বিড়ি শ্রমিকের কাজ করেও হাই মাদ্রাসায় প্রথম নসিফা

  © ডয়েচে ভেলে

নসিফা খাতুন বিড়ি বাঁধেন। মাও বিড়ি বাঁধেন। বাবা রাজমিস্ত্রি। ভারতের মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরে তাঁদের পাড়াকেও বলে বিড়ি মহল্লা। সেখানে বিড়ি বাঁধতে বাঁধতেই খবরটা শুনেছেন নসিফা। পশ্চিমবঙ্গে হাইমাদ্রাসা পরীক্ষায় তিনি প্রথম হয়েছেন। খবর শুনে তিনি অবাক। তাঁর পরিবার, গোটা মহল্লাও অবাক।

কারণ এর আগে জীবনে একবার দ্বিতীয় হয়েছিলেন। ক্লাস নাইনে। সেটাই ছিল এতদিন সেরা সাফল্য। এবার সবাইকে ছাড়িয়ে একেবারে প্রথম। জঙ্গিপুরের মুনিরিয়া হাই মাদ্রাসায় নসিফার শিক্ষকরাও অবাক। একই সঙ্গে অসম্ভব খুশিও। পুরো পাড়া নসিফার বাড়িতে ভিড় করেছে। বিড়ি বাঁধতে বাঁধতেই তাঁর পড়াশুনো। সেই নসিফা ৯৫ শতাংশ নম্বর পেয়ে প্রথম।

গত বৃহস্পতিবারও সারা সকাল সে বিড়ি বেঁধেছে। আর উৎকন্ঠা নিয়ে অপেক্ষা করেছে ফলের জন্য। ১২টা নাগাদ দাদা মোবাইলে নেট ঘেঁটে নম্বরটা জানান। তখনও নসিফা প্রথম হওয়ার খবর জানতেন না। নম্বর জেনে ভালো লেগেছে। সেই ভালো লাগাটা বহুগুণ বেড়ে গেল যখন মাদ্রাসার শিক্ষকরা ফোন করে জানালেন, নসিফাই প্রথম। তারপর তো স্বপ্নের জগতে নসিফা।

বাবা তৈয়াব শেখ রাজমিস্ত্রি। কাজ বর্ধমানে। তাঁকে ফোন করে জানাতেই তিনি কেঁদে ফেলেন এই সুখবরে। তারপর থেকে নসিফার প্রতীক্ষা বাবা কখন বাড়ি ফিরবেন। নসিফা জানিয়েছেন, ‘প্রথম হওয়ার কথা শুনে চমকে গিয়েছি। কেমন যেন ভয় ভয় করছিল।’

নসিফা এখন তাঁর প্রিয় বিষয় ইংরাজি নিয়ে পড়তে চান। কোথায় পড়বেন, কীভাবে পড়বেন তা জানেন না। তাঁর সামনে লক্ষ্য একটাই, প্রিয় বিষয় নিয়ে কলেজে পড়াশুনো করে সফল হওয়া।

মুর্শিদাবাদেরই লালগোলার ছেলে শাহিদ আখতার। তাঁর বাবা আবু বক্করও পেশায় রাজমিস্ত্রি। গরিব পরিবার। শাহিদও কখনও কখনও বাবাকে কাজে সাহায্য করেন। কখনও ছোট খাটো কোনও কাজ জোগাড় করেন। কিন্তু পড়াশুনো ছাড়েননি। তাঁর উৎসাহ দেখে লালগোলা রহমতুল্লাহ হাই মাদ্রাসার শিক্ষকরা সাহায্য করেছেন শাহিদকে। বই দিয়েছেন। টাকা পয়সাও।

তৃতীয় হয়ে শাহিদ তাই বলেছেন, ‘শিক্ষকরা না থাকলে পড়তে পারতাম না। অনেক দিন অভুক্ত থাকতে হতো।’ এভাবেই পড়েছেন এবং সাফল্য পেলেন। শাহিদের সামনে আরও বড় লড়াই অপেক্ষা করে আছে। বাড়িতে সাহায্য করে, নিজের কলেজে পড়ার খরচ জোগাড় করে সফল হওয়ার। খবর: ডয়েচে ভেলে।


সর্বশেষ সংবাদ