দুই সন্তানের সঙ্গে যেমন কাটছে সাকিবের

কাজ নেই, কর্ম নেই। ঘরে বসে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছি। এক হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রে লকডাউনে থাকা খারাপ ছিল না। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে ব্যাপারটা একটু অন্যরকম হয়ে গেল। চারিদিকে শুধু দুঃসংবাদ। কত দিন আর এরকম ভালো লাগে। এর তো একটা শেষ দরকার!

এটা ভালো যে, পরিবারের সঙ্গে অনেক বেশি সময় কাটানো যাচ্ছে। দুই বাচ্চাকে পুরো সময়টা দিচ্ছি। ছোট জন যদিও এখনও সেভাবে বোঝে না। তবে বড় জনের সঙ্গে এখন যে সময়টা কাটাচ্ছি, এটা তো আগে কখনও দিতে পারিনি। পারিবারিকভাবে তাই খুবই ভালো সময় যাচ্ছে। সঙ্গে যদি ঘর থেকে একটু বের হতে পারতাম, তাহলে আরও ভালো হতো। দেড় মাস ধরে ঘরের মধ্যে। যদি বাইরে গিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে বসতে পারতাম, কোথাও ঘুরতে যেতে পারতাম! সপ্তাহে একদিন যেতে পারলেও মন্দ হতো না।

আমাদের এখানে, উইসকনসিন রাজ্যের ম্যাডিসন শহরে আলহামদুলিল্লাহ এখনও ভালো অবস্থা। আগের তুলনায় পরিস্থিতি আস্তে আস্তে ভালো হচ্ছে। পুরো যুক্তরাষ্ট্রেই মনে হয় অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। এই দেশে প্রতিদিন ৩ লাখের মতো পরীক্ষাই হয়। যারা পজিটিভি হচ্ছে, তাদের আইসোলেশনে রাখছে। এটা একটা সুবিধা। রোগটা বেশি ছড়াতে পারছে না এখন। যত বেশি পরীক্ষা, তত বেশি নিরাপদ থাকার সম্ভাবনা, এটাই এখানে নীতি।

ম্যাডিসনে বসেই খবর পাচ্ছি, অনলাইনে দেখছি দেশে মানুষজন সব ঘর থেকে বের হয়ে গেছে। হাঁটারও নাকি জায়গা নেই রাস্তায়! বিশেষ করে মফস্বল শহরগুলোতে। আমাদের মাগুড়ায়ও রাস্তায় অনেক ভিড়। মার্কেটে গিয়ে দোকানে ঢুকতে লাইন দিতে হচ্ছে। আসলে বাংলাদেশের মানুষের বেশিদিন ঘরে থাকার অভ্যাস নেই। তার ওপর বিদেশ থেকে প্রতিদিনই তো কত মানুষ দেশে ফিরছে। আমাদের দেশে এসব নিয়ন্ত্রন করা কঠিন। সিদ্ধান্ত যেদিকেই নিবেন, একটা না একটা সমস্যা হবে। কিন্তু আমার মনে হয় লকডাউনটা আরও কিছুদিন থাকলে মহামারীর সংক্রমণ কমে আসত। জানি না বাংলাদেশে এসবের ভবিষ্যত কীভাবে অনুমান করা হয়। তবে এখানে তো মোটামুটি ওরা যা বলছে, তা-ই মিলে যাচ্ছে।

এখানে আমার দৈনিক রুটিন বলতে প্রতিদিন ভোর ৪টার মধ্যে সেহরি করে ফজরের নামাজ পড়ে ঘুমোতে যাই। ইফতার হতে হতে রাত সাড়ে ৮টা। যোহরের নামাজের আগে ঘুম থেকে উঠে যাই। এরপর দিনের শুরু। বাচ্চাদের সঙ্গে সময় কাটানো, ওদের সঙ্গে খেলা, টিভি দেখা, গল্প করা, মুভি দেখা... এভাবেই কাটে সময়। খেলা-টেলা পরিকল্পনা করে দেখা হয় না, সে সুযোগও নেই। সামনে পড়লে হয়তো একটু দেখি। দেশের খবর, এখানকার খবর এসবই দেখা হয় বেশি টিভিতে। আর খুব জরুরি হলে বা বাচ্চাদের কিছু কিনতে হলে সপ্তাহে সর্বোচ্চ একদিন গ্রোসারি শপে যাওয়া পড়ে। সবই অবশ্য বাসার কাছেই। ৫-৭ মিনিটের ড্রাইভ।

এখানে সুবিধা হচ্ছে মানুষ নিয়ম-কানুন মানে। রাস্তায় মানুষ ওভাবে হাঁটাহাঁটি কওে না। দোকানে গেলেই শুধু কিছু মানুষ দেখা যায়। তাও একজন আরেকজনকে দেখলে সরে যায়। সবাই মাস্ক, গ্লাভস পরছে। হাত ধোয়া, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার এসব তো চলছেই। তারপরও আমি বাইরে থেকে এসে গোসল করে ফেলি। কাপড়-চোপড় ধুয়ে ফেলি।

উইসকনসিন রাজ্যে মানুষ আছে সব মিলিয়ে দেড়-দুই কোটি। তার মধ্যে ১০-১২ হাজারের মধ্যে সংক্রমন ছড়িয়েছে। অনেকেই সুস্থ হয়ে গেছে। বাকিরা হাসপাতালে। তার মানে বাইরে ঘুরে বেড়ানো অসুস্থ মানুষের সংখ্যা নেই বললেই চলে। এ জন্য ভয়টা কম। তারপরও সবাই নিরাপদ থাকার চেষ্টা করে। নিউ ইয়র্ক, নিউ জার্সি, ক্যালিফোর্নিয়া এসব রাজ্যেই বেশি ছড়িয়েছে। নইলে যুক্তরাষ্ট্রে অনেক রাজ্য আছে যেখানে মোট সংক্রমণই ২০০ থেকে ৫০০।

অখন্ড অবসর হয়তো যাচ্ছে। তবে এর মধ্যেও আমি খেলা নিয়ে একদমই ভাবছি না। পরিস্থিতি ভালো হোক। আগে তো আমাদের বাঁচতে হবে, তারপর খেলা! এখনই খেলার টেনশন নেওয়ার কোনো কারণ দেখি না। ধরুন কেউ খেলতে চাচ্ছে, কিন্তু চাইলেই কি হবে?

সব দেশের অবস্থা আগে ভালো হতে হবে। যতদিন না ভারতের অবস্থা ভালো হচ্ছে, যতদিন না চায়নার অবস্থা ভালো হচ্ছে, বাংলাদেশও ততদিন করোনা নিয়ে চাপে থাকবে। আবার বাংলাদেশ যতদিন পুরোপুরি সুস্থ না হচ্ছে এই দুই দেশের দুশ্চিন্তা থাকবে। এভাবে ঘুরে ফিরে সব দেশই নিজেদের সঙ্গে অন্য দেশের অবস্থার দিকে তাকিয়ে থাকবে। কারণ এক দেশ থেকে আরেক দেশে মানুষ যাওয়া-আসা করবে।

আগে সারা বিশ্বেই এটা নিয়ন্ত্রনে আসতে হবে, তারপর খেলার চিন্তা। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগেও তো খেলোয়াড়েরা খেলতে চাচ্ছে না। কার শরীরে কি আছে আপনি তো জানেন না। যে কোনোভাবে যে কেউ আক্রান্ত হতে পারে। কারণ আপনি যুদ্ধ করছেন অদৃশ্য শক্তির সঙ্গে। আপনি জানেন না কবে এটা ঠিক হবে। সব জায়গায় পরিস্থিতি ঠিক না হলে সেটাকে আসলে ঠিক বলা যাবে না।

তারপরও আমি আশাবাদী খুব বেশিদিন হয়তো আমাদের অপেক্ষা করতে হবে না। সারা বিশ্বেই তো অনেক ভ্যাকসিন, ঔষধ নিয়ে কাজ হচ্ছে। মানুষ যখন দেখবে ঔষধ খেলে ৯০ ভাগ সুস্থ হওয়া যায়, তখন নিশ্চয়ই সাহস পাবে একটু। (সূত্র: প্রথম আলো)

লেখক: সাকিব আল হাসান


সর্বশেষ সংবাদ