খুঁড়িয়ে চলছে বশেমুরবিপ্রবির অনলাইন ক্লাস

বশেমুরবিপ্রবি
বশেমুরবিপ্রবি  © ফাইল ফটো

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী গত ৩০ জুন অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করার ঘোষণা দেয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি) কর্তৃপক্ষ। সে হিসেবে ইতোমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রায় ২৯টি বিভাগে শুরু হয়েছে অনলাইন ক্লাস।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ডিভাইস সংকট, আর্থিক সংকট, নেটওয়ার্ক সমস্যা এবং নির্দিষ্ট ক্লাস রুটিন না থাকাসহ বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী এই অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারছে না। ফলে অনেকটাই খুঁড়িয়ে চলছে বশেমুরবিপ্রবির অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম।

অনলাইন ক্লাসের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী এস এম আসিফ সিদ্দীক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, ‘‘আমি গ্রামে থাকায় ঝড়-বৃষ্টি হলে নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারি না। শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশই আমার মত এই সমস্যার ভুক্তভোগী। এছাড়া আর্থিক সমস্যা এবং ডিভাইস সমস্যার কারণেও অনেক শিক্ষার্থী ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারছে না।’’

আসিফ বলেন, ‘‘অনলাইন ক্লাসকে কার্যকর করতে হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অবশ্যই এ সকল সমস্যা দূর করতে হবে এবং দরিদ্র শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে ক্লাসে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া ক্লাসগুলো রেকর্ডিংয়ের ব্যবস্থা রাখতে হবে। যাতে কেউ ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে না পারলেও পরবর্তীতে দেখার সুযোগ পায়।’’

অনেকটা একই সমস্যা উল্লেখ করে আইন বিভাগের শিক্ষার্থী উজ্জ্বল মন্ডল বলেন, ‘‘নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে আমাকে বাসার বাইরে গিয়ে ক্লাস করতে হয়। কিন্তু ক্লাসের কোনো নির্দিষ্ট রুটিন না থাকায় আমাকে সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। এছাড়া কিছুদিন আগে আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এই মুহূর্তে উচ্চমূল্য দিয়ে ইন্টারনেট কোনও সম্ভব হচ্ছে না। সবমিলিয়ে আমার পক্ষে অনলাইন ক্লাসে নিয়মিত অংশগ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না।’’

এ সময় উজ্জ্বল প্রশাসনের সহায়তা দাবি করে বলেন, ‘‘ইতিমধ্যে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় তাদের শিক্ষার্থীদের সহায়তা করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আমরা চাই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ও এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করুক এবং আমাদের ক্লাসে অংশগ্রহণ করার সুযোগ দিক।’’

অনলাইন ক্লাসের অভিজ্ঞতা জানিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমাকে ক্লাস করার জন্য বাসা থেকে প্রায় এক কিলেমিটার দূরের মাঠে যেতে হয়। ফলে আমার জন্য নিয়মিত ক্লাসে অংশগ্রহণ কারাটা বেশ দুঃসাধ্য বিষয়। এছাড়া ক্লাস রেকর্ডের ব্যবস্থা না থাকায় আবহাওয়াজনিত সমস্যার কারণে ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে না পারলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস মিস হয়ে যায়।’’ এ সময় অন্যান্যদের মত এই শিক্ষার্থীও সমস্যা সমাধানে প্রশাসনকে উদ্যোগ গ্রহণ করার আহ্বান জানান।

তবে শুধু শিক্ষার্থীরাই নন, সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন শিক্ষকরাও। ফার্মেসী বিভাগের চেয়ারম্যান মো. শফিকুল ইসলাম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘‘শিক্ষার্থীদের মত অনেক শিক্ষকরাও গ্রামে অবস্থান করছেন। ফলে তারাও নেটওয়ার্ক সমস্যার শিকার হচ্ছেন। আবার আমাদের বিভাগটি ল্যাবনির্ভর হওয়ায় অনলাইনে ক্লাস নেয়াটা বেশ চ্যালেঞ্জিং। তবুও আমরা চেষ্টা করছি থিওরিনির্ভর ক্লাসগুলো নেয়ার। কিন্তু সবচেয়ে বড় বাধা হলো বিভিন্ন সমস্যার কারণে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম।’’

শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির বিষয়টি উল্লেখ করে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান এবং শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মো. হাসিবুর রহমান বলেন, ‘‘আমরা কিছুদিন পরীক্ষামূলকভাবে অনলাইনে ক্লাস নিয়েছিলাম। কিন্তু নেটওয়ার্ক সমস্যা, আর্থিক সমস্যাসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে অর্ধেকের বেশি শিক্ষার্থীই ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে অনলাইন ক্লাস কতটা ফলপ্রসূ হবে সেটি ভাবনার বিষয়।’’

এদিকে শিক্ষার্থীদের শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত না করতে পারায় এখানে অনলাইন ক্লাস শুরু করেনি লোকপ্রশাসন বিভাগ। লোকপ্রশাসন বিভাগের চেয়ারম্যান বিতান খানম জানিয়েছেন শতভাগ শিক্ষার্থীর উপস্থিতির সুযোগ নিশ্চিত না করা পর্যন্ত তারা অনলাইন ক্লাস শুরু করবে না।

এসকল সমস্যার বিষয়ে বশেমুরবিপ্রবির উপাচার্য (রুটিন দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো. শাহজাহান বলেন, ‘‘আমরা শিগগিরই এ বিষয়ে চেয়ারম্যানদের নিয়ে একটি মিটিং আয়োজন করব এবং সমস্যাসমূহ সমাধানের চেষ্টা করব।’’


সর্বশেষ সংবাদ