কিন্তু এতে জটিলতার উদ্ভব ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে উভয় বিভাগই বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) দরিদ্র ম্যাপ অনুযায়ী থানা নির্বাচনের পক্ষে। এমন পরিস্থিতিতে আজ মন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর কাছে দিক নির্দেশনা চাওয়া হবে বলে জানা গেছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সর্বশেষ এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৬ হাজার ১৮০টি। এর মধ্যে স্কুল ১৬ হাজার ১৯৭টি, কলেজ দুই হাজার ৩৬৫টি, মাদ্রাসা সাত হাজার ৬১৮টি। সর্বশেষ ২০১০ সালে ১ হাজার ৬২৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছিল।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগ আলাদাভাবে এমপিওর জন্য যোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকা করেছে। প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক স্বীকৃতি, শিক্ষার্থীর সংখ্যা, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা এবং পরীক্ষায় পাসের হার- এ চার শর্ত বিবেচনায় নিয়ে প্রতিটি মানদণ্ডের জন্য ২৫ নম্বর করে দেয়া হয়। ১০০ নম্বরের মধ্যে যেসব প্রতিষ্ঠান বেশি নম্বর পেয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠানকে যোগ্য হিসেবে বাছাই করা হয়।

প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে যোগ্যতা নির্ধারণ করতে গিয়ে দেখা যায়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ ১১১টি থানায় একটি প্রতিষ্ঠানও যোগ্য হিসেবে পায়নি। আর কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগ পায়নি ৭৭ থানায়। দুই বিভাগের তালিকা সমন্বয় করে দেখা গেছে, শতাধিক থানায় এমপিও পাওয়ার মতো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই।

ওইসব এলাকায় কোন মানদণ্ডের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠান বাছাই করা হবে সেটি নির্ধারণেই আজ বৈঠকে বসছেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ইতিমধ্যে ৩ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ঘোষণা দিয়েছেন সংসদে। এছাড়া ২ হাজার ৭৬২টি প্রতিষ্ঠান যোগ্য হিসেবে চিহ্নিত করেছে মন্ত্রণালয়। সে হিসাবে বিশেষ বিবেচনায় আড়াইশ’ প্রতিষ্ঠান এমপিও পেতে পারে। এসব প্রতিষ্ঠান উল্লিখিত থানা এবং দুর্গম ও অনগ্রসর এলাকা থেকে বাছাই করা হতে পারে।

এ প্রসঙ্গে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব জাভেদ আহমেদ বলেন, এমপিওভুক্তির লক্ষ্যে তালিকা তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে।

এদিকে মন্ত্রণালয়ের উভয় বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে এমপিও দিতে প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো সংসদ সদস্যের ডিও (আধা সরকারি পত্র) জমা পড়ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। তবে নিয়মের মধ্যে থেকে যতটুকু সম্ভব সুবিচার করা হবে বলে শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন।

নতুন প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির লক্ষ্যে গত বছরের আগস্টে আবেদন নেয়া হয়েছিল। সে অনুযায়ী এমপিওভুক্তির চার শর্ত হচ্ছে- প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক স্বীকৃতি, শিক্ষার্থীর সংখ্যা, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা এবং পরীক্ষায় পাসের হার। প্রতিটি মানদণ্ডের জন্য ২৫ নম্বর রাখা হয়।

প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে যোগ্যতা নির্ধারণ করতে গিয়ে দেখা যায়, অনেক উপজেলায় একটি প্রতিষ্ঠানও ফিটলিস্টে স্থান পায়নি। আবার একই উপজেলা থেকে ৮-১০টি প্রতিষ্ঠানও জায়গা পেয়েছে। 

তথ্যমতে, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগও আলাদাভাবে এমপিওভুক্তির তালিকা তৈরি করছে। এতে নিম্ন মাধ্যমিক স্কুল ৬১৫টি, মাধ্যমিক স্কুল ৭৯৮টি, উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ ৯১টি ও ডিগ্রি কলেজ ৪৪টি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

এ তালিকায় আরও আছে দাখিল মাদরাসা ৩৬২টি, আলিম মাদরাসা ১২২টি, ফাজিল মাদরাসা ৩৮টি এবং কামিল ২৯টি। সবমিলে ২ হাজার ৭৬২টি স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা এমপিওভুক্তির যোগ্য হিসেবে তালিকাভুক্ত আছে; যা যাচাই-বাছাই শেষে বাড়তে পারে।


সর্বশেষ সংবাদ