এসএসসি’র পর মনে হয়েছিল আর পড়া হবে না: নটরডেমের সজীবের গল্প

  © টিডিসি ফটো

গরিব ঘরে জন্ম। বাবা কৃষক হওয়ায় ছোট্ট, কোমল হাতে উঠেছে কাস্তে-কোদাল। বাবার সাথে কখনো ভোরে বেরিয়েছেন জমিতে হাল দিতে, আবার সকাল ১০টায় বই-খাতা হাতে হাজির হয়েছেন স্কুলে। এভাবে খুব কষ্টে পেরিয়েছেন স্কুলের গণ্ডি।

এসএসসি পাশ করার পর ভেবেছিলেন এই বুঝি তার লেখাপড়া শেষ। ভাগ্রক্রমে গ্রামের ধর্ম যাজকের মাধ্যমে খোঁজ পান ঢাকার নটরডেম কলেজের। অনেক কাটখর পেড়িয়ে শেষ পর্যন্ত ভর্তি হন বাংলাদেশের স্বনামধন্য এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। বলছিলাম চুয়াডাঙ্গা জেলার ডামুরহুদা থানার কারপাস গ্রামের সজীব মণ্ডলের কথা। সজীব নটরডেম কলেজ থেকে এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৪.৯২ পেয়েছে।

জানা গেছে, প্রতিবছর নটরডেম কলেজ দেশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে অস্বচ্ছল কিন্তু মেধাবী এমন ৬০-৬৬ জন শিক্ষার্থীদের বিনা খরচে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ালেখার সুযোগ করে দেন। সজীব তাদের মধ্যেই একজন। এই শিক্ষার্থীদের সবাই ফাদার মার্টিন হলে থাকেন। মার্টিন হলের শিক্ষার্থীদের কলেজের বিভিন্ন কাজ যেমন অফিসে সহায়তা, গাছে পানি দেয়া, কলেজ ক্যাম্পাস পরিষ্কার রাখা এই কাজগুলো করতে হয়।

নটরডেমের কলেজ ক্যাম্পাসে ঝাড়ু দিচ্ছে এক শিক্ষার্থী

সজীব মণ্ডল বলেন, এসএসসি পাশ করার পড় মনে হয়েছিল আর বুঝি আমার পড়ালেখা করা হবেনা। কিন্তু আমাদের গ্রামের ধর্ম যাজকের মাধ্যমে আমি ঢাকার নটরডেম কলেজে ভর্তি হই। প্রথমে যখন নটরডেমে আসি ভেবেছিলাম এখানে টিকতে পারবোনা। কিন্তু এখানকার শিক্ষকদের বন্ধুসুলভ আচরণ, মার্টিন হলের সহপাঠিদের ব্যবহার সব মিলিয়ে দিনগুলো অনেক ভাল কেটেছে। জিওগ্রাফির রাকিব স্যার সব সময় অনেক সাহায্য করতো।

গাছে পানি দিচ্ছে নটরডেমের এক শিক্ষার্থী

তিনি আরও বলেন, হোস্টেলে থাকার দিনগুলি অনেক ভাল ছিল। বিশেষ করে রাতে আমরা যখন সবাই একসাথে আড্ডা দিতাম তখন অনেক মজা করতাম। কাজের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, কাজ করতে আমার কখনো খারাপ লাগেনি। বরং আমার ভালই লাগতো এইটা ভেবে যে আমি কাজ করে আমার পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছি। নটরডেম কলেজ কর্তৃপক্ষকে আমার মতো গরীবদের দেশের সেরা প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখার সুযোগ করে দেয়ার জন্য আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ।

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, কাজ করার বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের কলেজে থাকা থেকে শুরু করে খাওয়া, পরীক্ষার ফি, বই এসব কিছুই দিয়ে থাকে কলেজ কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীদের দিয়ে কাজ করানোর বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজের পরিচালক ফাদার অ্যান্টনি সুশান্ত গোমেজ বলেন, শিক্ষার্থীদের যেন কখনো এটা মনে না হয় যে তারা এখানে ফ্রি পড়াশোনা করছে। তারা যেন এটা মনে করতে না পারে যে আমরা তাদের উপর করুনা করছি। তাই তাদের দিয়ে কলেজের ভেতরেই সামান্য কিছু কাজ করানো হয়।

কলেজের অধ্যক্ষ ফাদার হেমন্ত পিউস রোজারিও বলেন, গরীব এবং সমাজে পিছিয়ে পড়া মেধাবী শিক্ষার্থীরা অর্থের অভাবে যেন হারিয়ে না যায় সেজন্য প্রতিষ্ঠার পর থেকেই নটরডেম কর্তৃপক্ষ এই মেধাবীদের সম্পূর্ণ ফ্রিতে পড়ালেখার ব্যবস্থা করে আসছে। আমরা শিক্ষার্থীদের নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করি যেন তারা দেশের জন্য ভাল কিছু করতে পারে। ভবিষ্যতেও আমরা এই ধারা অব্যাহত রাখবো।

উল্লেখ্য বুধবার প্রকাশিত হয়েছে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল। এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় নটরডেম কলেজ থেকে ৩ হাজার ১৬১ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। তাদের মধ্যে পাশ করেছে ৩ হাজার ১৫০ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ হাজার ২৪৫ জন।


সর্বশেষ সংবাদ