এ যেন ছক্কা মারার টেস্ট

  © টিডিসি ফটো

বিশাখাপত্তম টেস্টে রোহিত শর্মা, মায়াঙ্ক আগারওয়াল, ডিন এলগার, জাদেজারা যেন ছক্কার প্লেট সাজিয়ে রেখেছিলেন। শেষ পর্যন্ত দু’দলের ব্যাটসম্যানরা ম্যাচটিকে পরিণত করেছেন ছক্কার টেস্ট হিসেবে। এসেছে রেকর্ড সংখ্যক ছক্কা। ব্যক্তিগত ছক্কার রেকর্ডও ভেঙেছে এই ম্যাচে। পাশাপাশি ওপেনিং জুটিতে সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ডও আসে এতে। ভাবগতিক দেখে মনে হচ্ছে এ যেন ছক্কা মারার টেস্ট।

দক্ষিণ আফ্রিকা যখন ব্যাট করছে তখন রেকর্ডটি হতে দরকার ছিল আর মাত্র এক ছক্কার। প্রোটিয়াদের দ্বিতীয় ইনিংসের সেরা ব্যাটসম্যানটি মেরেছেন সে ছক্কাটি। দশে নেমে ৫৬ রান করা পিয়েত নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৫তম ওভারে রবীন্দ্র জাদেজাকে বাতাসে ভাসিয়ে সীমানার বাইরে পূর্ণতা এনে দেন রেকর্ডে।

বিশাখাপত্তম টেস্টে এটি ছিল ম্যাচের শেষ ছক্কা। তাতে গোটা ম্যাচে ছক্কাসংখ্যা দাঁড়ায় ৩৬। টেস্ট ইতিহাসে এক ম্যাচে এটি সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ড।

আগের রেকর্ডটি ছিল নিউজিল্যান্ড-পাকিস্তানের। ২০১৪ সালে শারজা টেস্টে দুই দল মিলে হাঁকিয়েছিল ৩৫টি ছক্কা। টেস্টে এক ম্যাচে দুই দল মিলে সর্বোচ্চ ছক্কা মারার তালিকায় বেশ ওপরের দিকেই আছে বাংলাদেশের নাম। বলা যায় শীর্ষ তিনে। ২০১৩ সালে চট্টগ্রামে বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড টেস্টেও দেখা গেছে ২৭ ছক্কা। সাত বছর আগে ২০০৬ সালে ফয়সালাবাদে ভারত-পাকিস্তান টেস্টেও দেখা গিয়েছিল ২৭ ছক্কা। এক ম্যাচে সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ডে এ দুটি টেস্ট তৃতীয়।

বিশাখাপত্তমে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ১৩ ছক্কা মেরেছে ভারত। প্রোটিয়ারা তাদের প্রথম ইনিংসে মেরেছে ৭ ছক্কা। এরপর ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসে দেখা গেছে ১৪ ছক্কা। রেকর্ড হতে দরকার ছিল ৩ ছক্কার। গুনে গুনে তিন ছক্কাই এসেছে প্রোটিয়াদের দ্বিতীয় ইনিংসে। এক টেস্টে এক দলের সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ডও এখন ভারতের (২৭)।

এক ম্যাচে সর্বোচ্চ ছক্কার এ রেকর্ডে রোহিতের অবদানই সবচেয়ে বেশি। টেস্টে প্রথমবারের মতো ওপেন করতে নেমেই রেকর্ড বই ওলট-পালট করেছেন এ ব্যাটসম্যান। ইতিহাসের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে দুই ইনিংসেই কম পক্ষে ছয়টি করে ছক্কা মেরেছেন রোহিত। ভেঙেছেন ভারতের হয়ে এক টেস্টে নভোজিৎ সিধুর গড়া (৮) সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ডও। ভারতের দুই ইনিংস মিলিয়ে মোট ১৩টি ছক্কা মেরেছেন রোহিত। এতে ভেঙেছে ওয়াসিম আকরামের গড়া এক টেস্টে সর্বোচ্চ ছক্কা মারার বিশ্ব রেকর্ড (১২)। বিশাখাপত্তমে মায়াঙ্ককে সঙ্গে নিয়ে আরও একটি রেকর্ড গড়েছেন রোহিত। টেস্টে কোনো ওপেনিং জুটির কাছ থেকে সর্বোচ্চ ১২ ছক্কা মারার রেকর্ড—যা দেখা গেছে ভারতের প্রথম ইনিংসে। ২০০৪ সালে পার্থে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনার ম্যাথু হেইডেন-জাস্টিন ল্যাঙ্গার জুটি ১১ ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভারতের হয়ে তিন সংস্করণে ইনিংসে সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ডও এখন রোহিতের। টি-টোয়েন্টিতে ১০, ওয়ানডেতে ১৬ আর টেস্টে ১৩ ছক্কা হাঁকিয়েছেন তিনি। আর ২০১৬ সাল থেকে হিসেব করলে, সব সংস্করণ মিলিয়ে রোহিতের ছক্কাই বেশি। ১৪৭ ইনিংসে ২৩৯ ছক্কা মেরেছেন রোহিত। ৯৭ ইনিংসে ১২৬ ছক্কা নিয়ে দুইয়ে ইংল্যান্ডের ওয়ানডে অধিনায়ক এউইন মরগান। দুজনের মধ্যে পার্থক্যটা প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছি। কী টি-টোয়েন্টি, ওয়ানডে কিংবা টেস্ট—রোহিতকে তো আর সাধ করে ‘হিটম্যান’ ডাকা হয় না!

এর আগে রবিবার (৬ অক্টোবর) বিশাখাপত্নমে দক্ষিণ আফ্রিকাকে দ্বিতীয় ইনিংসে গুঁড়িয়ে দিয়েছে স্বাগতিক ভারত। সফরকারীরা অলআউট হয়েছে মাত্র ১৯১ রানে। ফলে ২০৩ রানের বিশাল জয় পেয়েছে বিরাট কোহলির দল। এর আগে ভারত প্রথম ইনিংসে ৭ উইকেটে ৫০২ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করার পর দক্ষিণ আফ্রিকা করেছিল ৪৩১ রান। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতীয়রা ৪ উইকেট ৩২৩ রান করে ইনিংস ঘোষণা করেছিল।

এই জয়ে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে ভারত। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট তালিকায় নিজের শীর্ষস্থানও মজবুত করেছে তারা। তিন ম্যাচে তাদের পয়েন্ট ১৬০। অন্যদিকে, টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে ফ্যাফ ডু প্লেসির দলের অভিযান শুরু হয়েছে হার দিয়ে।

আগের দিনের ১ উইকেটে ১১ রান নিয়ে খেলতে নেমেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। শেষ দিনের দ্বিতীয় ওভারেই বিপদ শুরু হয় তাদের। থিউনিস ডে ব্রুইনকে বিদায় করেন প্রথম ইনিংসে ৭ উইকেট নেওয়া রবিচন্দ্রন অশ্বিন। এরপর প্রোটিয়া মিডল অর্ডারকে একাই ছিন্নভিন্ন করেন ডানহাতি পেসার শামি। একে একে তার শিকার হন টেম্বা বাভুমা, দলনেতা ডু প্লেসি ও কুইন্টন ডি কক। এদের মধ্যে বাভুমা ও প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান ডি কক রানের খাতা খুলতে পারেননি।

ইনিংসের ২৭তম ওভারে উইকেট উৎসবে যোগ দেন আগের দিন শেষ বিকালে ডিন এলগারকে ফেরানো বাঁহাতি স্পিনার জাদেজা। তিনি ওই ওভারে তুলে নেন ৩ উইকেট। তবে হাটট্রিক করতে পারেননি। একপ্রান্ত আগলে রাখা এইডেন মার্করাম ফেরেন ৭৪ বলে ৩৯ রান করে। শূন্য রানে সাজঘরে পৌঁছান ভারনন ফিল্যান্ডার ও কেশব মহারাজ। তাতে ৭০ রানে ৮ উইকেট খুইয়ে ফেলে দক্ষিণ আফ্রিকা।

নবম উইকেটে ৯১ রানের জুটি গড়ে প্রতিরোধ গড়েন অলরাউন্ডার সেনুরান মুথুসামি ও অফ স্পিনার ডেন পায়েট। দলের সংগ্রহ সম্মানজনক অবস্থায় নিয়ে যান তারা। ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট হাফসেঞ্চুরি তুলে নিয়ে পায়েট খেলেন দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫৬ রানের ইনিংস। দশ নম্বরে নেমে ১০৭ বল খেলে ৯ চার ও ১ ছয় মারেন তিনি। তার উইকেটটি শিকার করার পর কগিসো রাবাদাকে তুলে নিয়ে পঞ্চম উইকেট প্রাপ্তির স্বাদ নেন শামি। থামে দক্ষিণ আফ্রিকার দুর্দশা। ৫ চারে মুথুসামি অপরাজিত থাকেন ১০৮ বলে ৪৯ রানে।

শামি ৩৫ রানে নেন ৫ উইকেট। জাদেজা ৪ উইকেট দখল করেন ৮৭ রানে। প্রথমবার টেস্টে ওপেন করতে নেমে জোড়া সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ও ছক্কার রেকর্ড গড়ে ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেন ভারতীয় ওপেনার রোহিত শর্মা।