বিশ্বে স্কুলহীন শিশুর সংখ্যা ২৬০ মিলিয়ন

আর্থ-সামাজিক, শিক্ষা ও চিকিৎসার বিভিন্ন লক্ষ্যে পৌঁছাতে অসামান্য কাজ হয়েছে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) আওতায়। প্রশংসনীয় সফলতাও দেখিয়েছে অনেক দেশ। তবে এখনও নানা খাতে নানা অসঙ্গতি রয়ে গেছে। বর্তমানে পুরো বিশ্বে ২৬০ মিলিয়ন বা ২৬ কোটি শিশু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ পায়নি। অন্যদিকে, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় অংশ নিয়েছে এমন ৫০০ মিলিয়ন বা ৫০ কোটি ছেলে ও মেয়ে গুনগত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অন ফাইন্যান্সিং গ্লোবাল এডুকেশন অপরচুনিটির (আইসিএফজিইও) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে আসে। 

সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে দেশে যুদ্ধ, বিরোধ আর আগ্রাসনের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হচ্ছে শিশুদের জীবন। নিজ জন্মস্থান ছেড়ে অভিবাসী হচ্ছে কোটি কোটি শিশু। আশ্রয় শিবিরে প্রাণ বাঁচাতে পারলেও শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এসব শিশু। দাতা সংস্থার সহায়তা পরিচালিত স্কুলে ভর্তি হলেও পাচ্ছেনা মানসম্মত শিক্ষা। ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বের মোট স্কুলগামী শিশুদের অর্ধেক তথা ৮০০ মিলিয়ন বা ৮০ কোটি ভবিষ্যতে কর্মক্ষেত্রে চাকরি পেতে যে দক্ষতার প্রয়োজন হবে সেই মৌলিক দক্ষতায় ভুগবে। 

মৌলিক এসব ঝুঁকিগুলোর বিপরীতে দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের জন্য ২০১৫ সালে ওয়ার্ল্ড কমিউনিটি ‘টেকসেই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি)’ অর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এসডিজির চার নম্বর গোলে সবার জন্য অভিন্ন শিক্ষা নিশ্চিতের কথা বলা হয়েছে। এ লক্ষ্য অর্জনে বিগত কয়েক বছরে দ্বিপাক্ষিক খাতে থেকে সহযোগিতার হারও বৃদ্ধি পেয়েছে। তা সত্ত্বেও এসডিজি কর্মসূচি গ্রহনের আগে শিক্ষা খাতের যে চিত্র ছিল তা দিনে দিনে আর ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। সাম্রাজ্যবাদীদের আগ্রসনে বর্তমানে প্রায় ৭৫ মিলিয়ন শিশু যুদ্ধকবলিত এলাকায় মানবিক বিপর্যয়ের শিকার হচ্ছে। যাদের শিক্ষাসহ অন্যান্য মৌলিক অধিকার বিপর্যস্ত। 

গবেষণার প্রতিবেদনে বলা হয়, যুদ্ধ ও আগ্রাসনের কারণে অভিবাসী শিশুদের প্রতি চারজনের মধ্যে মাত্র একজন মাধ্যমিক শিক্ষা পাবে। আর উচ্চ শিক্ষা পাবে মাত্র ১ শতাংশ। 

অপর এক গবেষণায় দেখা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় যেসব শিশু ভর্তি হয়েছে, তাদের মধ্যে প্রায় ৪০০ মিলিয়নের শিক্ষা জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। তাদের কেউ হয়তো প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমও শেষ করতে পারবে না। 

শিক্ষার এই বৈষম্য কমানো শুধু নিম্ন আয়ের দেশের একার দায়িত্ব নয়। নিম্ন আয়ের দেশগুলো চাইলেও তা পারবে না। কারণ শিক্ষা সহায়তায় প্রতি বছর প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করছে এসব দেশ। তাদের এই ব্যয় যদি দ্বিগুণও করা হয় কিংবা উন্নত দেশের শিক্ষা ব্যয়ের সমান বরাদ্দ দেয়া হয়, তারপরেও এসব দেশের শিশুদের শিক্ষার অধিকার পুরণ করতে কয়েক বিলিয়ন ডলার ঘাটতি থাকবে। 

তাই এসডিজির ৪ নম্বর লক্ষ্য অর্জন করতে হলে, বিশ্বব্যাংক, জাতিসংঘের শিক্ষা বিষয়ক সংস্থা  এবং অন্যান্য আঞ্চলিক উন্নয়ন ব্যাংকগুলোকে আর্থিক সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসার বিকল্প নেই। 


সর্বশেষ সংবাদ