সংকটে পাশে নেই নোবিপ্রবি প্রশাসন, অনলাইন ক্লাসের চাপে শিক্ষার্থীরা

  © ফাইল ফটো

মেস ভাড়া না দিতে পারায় বাড়ির মালিকের চাপ প্রয়োগ এবং পারিবারিকভাবে আর্থিক অনিশ্চয়তায় রয়েছে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা। মেস সংকট নিয়ে বারবার প্রশাসনকে জানানো হলেও দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। এদিকে শিক্ষার্থীদের এই সংকটের কোন সমাধান না করেই শিক্ষকরা অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষা নেওয়ার চাপ প্রয়োগ করে আসছে বলে অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক বিভাগের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, এই মহামারীর সময়ে শিক্ষার্থীদের মানসিকতার কথা চিন্তা না করেই অনলাইন ক্লাসের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছেন শিক্ষকরা। তারা করোনায় শিক্ষার্থীদের বাড়িভাড়া সংকট সমাধন না করে অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষা নেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করছেন।

এদিকে অনলাইন ক্লাসে উপস্থিত হওয়া স্বল্প সংখ্যক শিক্ষার্থী নিয়েই চলমান সেমিস্টারের কোর্স সম্পন্ন করছে বেশ কয়েকটি বিভাগ। অনলাইনে কোর্স সম্পন্ন করে ক্যাম্পাস খুললেই পরীক্ষা নেওয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন তারা।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী নানা সমস্যার কারণে অনলাইন ক্লাসে অনুপস্থিত থাকলেও তাদের কথা চিন্তা না করেই অনলাইনে ক্লাস নিয়ে কোর্স সমূহ সম্পন্ন করে দিয়েছে কয়েকটি বিভাগ। ফলে সকল শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ না থাকায় অসচ্ছল ও গ্রামাঞ্চলে থাকা শিক্ষার্থীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।

গ্রামে থাকা একাধিক শিক্ষার্থী জানিয়েছে, গ্রামের থাকায় নিজ বাড়িতে ক্লাসে অংশগ্রহণ করার মত ইন্টারনেটের  প্রয়োজনীয় গতি পাওয়া যায় না। ফলে বাড়ির বাইরে নিকটস্থ বাজারে অথবা খোলা মাঠে গিয়ে অনেকে ক্লাসে অংশ নিতে হচ্ছে। এভাবে তাদের পক্ষে ক্লাসে অংশ নেওয়া অসম্ভব।

করোনার ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে চলে যাওয়া এসব শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, স্বল্প ছুটির কারণে তারা বই-খাতাসহ প্রয়োজনীয় শিক্ষাসামগ্রী ছাড়াই বাড়ি আসছেন। কিন্তু পরবর্তীতে একের পর এক সাধারণ ছুটি বাড়তেই থাকে। ফলে চাইলেই একাডেমিক শিক্ষাসামগ্রী ছাড়া পড়াশুনা করতে পারছে না তারা।

এসব শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শিক্ষকরা নিজেদের ইচ্ছামত ক্লাস শিডিউল দিয়ে দিনে ২/৩টা করেও ক্লাস নিচ্ছেন। যা তাদেরকে নিয়মিত হয়রানি করার শামিল। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী অংশ নিতে পারছেন না।

যথাযথ ডিভাইস না থাকা কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, যেখানে ক্লাসে অংশ নেওয়া দুস্কর, সেখানে কিছু শিক্ষক অনলাইনেই পরীক্ষা নিতে চাচ্ছেন। যাতে আমাদের চরম ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সোনিয়া আফরিন এ্যালী ২০১৬-১৭ বর্ষের অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। কিছু শিক্ষার্থী সমস্যার কথা জানালেও তিনি যারা অংশ নিতে পারবে তাদের নিয়েই পরীক্ষা নেওয়ার কথা জানিয়ে দিয়েছেন।

তবে এ বিষয়ে সোনিয়া আফরিন এ্যালী বলেন, একাডেমিক কাউন্সিল ও বিভাগীয় মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নিচ্ছি। এতে আমরা অধিকাংশ শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ পাচ্ছি। শিক্ষার্থীদের বলে দেয়া হয়েছে যে ক্লাসগুলো বুঝতে সমস্যা হবে সেগুলো পরে তারা ব্যক্তিগতভাবে বুঝে নিতে পারবে।

তিনি জানান, ইন্টারনেট সমস্যার কারণে যারা ঠিকমত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না তাদের জন্য ভিন্ন ব্যবস্থা করা হবে।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসী ও শিক্ষা প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনে ইন্টারনেট খরচ বহন করারও ঘোষণা দিয়েছেন কোন কোন শিক্ষক। তবে নেট স্পিড কম থাকায় তারপরও কিছু শিক্ষার্থীর সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এবং ফার্মেসী বিভাগে অতিরিক্ত ক্লাসের চাপ রয়েছে বলেও জানায় শিক্ষার্থীরা। এছাড়া ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের এক শিক্ষক ভিডিও আপলোড দিয়ে কোর্স এগিয়ে নেওয়ার কথা জানান। সমস্যার অংশটা লাইভে এসে শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের আলোকে বুঝিয়ে দিবেন বলে জানিয়েছেন। তবে এই বিভাগের অন্য শিক্ষক আল আমীন শিকদার নিয়মিত ক্লাস নিয়ে কোর্স এগিয়ে নিচ্ছেন। এতে অনেক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করতে পারেছে না। এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে আল আমীন শিকদার বলেন, একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা অনলাইন ক্লাস চালিয়ে নিচ্ছি যাতে শিক্ষার্থীরা সময়টা কাজে লাগাতে পারে। এর মধ্যে যে ক্লাসগুলো বুঝতে সমস্যা হবে সেগুলো পরবর্তীতে সরাসরি নিয়ে নেওয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতি, ব্যবসায় প্রশাসন, আইন, অণুজীববিজ্ঞান, বিএমবি বিভাগের শিক্ষার্থীরা অনলাইন ক্লাস নিয়ে রীতিমতো হয়রানির মধ্যে রয়েছেন বলে জানায়। অনলাইনেই তাদের কোর্স সম্পন্ন করার চেষ্টা করছেন এসব বিভাগের শিক্ষকরা। এরমধ্যে কোন কোন বিভাগ ক্যাম্পাস খুললেই পরীক্ষা নেওয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে রীতিমতো চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছে শিক্ষার্থীরা।

এদিকে শিক্ষার্থীদের একাংশ অনলাইনে ক্লাস চালিয়ে নেওয়ার পক্ষে। সেশনজট এড়াতে নিয়মিত কোর্স সম্পন্ন করে সেমিস্টার পার করতে চান তারা। তবে সময়কে কাজে লাগাতে নিয়মিত অনলাইন ক্লাস চান বেশকিছু শিক্ষার্থী। এতে ভিডিও আপলোড দিয়ে এবং ম্যাটারিয়ালস দিয়ে কোর্স এগিয়ে নেওয়ার পক্ষে মত দেন তারা। এক্ষেত্রে তারা বলছেন, যেসব ক্লাস বুঝতে শিক্ষার্থীদে সমস্যা হবে, সেসব ক্লাস যেন ক্যাম্পাস খুললে আবার পুনরায় নেওয়া হয়।

সংকটের অনলাইন ক্লাসের বিষয়ে নোবিপ্রবি কোষাধ্যক্ষ ও ব্যবসা অনুষদের ডিন অধ্যাপক এম ফারুক উদ্দীন বলেন, সর্বশেষ একাডেমিক কাউন্সিলে ক্লাস শুরু করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিভাগগুলোকে ১৫ দিন পর্যবেক্ষণ করে শিক্ষার্থীদের সার্বিক অবস্থার কথা জানাতে বলা হয়েছিল। সেই আলোকে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি জানান, পরিস্থিতির শিকার হয়ে ক্লাস-পরীক্ষায় অনুপস্থিত থাকা শিক্ষার্থীদের কথা অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিবেচনা করবে।


সর্বশেষ সংবাদ