আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত বশেমুরবিপ্রবির দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী

  © ফাইল ফটো

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খুলনা এবং সাতক্ষীরা জেলায় বসবাসরত এসকল শিক্ষার্থীদের অনেকেই হারিয়েছেন তাদের ঘর-বাড়ি সহ উপার্জনের একমাত্র অবলম্বনটুকুও।

বাংলা দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার আনওয়ারুল ইসলাম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘‘ঝড় আমাদের সবকিছু কেড়ে নিয়েছে। বসবাসের একমাত্র বাড়িটি থেকে শুরু করে মাছের ঘের, ক্ষেতের ফসল কিছুই আর নেই।’’ নিজেদের দুরবস্থার কথা উল্লেখ করে এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘‘বাড়ি ভেঙে যাওয়ায় সাতদিন যাবৎ পরিবার নিয়ে রাস্তায় থাকছি। সারাদিন রাস্তায় থেকে রাত হলে একটা ভবনের এক কোণে একটু আশ্রয় নেই।’’ এই শিক্ষার্থী আরো বলেন, ‘‘আমরা বাবা দৈনিক মজুরি ভিত্তিক কাজ করতেন। করোনার কারণে প্রায় ২ মাস তিনি কোনো কাজ করতে পারেননি আর আম্পান আমাদের শেষ অবলম্বনটুকুও কেড়ে নিলো। আমরা জানিনা পরবর্তী দিনগুলোতে কিভাবে বেঁচে থাকবো।’’

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী, সাতক্ষীরার শ্যামনগরের ইস্রাফিল হোসাইন বলেন, ‘‘আমাদের এলাকার মানুষের আয়ের বড় উৎস মাছের ঘের। কিন্তু আম্পানের প্রভাবে মাছের ঘের থেকে শুরু করে সবজির ক্ষেত সবকিছুই ভেসে গেছে। করোনা সংকটের মাঝেই এই ঝড় আমাদেরকে এক নতুন দুরাবস্থায় ফেলে দিয়েছে।’’

শিক্ষার্থীদের এই দুঃসময়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতা প্রত্যাশা করে বশেমুরবিপ্রবির সাতক্ষীরা জেলা ছাত্র কল্যাণ সমিতির সভাপতি নাহিদ হাসান আ-কুরাইশী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘‘আমাদের সাতক্ষীরা উপজেলায় বশেমুরবিপ্রবির প্রায় ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে এবং তাদের মধ্যে পঞ্চাশের অধিক শিক্ষার্থী ঘূর্ণিঝড়ে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। করোনার সময়ে আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মানবিকতার উদাহরণ পেয়েছি। আমরা আশা করি তাঁরা করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের মত আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদেরও পাশে দাঁড়াবেন।’’

সাতক্ষীরা জেলার শিক্ষার্থীদের মত অনেকটা একই অবস্থা খুলনার কয়রা উপজেলার শিক্ষার্থীদের।

কৃষি বিভাগে অধ্যয়নরত কয়রা উপজেলার মেফতাহ উদ্দিন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘‘আমাদের বাড়িতে প্রতিদিন জোয়ারের পানি চলে আসে। শুধু আমাদের বাড়িই নয় আশেপাশে যত বাড়িঘর রয়েছে প্রায় সবার বাড়িই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া মাছের ঘের ডুবে গেছে, ক্ষেতের ধান, সবজিও ভেসে গেছে। এককথায় আম্পান আমাদের সবকিছু কেড়ে নিয়েছে।’’

একই অবস্থা উল্লেখ করে ফার্মেসী বিভাগে অধ্যয়নরত অমিয় মন্ডল দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘‘আমাদের বাড়ি, মাছের ঘের, ক্ষেতের ফসল সবকিছু ভেসে গিয়েছে। সাতদিন পর্যন্ত পরিবার নিয়ে রাস্তায় ছিলাম আর এখন চেষ্টা করছি সবকিছু স্বাভাবিক করতে। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে সেটাও খুব কঠিন হয়ে উঠেছে।’’

বশেমুরবিপ্রবির খুলনা জেলার শিক্ষার্থীদের নিয়ে গড়ে ওঠা সংগঠন খুলনা জেলা সমিতি'র সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনরত এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘‘কয়রায় বশেমুরবিপ্রবির প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে এবং তাদের প্রায় সবাই ই আম্পানে কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কেউ কেউ খুবই দূরাবস্থায় রয়েছে। আমরা আশা করি মানবিক দিক বিবেচনা করে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এসকল শিক্ষার্থীদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে।’’


সর্বশেষ সংবাদ