এইচএসসি ফল: প্রেরণার উৎস কোথায়?

কয়েকদিন হয়ে গেল এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। অনেকে আশানুরূপ ফলাফল অর্জন করতে পারোনি। আবার অনেকে হয়তো খারাপ ফল করেছো। হতাশায় ভুগছো। তাদের জন্য আমার এ লেখা। রেজাল্ট খারাপ হয়েছে এতে মন খারাপের কিছু নেই। হয়তো ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার কিংবা ভালো কিছু হবার স্বপ্ন দেখতে। রেজাল্ট কাঙ্ক্ষিত হয়নি বলে খুব হতাশ হয়েছ। শিক্ষা জীবনের দ্বিতীয় ধাপে হোঁচট খেয়েছ। মনে হতে পারে জীবনটা এখন তোমার কাছে তুচ্ছ ও অর্থহীন। তোমাকে বলি সময় ও সুযোগ কিন্তু শেষ হয়ে যায়নি। জীবনের বাঁকে পরিবর্তন আসতে সময় লাগে না।

তোমার সদিচ্ছা ও পরিশ্রম তোমাকে স্বপ্নের চেয়ে বড় কিছু এনে দিতে পারে। তুমি বাংলাদেশের ছেলে গুগল ইঞ্জিনিয়ার জাহিদ সবুরের সফল হবার কাহিনী হয়তো শুনেছো। প্রযুক্তি জায়ান্ট গুগলের প্রিন্সিপাল ইঞ্জিনিয়ার (ডিরেক্টর) পদে পদোন্নতি পেয়েছেন বাংলাদেশের তরুণ জাহিদ সবুর। বিশ্বসেরা ইঞ্জিনিয়ারদের অন্যতম জাহিদ পড়াশোনা করেছেন আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে (এআইইউবি)। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স না পেয়ে বাধ্য হয়ে ভর্তি হন সেখানে।কারণ তার রেজাল্ট খুব ভালো ছিল না। সেখানে ভর্তি হওয়ার পর তাকে অনেক কটূ কথা শুনতে হয়েছে। মুদি দোকানে পড়াশোনা করছেন তিনি এমন কটূক্তিও হজম করতে হয়েছে। শুরুতে তার প্রযুক্তি সম্পর্কে তেমন একটা জ্ঞান ছিল না।

তবে স্কুলে থাকতে বিজ্ঞান মেলায় বরাবরই সেরাদের তালিকায় থাকতেন জাহিদ।সারাবিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিনটিতে এখন ফুলটাইম কর্মী আছেন লাখ খানেকের মতো। এদের মধ্যে আড়াইশ’ জনের মতো আছেন প্রিন্সিপাল ইঞ্জিনিয়ার। জাহিদ এদেরই একজন। জাহিদের বেতন এখন ২লাখ ৫০ হাজার ডলার যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ২ কোটির ওপরে ।এই জাহিদ তোমার জন্য হতে পারে অনুপ্রেরণা ও শক্তির উৎস তথা মডেল।

তোমার জুনিয়র দুজন এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল তাদের একজন এক সময়ের শিশু শিল্পী বর্তমানের অভিনেত্রী দিঘী। সে কিন্তু খুব ভালো রেজাল্ট করেনি। কিন্তু অলরেডি সে নিজেকে এক জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছে। অপরদিকে মডেল নায়িকা পূজাও এসএসসি এবার পাস করেছে। রেজাল্ট আহামরি হয়নি। সেও একসময় তার অবস্থান তৈরি করে নেবে। ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হতে না পারলে কষ্টের কিছু নেই। তোমার জন্য অসংখ্য পথ খোলা রয়েছে।

নিজেকে মেলে ধরার জন্য। হয়তো রেজাল্ট তোমার কাঙ্ক্ষিত নাও হতে পারে। হয়তো তোমাদের মধ্যে এমন কোনো প্রতিভা আছে যা তোমাকে সাফল্যের সর্বোচ্চ চূড়ায় আরোহণের সুযোগ এনে দিতে পারে। রেজাল্ট খারাপ মানে সবকিছু শেষ হয়ে যাওয়া নয়। নতুন উদ্দমে শুরু করা।আজই শুরু কর। ইনশাআল্লাহ পারবে। তোমাকে পারতেই হবে। স্রষ্টার কাছে সাহায্য কামনা করে আজ থেকেই নেমে পড়। সাফল্য তোমার হাতে একদিন ধরা দেবেই। স্রষ্টা কখনো পরিশ্রমী মানুষকে বিমুখ করেন না। আজ তোমার যে বন্ধুটি ভালো রেজাল্ট করছে তুমি তার চেয়েও ভবিষ্যতে ভালো পজিশনে যেতে পারো। মনে রাখবে রেজাল্ট তোমার ভবিষ্যৎ পজিশন নির্ধারণ করবে না। তোমার চেষ্টা পরিশ্রম তোমার পজিশন তৈরি করবে। নিশ্চয়ই খরগোশ কচ্ছপের গল্প পড়েছ। তোমার যে বন্ধুটি এ প্লাস পেয়েছে সে আজ নিজেকে চিন্তা চেতনায় আকৃতিতে খরগোশ মনে করতে পারে । তুমি কচ্ছপ হতে পারো। এবার ভাবতে থাকো। আলটিমেটলি কে সফল হয়েছিল। সাফল্য তোমাকেই ছিনিয়ে আনতেই হবে।

বিলগেটসের গল্পতো শুনেছো - ৭৮.৯ বিলিয়ন ডলার মূল্যের সম্পদ নিয়ে সফটওয়্যার জায়ান্ট মাইক্রোসফটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস বিশ্বের শীর্ষ ধনীর স্থান দখল করেছেন ঠিকই, কিন্তু তাঁর সাফল্যের পেছনে অনেক উত্থান পতন আছে; আছে খারাপ সময়ে হতাশা কাটিয়ে আবার নতুন করে সবকিছু শুরু করার উদ্যোগ। বিভিন্ন সাক্ষাৎকার ও ভাষণে তিনি তরুণদের উদ্দেশ্যে চমৎকার সব পরামর্শ দিয়েছেন। বিল গেটস সব সময় একটি কথা বলেন, “এখনই শুরু করে দিন”। কারণ আজ যে আইডিয়া মাথায় নিয়ে আপনি ঘুরছেন, তা যদি বাস্তবায়ন করতে না পা্রেন তাহলে ঠিক কয়েক বছর পর দেখবেন আপনার আইডিয়াটি কাজে লাগিয়ে ঠিকই আরেকজন সফল হয়ে গেছে। তখন আফসোস ছাড়া আর কিছুই আপনার করার থাকবে না।বিলগেটস এক সময় স্কুল থেকে বহিষ্কৃত হন। বিল গেটস বলেন,
' I failed in some subjects in exam, but my friend passed in all. Now he is an engineer in microsoft and i am the owner of microsoft.'তার বন্ধুরা এখন তার প্রতিষ্ঠিত মাইক্রোসফট কোম্পানিতে জব করে।উত্তরাধিকারী কোনো সম্পদ ছাড়াই বিল গেটস নিজের যোগ্যতা ও পরিশ্রমে ৩১ বছর বয়সেই বিলিয়নিয়ার হন। এখন তিনি যদি প্রতিদিন ১০ লাখ মার্কিন ডলার খরচ করেন তবে তার সম্পদ শেষ হতে ২১৮ বছর লেগে যাবে। শুধু মুনাফা থেকেই বিল গেটস প্রতিদিন আয় করেন ১১.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা অক্সফামের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ২৫ বছরের মধ্যে প্রথম লাখ কোটিপতি পেতে যাচ্ছে বিশ্ব। এ সময়ে বিল গেটসের সম্পদের পরিমাণ ছাড়াবে এক ট্রিলিয়ন ডলার (১ ট্রিলিয়ন বা ১ লাখ কোটি)। এত বিপুল সম্পদ থাকার পরও তিনি বিলাসী জীবনযাপন করেন না।

বিশ্বের আরেকজন শীর্ষ বিত্তবানের গল্প শোনো। দরিদ্র পরিবারে জন্ম তার। ছোটবেলা থেকেই টাকা-পয়সা রোজগারের দিকে ঝুঁকেছিলেন তিনি। কাজ করেছেন দাদার মুদি দোকানে। স্কুলপড়ুয়া এই বালক কোমল পানীয় বিক্রি করেছেন, ম্যাগাজিন বিক্রি করেছেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিক্রি করেছেন চুইংগাম, চকলেট। এই হকার বালকটিই অর্থ-সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। তিনি ওয়ারেন বাফেট।জনৈক কবি বলেন,
'সফলতা নয় উজানের কৈ,
সে তো অমাবস্যার চাঁদ,
সফলতা আসে অধ্যবসায়ে
কঠোর শ্রমে দিন রাত ৷
সফল যারা, পুড়েছে তারা,
জ্বলন্ত কয়লায়,
আগুনে পুড়ে সোনা হয়েছে,
দুঃখ পুড়ে ছাই ৷'
এই মার্কিন ব্যবসায়ী এখন বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ ধনী ব্যক্তি। ৮৬ বছর বয়সী বাফেটের এখন মোট সম্পদের পরিমাণ ৭৭.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

তোমরা যে ফেসবুক ইউজ করো তার আবিষ্কারকের কাহিনী বলে আজ শেষ করি। অবসরে জমিয়ে আড্ডা, নতুন ও পুরনো বন্ধুর খোঁজ রাখা আর সব ধরনের আপডেট পেতে প্রথমেই আসে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের নাম।এটি আবিষ্কার করে তিনি বলেছিলেন,By giving people the power to share, we're making the world more transparent.এর ফলে ফেসবুকের জনপ্রিয়তা যেমন হু-হু করে বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে এর প্রধান নির্বাহী মার্ক জুকারবার্গের সম্পদের পরিমাণ। তিনি একজন আমেরিকান কম্পিউটার প্রোগ্রামার ও সফটওয়্যার ডেভেলপার। ২০০৪ সালে কয়েকজন বন্ধু মিলে প্রতিষ্ঠা করেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক। কলেজে পড়াশোনা বাদ দিয়ে ফেসবুকের পেছনে সময় দেওয়া ছিল ১৯ বছর বয়সী এই ছেলেটির কাছে নেশার মতো। মার্ক জুকারবার্গ এখন বিশ্বের চতুর্থ ধনী ব্যক্তি। বর্তমানে তার সম্পদের পরিমাণ ৫৮.৫ বিলিয়ন ডলার। মাত্র ৩২ বছর বয়সে তিনি বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তিদের মধ্যে একজন হন।

উপরের ঘটনাবলী তোমার শক্তির উৎস। ঘুরে দাঁড়ানোর প্রেরণা। তবে আর দেরি নয় আজই শুরু করে দাও তোমার সামনে চলার মিশন।"কাজ শুরু করাই হলো সাফল্যের মূল চাবিকাঠি (পাবলো পিকাসো)

লেখক: শিক্ষক ও গবেষক


সর্বশেষ সংবাদ