পরীক্ষার প্রশ্নে উদ্দীপক ব্যবহারে নির্দেশনা

  © সংগৃহীত

বিতর্কিত ব্যক্তিদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে উদ্দীপক ব্যবহারে সমালোচনার মধ্যে প্রশ্নের উদ্দীপক ব্যবহার নিয়ে বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) একটি নির্দেশনা দিয়েছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটি। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মু. জিয়াউল হক স্বাক্ষরিত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি পরিপত্র স্মরণ করে দিয়ে সেগুলো মানতে বলা হয়েছে।

আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সংশ্লিষ্ট সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান ও বিষয় সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের দৃষ্টি আর্কষণ করে জানানো যাচ্ছে যে, মাধ্যমিক পর্যায়ের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষায় বিতর্কিত বিষয়গুলোকে সৃজনশীল প্রশ্ন প্রণয়নকালে উদ্দীপকে (Stem) ব্যবহার করা হচ্ছে, এতে বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে এবং জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হচ্ছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি রোধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিম্নলিখিত নির্দেশনাসহ একটি পরিপত্র রয়েছে (স্মারক নং শিম/শা:১১/ বিবিধ-৬(সেসিপ)/২০০৪(অংশ-১)/১১৪৮; তারিখ ২২ নভেম্বর ২০০৯)।

(ক) পাঠ্যপুস্তকে রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সামাজিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নাম না থাকলে প্রশ্নে উদ্দীপক হিসেবে রাজনৈতিক, ধর্মীয়, সামাজিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নাম ব্যবহার করা যাবে না।

(খ) বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, সরকার, কোনো জনগোষ্ঠী, আদিবাসী এবং অঞ্চলকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করে কোনো উদ্দীপক ও প্রশ্ন তৈরি করা যাবে না।

(গ) বাংলাদেশের ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, গোষ্ঠী, ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও জাতীয় অনুষ্ঠানকে অমর্যাদা করে কোনো উদ্দীপক ও প্রশ্ন তৈরি করা যাবে না।

(ঘ) রাষ্ট্র বা জাতিকে অমর্যাদা করে কোনো উদ্দীপক ও প্রশ্ন তৈরি করা যাবে না। সংবিধান পরিপন্থি ও রাষ্ট্রবিরোধী কোনো বিষয় ব্যবহার করে কোনো উদ্দীপক ও প্রশ্ন প্রণয়ন করা যাবে না। ধর্ম, তীর্থস্থান, ধর্মীয় স্থাপনা, রাষ্ট্রীয় স্থাপনা, ঐতিহাসিক স্থান ইত্যাদিকে অসম্মান করে কোনো উদ্দীপক ও প্রশ্ন প্রণয়ন নয়।

(ছ) কোনো অশোভনীয় বা আপত্তিকর ছবি কিংবা বিতর্কিত ব্যক্তি ও তার কার্যকলাপ উদ্দীপক হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। সরকার এবং সমাজ অননুমোদিত বা গ্রহণযোগ্য বিষয় (যেমন: বাল্য বিয়ে, যৌতুক ইত্যাদি) ইতিবাচক অর্থে ব্যবহার করা যাবে না।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এই পরিপত্রের মর্মানুযায়ী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকদের সৃজনশীল প্রশ্নপত্র প্রণয়নের নির্দেশনা দেওয়া যাচ্ছে। এ পরিপত্রের পরিপন্থি কোনো প্রশ্ন প্রণয়ন করা হলে প্রধান শিক্ষক ও বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক ব্যক্তিগতভাবে দায়ী থাকবেন এবং প্রধান শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

‘সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শিক্ষকরা যেন উপযুক্ত নির্দেশনাসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রের আলোকে সৃজনশীল প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করেন সে বিষয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের অনুরোধ করা যাচ্ছে।’

এসব নির্দেশনা সব কলেজ অধ্যক্ষকে অবহিত করার জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অঞ্চলের সবপরিচালক এবং সব বিদ্যালয়, মাদরাসার প্রধান শিক্ষক ও সুপারিনটেনডেন্টকে অবহিত করতে জেলা শিক্ষা অফিসারকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, সব শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, এনসিটিবি চেয়ারম্যান, সব জেলা প্রশাসককেও বিজ্ঞপ্তির অনুলিপি পাঠানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের দশম শ্রেণির ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ের প্রাক-নির্বাচনী পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে ফেসবুকের বিতর্কিত চরিত্র সেফুদাকে উদ্দীপক ধরে প্রশ্ন করা হয়। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার পর প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট শিক্ষক জাহিনুল হাসানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

এর আগে এপ্রিলে ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশন উচ্চ বিদ্যালয়েল নবম শ্রেণির বাংলা প্রথমপত্রের বহুনির্বাচনী প্রশ্নের দু’টি সম্ভাব্য উত্তরে পর্ন তারকা মিয়া খলিফা ও সানি লিওনের নাম আসায় ব্যাপক সমালোচনার পর ওই শিক্ষককে বরখাস্ত করা হয়েছিল।


সর্বশেষ সংবাদ