ফি না দিলে অনলাইন ক্লাস থেকে বের করে দিচ্ছে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল!

মঙ্গলবার রাজধানীর উত্তরার দিল্লি পাবলিক স্কুলের (ডিপিএস) ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা মানববন্ধন করেছেন
মঙ্গলবার রাজধানীর উত্তরার দিল্লি পাবলিক স্কুলের (ডিপিএস) ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা মানববন্ধন করেছেন  © সংগৃহীত

করোনাভাইরাস মহামারি সংক্রমণের সময়েও নিয়মনীতির কোনো ধরনের তোয়াক্কা করছে না দেশের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলো। তারা অভিভাবকদের চাপ দিয়ে নিয়মিত টিউশন ফি আদায় করছে। এমনকি নির্ধারিত সময়ে ফি দিতে ব্যর্থ হলে জরিমানাও আদায় করা হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে স্কুলগুলোর এমন কর্মকাণ্ডে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা।

জানা গেছে, করোনা মহামারীর মধ্যে টিউশন ফি দিতে না পারায় শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাস থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। রাজধানীর কয়েক ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ রয়েছে। কর্তৃপক্ষের এমন আচরণের প্রতিবাদে বিক্ষোভও করেছেন অভিভাবকরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেসরকারি এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটির বিবিএর এক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, ছয় ধাপে প্রতি সেমিস্টারের টিউশন ফি নেওয়া হচ্ছে। ফি নির্ধারিত সময়ে পরিশোধ না করলেই ৬০০ টাকা জরিমানা নেওয়া হচ্ছে। তবে করোনার কারণে টিউশন ফিতে কিছু ছাড় দিয়েছে কর্তৃপক্ষ বলেও জানান তিনি।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, করোনার মধ্যে বকেয়া টিউশন ফি ছাড়াও জরিমানা আদায় করছে রাজধানী ঢাকার প্লে পেন স্কুল। লেভেল এইট-এর এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, করোনার কারণে লেভেল সেভেনে থাকাকালীন প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এপ্রিল, মে ও জুন মাসের ফি পরিশোধ করা হয়নি। সম্প্রতি দফায় দফায় ফি পরিশোধে তাগিদ দিয়ে মেসেজ পাঠানো হয়। ব্যাংকে ফি জমা দিতে গেলে জানানো হয়, জরিমানা ছাড়া ফি গ্রহণ করা হবে না।

সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী, করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় মাসিক বেতন ও অন্যান্য ফি প্রদানে অভিভাবকদেরকে চাপ প্রয়োগ করা যাবে না। সম্প্রতি ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক মোহাম্মদ আবুল মনছুর ভূঁঞা স্বাক্ষরিত জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললে বকেয়াসহ মাসিক বেতন আদায় করতে হবে।

ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষা বোর্ডের জন্য নিবন্ধিত কেমব্রিজ (এ লেভেল, ও লেভেল) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা পর্ষদ ও অধ্যক্ষদেরকে এ চিঠি পাঠিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলো এ নির্দেশনার কোনো তোয়াক্কাই করছে না। এমনকি কিছু স্কুল টিউশন ফি পরিশোধ করতে না পারলে নিচ্ছে জরিমানা।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এ ধরনের সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছেন অভিভাবকরা। এর আগে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের টিউশন ফি ৫০ শতাংশ মওকুফ চেয়েছেন উত্তরার দিল্লি পাবলিক স্কুল (ডিপিএস) অভিভাবকরা। এ দাবিতে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন তারা। রাজধানীর সানিডেল স্কুলও ফির পাশাপাশি জরিমানা আদায় করছে, এমন অভিযোগ উঠেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক বলেন, করোনা পরিস্থিতিতেও বিলম্ব ফি গ্রহণ করায় অভিভাবকরা বিপদে পড়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে জানতে চাইলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জুনিয়র সেকশন ওয়ানের এক শিক্ষক কোনো সদুত্তর দেননি। জরিমানা আদায় করছে কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও।

অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, মহামারির সময়ে টিউশন ফির জন্য চাপ দেওয়া অনুচিত। জরিমানা আদায় একেবারেই অনৈতিক। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে খরচ কমেছে করোনার সময়ে। সেজন্য টিউশন ফি আদায়ে নমনীয় হতে হবে।

তিনি বলেন, মতিঝিলে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজেও টিউশন ফি আদায়ে চাপ দেওয়া হচ্ছে। অভিভাবকদের টেলিফোন করা হচ্ছে ফি পরিশোধ করতে। এটিও বন্ধ হওয়া উচিত বলে করেন তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ