ঢাবি রোভারদের তাঁবুবাস ও দীক্ষাগ্রহণ

স্কাউটিং এর বয়োজ্যেষ্ঠ শাখা রোভারিং। ১৭ থেকে ২৫ বছর বয়সী তরুণেরা স্কাউটিংয়ের এই শাখায় যোগ দিয়ে নিজেকে শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, বুদ্ধিভিত্তিক এবং আধ্যাত্মিকভাবে একজন পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়। বিশ্বের একমাত্র সংগঠন হিসেবে স্কাউট আন্দোলনে যোগ দিতে দীক্ষা নিতে হয়। দীক্ষার পূর্বরাত্রিতে সারারাত জেগে আত্মশুদ্ধি পালন করতে হয়। অতীত জীবনের যাবতীয় কু-অভ্যাস পরিত্যাগ করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হতে হয়। স্কাউটিংয়ের শপথ, আইন ও মূলনীতি অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করতে সংকল্পবদ্ধ হতে হয়।

অবশেষ একজন রোভার স্কাউট লিডার কোন আগ্রহী ব্যক্তিকে শপথ পাঠ করানোর মাধ্যমে দীক্ষা প্রদান করে থাকেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউট গ্রুপ বাংলাদেশের সুপ্রাচীন এবং সর্ববৃহৎ রোভার স্কাউট গ্রুপ। ১৯৬৬ সাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রোভারিং কার্যক্রম বিদ্যমান। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেয়ের স্কাউটিং জগতে স্কাউটিংয়ের বিকাশে মাতৃসংগঠন হিসেবে ভূমিকা পালন করে আসছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউট গ্রুপ। যার ফলশ্রুতিতে বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ১৮ লক্ষ স্কাউটস রয়েছে। ২০২১ সালে ২১ লক্ষ স্কাউটস গড়ে তোলার লক্ষ্যমত্রা নির্ধারণ করা হয়েছ।

স্কাউটিংয়ের এই অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রার লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একঝাঁক নিবেদিতপ্রাণ প্রক্তণ রোভারবৃন্দ। যারা দেশে বিদেশে বাংলাদেশ স্কাউটসের প্রতিনিধিত্ব করছেন। যোগ্য নেতৃত্বে উজ্জ্বল করছেন দেশের ভাবমূর্তিকে।

প্রতিবছর শতশত রোভাররা এই গ্রুপ থেকে রোভারিংয়ের মহান ব্রত সেবার মূলমন্ত্র নিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে আর্তমানবতার সেবার লক্ষ্যে। দেশের প্রতিটা সেক্টরে শৃঙ্খলাবোধ, নিয়মানুবর্তিতা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে সৎভাবে যারা দেশগঠনে ভূমিকা রাখছেন। অপরদিকে নিজেকে যোগ্য হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে এই সংগঠনে যোগ দিচ্ছে শতশত নবীন রোভাররা। যাদেরকে দীক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে প্রতিবছর জাঁকজমকপূর্ণভাবে আয়োজন করা হয় বার্ষিক তাঁবুবাস ও দীক্ষা অনুষ্ঠান।

আগ্রহী নবীন শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ ছয়মাস হাতেকলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে। স্কাউটিংয়ের এই পর্যায়কে বলা হয় "সহচর পর্যায়"। তারপর লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে বাছাই করা হয়। শুধুমাত্র পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরাই রোভারিংয়ের জন্য দীক্ষাপ্রাপ্ত হয়।

এবছর তিন দিনব্যাপী বার্ষিক তাঁবুবাস ও দীক্ষা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে।

৩ থেকে ৫ অক্টোবরের এই দীক্ষা অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্ত্বাবধান এবং দিকনির্দেশনায় ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউট গ্রুপের সম্পাদক ও প্রধান রোভার স্কাউট লিডার অধ্যাপক এ কিউ এম মাহবুব, কোষাধ্যক্ষ মাহমুদুর রহমান, রোভার স্কাউট লিডার মুমিত আল রশিদ, রোভার স্কাউট লিডার জুয়েল মিয়া, রোভার স্কাউট লিডার মারুফ আহমদ এবং রোভার স্কাউট লিডার ফাতেমা বেগম।

অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন করেছেন আর্থ এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ স্কাউটসের জাতীয় কমিশনার আতিকুজ্জামান রিপন।

স্কাউটিংয়ের যাবতীয় কার্যক্রম নিয়ে প্রাণবন্ত এবং শিক্ষণীয় সেশন এবং স্কাউট ওনের মাধ্যমে প্রথম দিনের পরিসমাপ্তি ঘটে।

দ্বিতীয় দিন ভোরে শরীরচর্চার মাধ্যমে শুরু করে স্কাউটিংয়ের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর অংশ হাইকিং অর্থাৎ অজানার উদ্দেশ্যে যাত্রা সেটি সম্পন্ন করা হয়। সন্ধ্যায় আয়োজন হয় মাহতাঁবুজলসা। বিশাল অগ্নিকুণ্ড প্রজ্জ্বলন করা হয়। চারপাশে সবাই বসে উপভোগ করে নাচ, গান এবং নাটিকা। জুলু জাতির ঐতিহ্য এই তাঁবু জলসা স্কাউটিংয়ের প্রধান একটি আকর্ষণীয় দৃশ্য। রাত্রিবেলা সকল রোভাররা আত্মশুদ্ধি পালন করে।

পরদিন নবীন রোভারদের সেই কাঙ্ক্ষিত দিনটি উপস্থিত হয়ে। নতুন ড্রেস পরে সবাই স্কাউটিংয়ে দীক্ষা নিতে প্রস্তুত হয়। শপথ পাঠ করানোর মাধ্যমে দীক্ষা গ্রহণ করান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ।

সমাপনী বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউট গ্রুপের সম্মানিত রোভার স্কাউট লিডার মুমিত আল রাশিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউট গ্রুপকে সারাদেশের রোভার স্কাউটদের আইডল হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন এবং সকল নবদীক্ষিত রোভারদের রোভারিংয়ের আদর্শ অনুযায়ী জীবন পরিচালিত করতে অনুপ্রাণীত করেন।

অনুষ্ঠানে গুরু দায়িত্বপালন করেন, এস আর এম ফয়সাল আলম খান, এস আর এম আবু সাঈদ লিয়ন, এস আর এম আব্দুস সালাম, এস আর এম কাজী মাসুদ আল হাসান এবং এস আর এম রাবেয়া আক্তার।

লেখক: রোভারমেট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউট গ্রুপ