ইংরেজির দক্ষতা ঝালাইয়ের ভালো একটি সুযোগ

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো কোভিড-১৯–এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছে বাংলাদেশও। শুধু নিজেকে ঘরে বন্দী রেখেই আপনি রক্ষা করতে পারেন আরও অনেক মানুষের প্রাণ। দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে এটিই এখন আপনার একমাত্র কর্তব্য। তরুণদের জন্য এই দায়িত্ব আরও দ্বিগুণ।

দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। বাড়িতে হয়তো অস্থিরতার মধ্য দিয়েই সময় কাটছে অনেকের। তবে আতঙ্কিত না হয়ে এই চ্যালেঞ্জকে একটি সুযোগ হিসেবেও গ্রহণ করা যেতে পারে। ঘরে বসেই নতুন কিছু করার দারুণ একটি সময় এখন। যেমন ধরুন, বন্ধের দিনগুলো হতে পারে চার দেয়ালের মধ্যে আপনার ইংরেজির দক্ষতা ঝালাইয়ের ভালো একটি সুযোগ। কীভাবে ইংরেজির চর্চা করা যায়, তা নিয়েই কিছুটা আলোচনা করা যাক।

* প্রতিদিন ইংরেজিতে দিনলিপি লেখা শুরু করুন। অন্তত এক পাতা করে হলেও লিখুন। ঘরে বসে থাকার নতুন এই অভিজ্ঞতাগুলো লিখে রাখুন। এতে ভাবনার আত্মপ্রকাশ, বর্ণনা ও বিশ্লেষণের দক্ষতা বাড়বে। যেহেতু একান্তই নিজের ডায়েরিতেই সব লিখছেন, তাই কোনো তৃতীয় পক্ষ আপনার ভাষাগত কিংবা ব্যাকরণগত ভুল ধরতে আসবে না। অতএব নির্দ্বিধায় মন খুলে লিখুন। প্রতিদিনের বর্ণনায় নতুন নতুন শব্দ ব্যবহারের চেষ্টা করুন। সংকটময় মুহূর্তে আপনার এই অভিজ্ঞতাগুলো কিন্তু ভবিষ্যতের জন্য এক অনন্য দলিল হয়ে উঠতে পারে।

* পরিবারের সঙ্গেই তো এখন পুরো সময় কাটছে। অতএব নিশ্চয়ই পরিবারের সঙ্গে কাটানো সময়গুলো মূল্যবান করে তোলা উচিত? এটি হয়তো সবাই করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে যদি একটু অন্যভাবে কিছু করা যায়, তাহলে কেমন হয়? পরিবারের সবার সঙ্গে ইংরেজিতে কথা বলা শুরু করুন। শুরুতে টুকটাক ভুল হোক, অন্য প্রান্ত থেকে বাংলাতেই জবাব আসুক, সমস্যা নেই। কিন্তু ইংরেজিতে অনর্গল কথা বলার অভ্যাসটা গড়ে উঠুক। ঘরের মানুষের সঙ্গে ইংরেজিতে কথা বলার মাধ্যমে জড়তা কাটানোর এর চেয়ে আর ভালো উপায় কী হতে পারে?

* ইংরেজি শব্দভান্ডার বাড়াতে পরিবারের সঙ্গেই বসে খেলতে পারেন স্ক্র্যাবলের মতো বোর্ড গেম। স্ক্র্যাবলের মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনও রয়েছে ইন্টারনেটে। অনলাইনে আপনার বন্ধুদেরও ইংরেজি শব্দভান্ডারের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারেন।

* ঘরে থাকতে থাকতে একঘেয়েমি লাগছে? নিশ্চয় খুব ইচ্ছে করছে বাইরের জগৎটা ঘুরে দেখতে? এ ক্ষেত্রে একমাত্র বই-ই পারে আপনাকে বাইরের দুনিয়ার স্বাদ দিতে। আগে পড়া হয়নি, এমন একটি ইংরেজি বই হাতে তুলে নিন। শুধু যে নতুন বই-ই হতে হবে, এমন নয়। ছোটবেলায় পড়া বইটিই আবার নতুন করে পড়তে পারেন। হয়তো ওই একই বই এবার নতুন করে আবিষ্কার করবেন। অথবা যে বইটির বাংলা অনুবাদ পড়েছেন, এবার ইংরেজিতে লেখা মূল বইটি পড়ুন। বেশির ভাগ ক্ল্যাসিক বই ইন্টারনেটেই পাওয়া যায়। তাই বই খুঁজে পেতেও খুব একটা কষ্ট করতে হবে না।

* যাঁদের বাসায় ইংরেজি বইয়ের একদমই সংগ্রহ নেই, তাঁরা বিভিন্ন ই-লাইব্রেরি কিংবা ওয়েবসাইটে ঢুঁ মারতে পারেন। এমনই একটি ওয়েবসাইট প্রোজেক্ট গুটেনবার্গ। www.gutenberg.org ঠিকানায় গেলেই পেয়ে যাবেন ৬০ হাজারের অধিক বইয়ের সংগ্রহ। পছন্দের ক্যাটালগ থেকে বই বাছাই করে বিনা মূল্যেই পড়তে পারবেন। এ ছাড়া সেরা ১০০ বইয়ের তালিকা থেকেও বেছে নিতে পারেন অসাধারণ কিছু বই।

* চোখ বুজেও বই পড়তে পারেন! নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছেন? হ্যাঁ সেটি সম্ভব অডিও বুকের মাধ্যমে। ওপেন কালচার কিংবা লিব্রিভক্সের মতো ওয়েবসাইটগুলোতে বিনা মূল্যে অসংখ্য অডিও বুক পেয়ে যাবেন। এ ছাড়া অডিও বুকের আরেক বড় সংগ্রহশালা ইউটিউব তো আছেই। লিসেনিং স্কিল না ‘শোনার দক্ষতা’ উন্নয়নের জন্য অডিও বুক শোনা খুব কার্যকর। বিশেষত, যাঁরা আইইএলটিএসের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তাঁদের জন্য এটি বেশ উপকারী। এ ছাড়া ঘরে বসে ইংরেজি দক্ষতা বাড়াতে পডকাস্টও শোনা যেতে পারে। টিউনইন ওয়েবসাইটে (tunein.com) রয়েছে শিল্প-সাহিত্য, খেলাধুলা থেকে শুরু করে হাস্যরসাত্মক, ভৌতিক কিংবা ইতিহাসবিষয়ক অসংখ্য পডকাস্ট। অডিও বুক কিংবা পডকাস্ট শোনার মাধ্যমে ইংরেজিভাষীদের উচ্চারণের ভঙ্গি শোনা ও বোঝার দক্ষতা বাড়বে।

* ইংরেজি সিনেমা কিংবা টিভি সিরিজ দেখে হয়তো অনেকেই সময় পার করছেন। সিনেমা দেখা অনেকের কাছে সময় নষ্ট মনে হলেও, আমার মতে নতুন একটি ভাষা শেখার জন্য সিনেমা দেখা খুব কার্যকর একটি উপায়। ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনার মাধ্যমে একটি বিষয় সম্পর্কে যত সহজে ধারণা নেওয়া যায়, শুধু কল্পনাশক্তির মাধ্যমে অনেক সময়ই তা সম্ভব হয়ে ওঠে না। আর ভাষা শুধু শব্দ কিংবা ব্যাকরণের মধ্যেই আবদ্ধ নয়, এর সঙ্গে সংস্কৃতিরও যোগাযোগ রয়েছে। তাই ইংরেজি ভাষা শিখতে শিখতে তাঁদের সংস্কৃতি সম্পর্কেও টুকটাক ধারণা লাভ করা যেতে পারে।

* একই যুক্তি খাটে গানের ক্ষেত্রেও। ইংরেজি গানের ভক্ত না হয়ে থাকলে ইংরেজি গানের দুনিয়াটি ঘুরে দেখার এটিই সময়। ইউটিউব কিংবা ডিজারের মতো ফ্রি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে চলতি প্লেলিস্ট থেকে পছন্দের শিল্পীর গান শুনতে পারেন। গান শোনার সময় গানের কথাগুলোও দেখে নিন। এরপর মনে মনে গানের কথাগুলোর অনুবাদ কিংবা বিশ্লেষণ করুন। এতে বাংলা ও ইংরেজি—এই দুই ভাষায় গানের মাধ্যমে অনুভূতি প্রকাশের ভিন্নতাগুলো আপনার চোখে পড়বে। নিজেকে চ্যালেঞ্জ করে নতুন কিছু শিখতে চাইলে র‌্যাপ গান শুনতে পারেন। লিরিক দেখে নিজে নিজে গাওয়ার চেষ্টাও করুন। আপনাকে একদম নির্ভুলভাবে গাইতে হবে, এমন কিছুই নয়। শুধু একটু গাওয়ার চেষ্টা করেই দেখুন না, সম্পূর্ণ নতুন একটি অভিজ্ঞতার স্বাদ পাবেন।

মনে রাখবেন, নতুন কিছু করার চেষ্টা ভীতিকর হতে পারে, তবে এই কঠিন সময়ে ঘরে বসে থেকে মনকে ব্যস্ত রাখাটাও কিন্তু জরুরি। (সূত্র: প্রথম আলো)

লেখক: জ্যেষ্ঠ প্রভাষক, ডিপার্টমেন্ট অব ইংলিশ অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব)


সর্বশেষ সংবাদ