অনলাইন ক্লাসে কেমন অভিজ্ঞতা হাবিপ্রবির?

করোনা সংক্রমণ মোকাবেলায় গত মার্চ মাস হতে বন্ধ রয়েছে দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। পাঁচ মাসের অধিক সময় ধরে সকল ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় তীব্র সেশনজটের মুখে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষা মন্ত্রণালায় ও ইউজিসি করোনাকালীন সময়ে অনলাইন ক্লাস চালিয়ে যেতে বললেও নানা প্রতিবন্ধকতায় তা থমকে দাঁড়িয়েছে। অনলাইন ক্লাস নিয়ে কয়েক দফা মিটিং করলেও কার্যত কর্তৃপক্ষের কোন পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিন্ধান্তের অপেক্ষায় না থেকে কয়েকটি ডিপার্টমেন্ট নিজস্ব উদ্যোগে অনলাইন ক্লাস চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বেশিরভাগ ডিপার্টমেন্ট-ই নানা অজুহাতে অনলাইন ক্লাস নিচ্ছেন না বলে কয়েকটি বিভাগের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে এমনটাই অভিযোগ পাওয়া গেছে।

কৃষি অনুষদের লেভেল-২ সেমিস্টার-২ এর শিক্ষার্থী নাজমুল হোসেন সাগর জানান, এই বন্ধে একাডেমিক কার্যক্রম এগিয়ে নিতে অনলাইন ক্লাসের বিকল্প নেই। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এই যুগে সবকিছুই যেখানে অনলাইন নির্ভর। সেখানে ক্লাস কেনো নয়। তবে অনেকের স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট না থাকা নিয়ে সমস্যা থাকতে পারে কিন্তু এই সংখ্যাটা খুবই অল্প। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সাহায্য করতে পারে। আবার ইন্টারনেটের ধীরগতি নিয়ে অভিযোগ বেশ পুরোনো। কিন্তু কেউ যদি চায় সে ডাউনলোড করে পরে দেখে নিতে পারবে।

তাই আমার কাছে মনে হয়, সেশনজট কমানোর জন্য আর দেরি না করে দ্রুতগতিতে অনলাইন ক্লাস শুরু করা উচিৎ। ব্যবহারিক ক্লাসেরও বিষয়গুলো আলোচনা করা যেতে পারে। হাতেকলমে দেখার বিষয়গুলো ভার্সিটি খোলার পর দেখিয়ে খুব দ্রুত শেষ করে দিতে হবে। কিছু কিছু কোর্স আছে যেগুলো খুব একটা দরকারি নয় সেগুলো বাদ দেয়া যেতে পারে।

এগ্রিকালচার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের লেভেল-৪ সেমিস্টার-২ এর শিক্ষার্থী মো: আবু তালহা জানিয়েছেন, করোনায় দীর্ঘ ৫ মাসের মত ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় সেশন জটের ধারা বৃদ্ধি পেয়েছে। আরো কতদিন বন্ধ থাকবে তা আমরা এখনো জানি না। এমতাবস্থায় অনলাইনে ক্লাসের মাধ্যমে রানিং সেমিস্টারের সকল ক্লাসগুলো শেষ করে রাখা উচিত বলে আমি মনে করি। যাতে ভার্সিটি খুললে শুধু পরীক্ষা নিয়ে সেমিস্টারগুলো শেষ করে দেওয়া যায়। এতে করে ভার্সিটি খুললে ক্লাস করার জন্য আর সময় নষ্ট হবে না। অনেকেই বলতে পারেন, যারা টেকনিক্যাল বিষয়ে পড়াশুনা করছে তাদের ল্যাব হতে কলমে না করলে হবে না, তাদের জন্য বলতে চাই, যেই ল্যাবগুলো হতে কলমে ছাড়া সম্ভব না সেইগুলো শুধু রেখে বাকিগুলো শেষ করে ফেলি। পরবর্তীতে ভার্সিটি খুললে সর্বোচ্চ ১ মাসের মধ্যে সেই ক্লাসগুলো শেষ করে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা করা যায়। এতে সেশনজট অনেকাংশে কমে আসবে।

কৃষি অনুষদের যারীন শাইমা বলেন, এখনো যেহেতু আমরা করোনা মুক্ত হতে পারিনি তাই সব কার্যক্রম অনলাইনের মাধ্যমে আগানো উচিত, কারণ ক্যাম্পাসে খুললে সোস্যাল ডিস্ট্যান্ট মেইনটেইন করে চলা সম্ভব হবে না। মোটামুটি অনেকেই আমরা ইন্টারনেট, সোসাল মিডিয়া ব্যবহার করি। তবে অনেকের ডাটা কেনার সামর্থ্য নেই, তাদের দিকেও খেয়াল করতে হবে। সবার পারিবারিক অবস্থা তো একই রকম না। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আরও একটু রেস্পন্সিবল হওয়া উচিত। যদিও আমরা ক্লাস করতে আগ্রহী তথাপি প্রশাসন এখনো একটা সিদ্ধান্তে আসতে পারছে না, এতে আমরা আরো পিছিয়ে যাচ্ছি।

ইংরেজি বিভাগের লেভেল-৩, সেমিস্টার-২ এর ছাত্রী সাহিনুর আক্তার (এপি) জানান, যেহেতু করোনার কারণে বাসার বাইরে বের হতে পারছি না তাই অনলাইনে সব কাজ করা ছাড়া আমি কোন ওয়ে দেখি না। যদিও আমার পক্ষে অনলাইন ক্লাসে জয়েন করা সম্ভব না। কারণ, আমার এলাকায় নেটওয়ার্ক এর অবস্থা খুব বাজে। সত্যি বলতে, আমি এইটা নিয়ে খুব ডিপ্রেশনে আছি। আমার ফ্রেন্ডদেরকেও বলছি। তাই আমি চাইবো আমাদের সেমিস্টার পরীক্ষার রেজাল্টগুলো ২/৩ মাসের মধ্যে এবং ৬ মাসের মধ্যেই সেমিস্টার শেষ করে ফেলতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক। এখন পর্যন্ত কোন সেমিস্টারই ৬ মাসে শেষ করতে পারিনি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা.মোঃ ফজলুল হক (মুক্তিযোদ্ধা) জানান, ইতোমধ্যে কিছু কিছু ডিপার্টমেন্ট অনলাইন ক্লাস শুরু করেছেন। আর কিছু ডিপার্টমেন্ট টেকনিক্যাল সমস্যার জন্য হয়তো ক্লাস শুরু করতে পারিনি। সেসব বিষয় নিয়েও আমরা সবার সাথে কথা বলেছি, চেষ্টা করছি যত দ্রুত সম্ভব সমাধান করা যায়। এক্ষেত্রে সবার আন্তরিকতা ও আগ্রহ থাকলে দ্রুত এই সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।


সর্বশেষ সংবাদ