প্রোফাইল পিকে দেখা সর্বনাশ— লড়াকু মিডফিল্ডার থেকে প্রেমিক জামাল

  © সংগৃহীত

লড়াকু মিডফিল্ডার থেকে প্রেমিক জামাল ভূঁইয়া হয়ে উঠার গল্পটা তার ভালোবাসার মানুষকে হোয়াটসঅ্যাপ প্রোফাইল পিকচারে প্রথম দেখার মধ্যদিয়ে। তার বাবার ঘনিষ্ঠ বন্ধুর মেয়ে ছিল সে। জামালের গল্পে রবি ঠাকুরের ‘তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ’কে একটু বদলে তিনি বলতে পারেন, ‘প্রোফাইল পিক-এ দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ।’

পরিবার থেকে বিয়ের চাপ থাকলেও ফুটবল নিয়েই বেশ ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়ক। একদিন বাবার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ‘মনির চাচা’ মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন, ‘আমার বন্ধুর সুন্দরী এক মেয়ে আছে। তোমার ভালো লাগতে পারে।’ ফোনে টুকে রাখা হলো ফোন নাম্বার। এরপর হোয়াটসঅ্যাপে খুঁজতে গিয়ে প্রোফাইল পিকচারে চোখ পড়তেই হৃদয়ে দোল খেলে যাওয়া। বাকি গল্প আপনিও জানেন।

ছোট ছোট বার্তায় দুজন দুজনের পরিচিত হয়ে ওঠেন। পছন্দ-অপছন্দ জানার চেষ্টা, ভালো-মন্দের খোঁজ নেওয়া। মুঠোফোনেই দুজনের ভাব বিনিময় জমে গেল দারুণ। প্রেমে পড়লে ভালোবাসার মানুষকে পাশে বসে দেখার আকুতি জেগে ওঠে।

বার্তা পাঠালেন জামাল, ‘আমরা কি দেখা করতে পারি?’ অপর প্রান্ত থেকে ‘হ্যাঁ’ জবাব আসতেই ঢাকা থেকে ডেনমার্কের বিমানে চেপে বসা। সেখান থেকে এক ঘণ্টার রাস্তা পাড়ি দিয়ে জার্মানি। এরপর শুভদৃষ্টি বিনিময়।

৮ আগস্ট ২০১৯, জার্মানির এক কফি হাউসে প্রথমবারের মতো মুখোমুখি বসে অন্তর্জালে প্রেমে পড়া যুগল। ছেলে উত্তেজনায় এদিক-ওদিক তাকায়। মেয়েটি লজ্জায় মাথা নিচু করে টেবিলে আঁকিবুঁকি কাটে। ক্যাফেতে দুই ঘণ্টার প্রেমের অনুশীলনেই ভালোবাসার প্রস্তাব দিয়ে বসলেন জামাল, ‘ইউরোপে ওটাই আমার প্রথম কোনো বাংলাদেশি মেয়ের সঙ্গে বসা। খুব লজ্জা পাচ্ছিলাম, নার্ভাস লাগছিল। সামনাসামনি সেদিনই প্রথম ভালোবাসার প্রস্তাব দেওয়া। এরপর তো সবকিছুই দ্রুতই ঘটে গেছে।’

আগস্টে প্রথম সাক্ষাৎ, গত ডিসেম্বরেই জামাল পৌঁছে গেলেন বিয়ের সিদ্ধান্তে। ডেনমার্ক সরকারের কাছে বিয়ের আবেদন করতেই মঞ্জুর। তত দিনে শেষ হয়ে গেছে ফেডারেশন কাপ। মায়ের সঙ্গে আলোচনা করে ডেনমার্ক ফিরে ৫ জানুয়ারি তাতিয়ানাকে করে নিলেন জীবনসঙ্গিনী।

জামাল যেমন চেয়েছিলেন, জার্মানিতে বেড়ে ওঠা বাংলাদেশি তরুণী তাতিয়ানা ঠিক তেমন। মনের মতো জীবনসঙ্গী পেয়ে জামালের আনন্দ সীমাহীন, ‘ও তো খুবই সুন্দর! প্রথম দেখাতেই আমার ভালো লেগেছে।’ জামাল ফুটবল নিয়ে ব্যস্ত। এ শহর-ও শহর, এ দেশ-ও দেশ ঘুরে বেড়াতে হয়। কিন্তু বিশ্বের ব্যস্ততম লোকটির স্ত্রীও নিশ্চয়ই চান তাঁর স্বামী তাঁকে সময় দেবেন। জামালের সে সময় কোথায়! তবে এ নিয়ে সংঘাতের আশঙ্কা নেই বললেই চলে। তাতিয়ানারও যে ব্যস্ততা আছে পড়াশোনা নিয়ে!

ভালোবাসার সঙ্গে হাত ধরে হাঁটে মান-অভিমান। জীবনসঙ্গীর অভিমান ভাঙানো কঠিন নাকি ভারতীয় অধিনায়ক সুনীল ছেত্রীর পা থেকে বল কেড়ে নেওয়া সোজা? দ্বিতীয়টিকেই বেছে নিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, ‘সুনীল ছেত্রীর পা থেকে বল কেড়ে নেওয়াই সোজা। তবে মান-অভিমান হলে আমরা নিজেদের মধ্যে কথা বলি।’

নতুন জীবন নিয়ে চারদিকে রঙিন স্বপ্নের ওড়াউড়ি। তার মধ্যে একটি-চার সন্তানের বাবা হতে চান জামাল, ‘আমি বড় পরিবার (৪ সন্তান) চাই। একটা বাচ্চা ঠিক আছে। কিন্তু ভাই-বোন না থাকলে বাচ্চাটারই খারাপ লাগবে।’

বিয়ের কয়েক দিন না যেতেই জাতীয় দলের জার্সির টানে জামালকে ফিরতে হয়েছে ঢাকায়। ফেরার সময় স্ত্রীর জিজ্ঞাসা ছিল, ‘আবার কবে হবে দেখা?’ আপাতত সময়টা জানা নেই জামালেরও। তবে একজন আরেকজনের কাছ থেকে ৭২৮৭ কিলোমিটার দূরে থাকলেও সে দূরত্ব কেবলই ভৌগোলিক। জামাল-তাতিয়ানার মনের বিষুবরেখা মিলে আছে একই বিন্দুতে।

উনত্রিশ বছর বয়সী জামাল হ্যারিস ভূঁইয়া ১৯৯০ সালে ডেনমার্কের শহর গ্লস্ট্রোপে জন্মগ্রহণ করেন এবং সেখানেই বেড়ে ওঠেন। ২০১৩ সালের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে নেপালের বিপক্ষে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের হয়ে খেলায় অংশ জামাল। জামাল ভূইয়া বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের পাশাপাশি বাংলাদেশ অনুর্ধ্ব-২৩ জাতীয় ফুটবল দল এবং সাইফ এসসি দলের নেতৃত্বও দিয়েছেন।


সর্বশেষ সংবাদ