বাড়ি ভাড়া আদায়ে অনড় মালিকরা, বিপাকে নোবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা

  © ফাইল ফটো

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় দীর্ঘদিন ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় নোয়াখালীতে মেস-বাসায় থাকছেন না নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা। আয়ের উৎস বন্ধ ও বাসায় না থাকায় ভাড়া পরিশোধের ব্যাপারে সিদ্ধান্তহীনতায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। এদিকে ভাড়া আদায়ের সিদ্ধান্তে অনড় বাড়ির মালিকরা। মাস শেষ না হতেই তারা নিয়মিত চাপ প্রয়োগ করছেন শিক্ষার্থীদের।

করোনা মোকাবিলায় গত ১৭ মার্চ থেকে নোবিপ্রবি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। অন্য সময় ক্যাম্পাস ছুটি থাকলেও যাদের আয়ের উৎস কোচিং-টিউশনি, তাদের অনেকই থেকে যান। কিন্তু এবার করোনার প্রকোপ থেকে বাঁচতে বাধ্য হয়ে সকলেই নোয়াখালী ত্যাগ করে নিজ বাড়িতে চলে গেছেন। ফলে অধিকাংশ শিক্ষার্থীর আয়ের উৎস সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে।

এদিকে যে শিক্ষার্থীরা পরিবার থেকে সামান্য অর্থ পেয়ে কোনমতে নিজের খরচ চালিয়ে নিচ্ছিলেন, লকডাউনের ফলে তাদের পরিবার দূরবস্থায় পড়ায় সেই সাপোর্টও বন্ধ হয়ে গেছে। তারপরও বাসা ভাড়া আদায়ের ব্যাপারে অনড় বাড়ির মালিকরা, নিয়মিত ভাড়া আদায়ে চাপও প্রয়োগ করছেন তারা। ফলে এই সঙ্কটে চরম বিপাকে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী।

বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় না নেয়ায় এবং নিয়মিত চাপ প্রয়োগ করায় বাড়ির মালিকদের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নোবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফাইয়াজ আহমেদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, মার্চের মাঝামাঝিতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা হওয়ার পরপরই শিক্ষার্থীরা নোয়াখালী ত্যাগ করে যার যার বাসায় চলে যায়। পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হতে থাকায় বন্ধও বাড়তে থাকে।

তিনি বলেন, যারা টিউশনি করে নিজের খরচ চালানোর পাশাপাশি বাসায়ও টাকা পাঠাতো, লকডাউনের মধ্যে তাদের টিউশনি থেকে আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। আবার যারা পরিবার থেকে টাকা নিয়ে চলে, তাদের অনেকের পরিবার অর্থকষ্টে আছে। কিন্তু নোয়াখালীর বাড়িওয়ালারা ক্রমাগত চাপ দিচ্ছে ভাড়া পাঠানোর জন্য। এতে অনেকে বিপাকে পড়েছে।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, দ্রুত ভাড়া পরিশোধ না করলে মালামাল বের করে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন মালিকরা। জেলা প্রশাসন থেকে বাড়িওয়ালাদেরকে অনুরোধ করা হয়েছে, তারা যাতে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি মানবিক আচরন করেন। কিন্তু হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া আর কেউই এই অনুরোধ গ্রাহ্য করছেন না। এ ভোগান্তি লাঘবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জেলা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করে লিখিত নোটিশ দেয়ার ব্যবস্থা করতে অনুরোধ করেছেন তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সরোয়ার জাহান আরাফাত দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, দিনদিন পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। কবে নাগাদ স্বাভাবিক অবস্থা হবে, ঠিক নেই। মেস ভাড়া নিয়ে আমরা শিক্ষার্থীরা চরম বিপাকে পড়েছি। বাড়িওয়ালা বাসা ভাড়া দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। একদিকে পরিবারের আর্থিক সংকট অন্যদিকে বাড়িওয়ালাদের চাপ। এ ব্যাপারে প্রসাশনের যথাযথ হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

বিষয়টি জানানো হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, এ ব্যাপারে আমরা স্থানীয় প্রশাসন এবং সংসদ সদস্যদের সাথে আলোচনা করেছি। এই সঙ্কটের মধ্যে শিক্ষার্থীদের যেন কোনভাবেই হেনস্তা করা না হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকেও ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের থেকে নাম্বার সংগ্রহ করে বাড়িওয়ালার সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে। কোন বাড়িওয়ালা অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের হেনস্থা করলে তার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় ব্যাবস্থা গ্রহণ করবে।

তবে কিছু বাড়িওয়ালার এই আয় দিয়েই সংসার চালাতে হয় উল্লেখ করে প্রক্টর বলেন, যে শিক্ষার্থীরা সচ্ছল রয়েছেন, তারা যেন নিয়মিত বাসা ভাড়া পরিশোধ করে দেয়। এছাড়া আংশিক টাকা পাঠিয়ে বাড়িওয়ালার সাথে সাময়িক মীমাংসা করা যেতে পারে। মেসে থাকা সচ্ছল শিক্ষার্থীরা অসচ্ছলদের ছাড় দিয়ে যেন মীমাংসা করে নেয়। আর প্রকৃত অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে ক্যাম্পাস খোলার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যাবস্থা গ্রহণ করবে বলেও জানান তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ