মুজিববর্ষে সংকট কাটবে বশেমুরবিপ্রবির!

  © ফাইল ফটো

ক্লাস রুম ও ল্যাব সংকট, বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে শিক্ষার্থীদের একের পর এক আন্দোলন, ‘চলতি’ উপাচার্যের সীমাবদ্ধতা, স্থায়ী শিক্ষক সংকটসহ বর্তমানে নানা সমস্যায় জর্জরিত বঙ্গবন্ধুর নিজের নাম ও জেলায় অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি)। মুজিববর্ষে এসব সংকট কাটিয়ে উঠবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

প্রসঙ্গত, আজ পর্দা উঠল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে বছরব্যাপী আয়োজনের। বছরব্যাপী নানান আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হবে মুজিববর্ষ।

জানা যায়, প্রতিষ্ঠার প্রায় এক দশক পার হলেও এখনও বিশ্ববিদ্যালয়টির মূল ফটক নির্মিত হয়নি। ৩৪টি বিভাগ এবং তিনটি ইনিস্টিটিউটের মধ্যে তিনটি বিভাগ এবং একটি ইনস্টিটিউট চলছে কোনো নিয়োগকৃত শিক্ষক ছাড়াই। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন কর্তৃক প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:৪০, যা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অধ্যাপক সংখ্যাও মাত্র ৬ জন, যার মধ্যে ৫ জনই চুক্তিভিত্তিক অধ্যাপক।

এছাড়া প্রায় ২০টিরও অধিক বিভাগের পর্যাপ্ত ক্লাসরুম নেই। ক্লাসরুম সংকটে এসকল বিভাগের শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্যারেজসহ বিভিন্ন টিনশেড ভবনে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ক্লাস করতে হয়। এর পাশাপাশি ল্যাবরুম সংকট রয়েছে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, কৃষি বিভাগ, লাইভস্টক সায়েন্স এন্ড ভেটেরেনারি বিভাগসহ প্রায় ১০টি বিভাগে।

সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী জানান, প্রায় পাঁচ সেমিস্টার পার হলেও তারা ল্যাবে কাজ করার সুযোগ পাননি। এদিকে এত সমস্যায় জর্জরিত বিশ্ববিদ্যালয়টির সমস্যার তালিকায় নতুন যুক্ত হয়েছে নিয়মিত উপাচার্য না থাকা। দুর্নীতি, স্বেরাচারী আচরণসহ নানাবিধ অভিযোগে আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সাবেক উপাচার্যের পদত্যাগের পর প্রায় পাঁচ মাস পার হলেও বিশ্ববিদ্যালয়টিতে এখন পর্যন্ত কোনো নতুন উপাচার্য নিয়োগ দেয়া হয়নি। ফলে চলতি উপাচার্যের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতার কারণে নতুন শিক্ষক নিয়োগসহ অনেক সমস্যার সমাধানই আটকে আছে।

শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সাবেক উপাচার্যের পদত্যাগের পর বিভিন্ন দাবিতে এখন পর্যন্ত প্রায় ৯টিরও অধিক আন্দোলন সংগঠিত হলেও চলতি উপাচার্যের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতার কারণে সমস্যাগুলোর সমাধান করা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরাও তাদের হতাশার কথা ব্যক্ত করেন।

আইন তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী উজ্জ্বল মন্ডল কৃষ্ণময় দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এটি আমার জন্য গর্বের বিষয় যে, আমি বঙ্গবন্ধুর নামের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে যে, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়টি বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে অবহেলিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে একটি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য নূন্যতম যে সুযোগ সুবিধাটুকু প্রয়োজন হয় সেটুকুও নেই।

মুজিববর্ষের প্রত্যাশা ব্যক্ত করতে গিয়ে এই শিক্ষার্থী বলেন, মুজিববর্ষে আমার প্রত্যাশা সরকারের পক্ষ থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা নিরসনে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক এবং বিশ্ববিদ্যালয়টিকে একটি আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করা হোক।

কৃষি বিভাগের শিক্ষার্থী মুকুল আহমেদ রণি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয় এমন একজন ব্যক্তির নামকরণ হয়েছে যিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী। সেই হিসেবে এটি বাংলাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয় হওয়া উচিত ছিল, কিন্তু বর্তমানে এটি নানা সমস্যায় জর্জরিত। মুজিববর্ষে বিশ্ববিদ্যালয় সকল সমস্যা কাটিয়ে শতগুণ এগিয়ে যাক-এমনটাই প্রত্যাশা করি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের চলতি উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. শাহজাহান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, আমরা বিভিন্ন ধরনের সংকটের মধ্যে রয়েছি। তবে আমরা আশা করছি, এসব সংকট কাটিয়ে তুলতে পারবো। বিশেষ করে মুজিববর্ষে আমার কাছে সর্বাধিক গুরুত্ব পাবে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা কর্মচারীসহ সকলের মাঝে একতা তৈরি করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকটসমূহ উত্তরণের উপায় বের করা। আর সেই অনুযায়ী কাজ করা।


সর্বশেষ সংবাদ