সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় আপত্তি চুয়েট শিক্ষার্থীদের

  © টিডিসি ফটো

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা চত্বরে মানববন্ধন করে শিক্ষার্থীরা। প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে মানববন্ধনে। পরে উপাচার্য অধ্যাপক ড. রফিকুল আলম বরাবর স্মারকলিপি দেয় তারা।

স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, িশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) কর্তৃক সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কার্যক্রম একসাথে করার একটি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বাস্তবিক পরিস্থিতি বিবেচনায় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য পদ্ধতিটি উপযুক্ত হবে বলে আমরা চুয়েটের বর্তমান শিক্ষার্থীরা মনে করিনা।চুয়েটের বর্তমান ভর্তি পরীক্ষা ব্যবস্থা সর্বজনস্বীকৃত এবং
যথেষ্ট মানসম্মত হিসেবে সুনাম রয়েছে। সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা ব্যবস্থায় অংশগ্রহণ করলে সার্বিকভাবে এই
মান ক্ষুন্ন হবার আশংকা রয়েছে বলে আমরা মনে করি। এছাড়া ইতোমধ্যে দেশের প্রথিতযশা কিছু বিশ্ববিদ্যালয় এই সিদ্ধান্তের ব্যাপারে দ্বিমত পােষণ করেছে এবং এই পদ্ধতিতে অংশগ্রহণ না করার ব্যপারে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্তে উপনিত হয়েছে। আমরাও মনে করি “সেন্টার অব এক্সিলেন্স”হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য উপযুক্ত শিক্ষার্থী বাছাইয়ে এই পরীক্ষা পদ্ধতিটি সঠিক হবেনা। এ ব্যাপারে আমাদের এলামনাইরাও সহমত পােষণ করেছে।

শিক্ষার্থীরা মনে করেন, আলাদা আলাদা ভাবে ভর্তি পরীক্ষায় ভর্তি পরীক্ষার্থীদের ভোগান্তি হলেও তারা নিজেদের মেধাকে তুলে ধরার অনেকগুলো সুযোগ পায়। কিন্তু সমন্বিত পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের এরূপ কোনো সুযোগ থাকছেনা। যদি ভর্তি পরীক্ষার সেই একটা দিন যেকোনো পারিপার্শ্বিক সমস্যার কারণে পরীক্ষাটি ভাল করতে না পারে, তবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার স্বপ্ন একদিনেই নিঃশেষ হয়ে যাবে। যা প্রকৃত মেধা যাচাইয়ের অন্তরায়। পাশাপাশি স্বতন্ত্র ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাময়িক কিছু ভোগান্তি হলেও শিক্ষার্থীরা মেধা এবং পছন্দ অনুযায়ী ভর্তির সুযোগ পায় ।

এছাড়া তারা আরো উল্লেখ করেন, মেডিকেল,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ দেশের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতোমধ্যে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ পাওয়া গেছে । সেদিক থেকে এখন পর্যন্ত দেশের চারটি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি । কিন্তু সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এই গৌরব নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েক লাখ শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা সত্ত্বেও তারা নিজেদের স্বকীয়তা বজায় রাখার জন্য ভর্তিচ্ছুদের কষ্টের কথা বিবেচনা করছেনা। সেখানে চুয়েটে মাত্র ১০হাজার ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর জন্য সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় যাওয়াকে তারা যৌক্তিক মনে করছে না।

এসব বিষয়ে তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী বায়েজিদ বিন ইসলাম বলেন, যেহেতু অনেক গুলো বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি থেকে সরে এসেছে সেহেতু শিক্ষার্থীদের বড় একটা অংশকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাতায়াত করতে হবে। চুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসে আট থেকে দশ হাজার শিক্ষার্থী। যা জাবি, রাবি, চবিতে ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা শিক্ষার্থীদের তুলনায় অনেক কম। পাশাপাশি তাদের তুলনায় আমাদের এখানে যাতায়াতের ভোগান্তি এবং কষ্ট দুটোই কম। তাই আমাদের কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করাই ভাল।

সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্তের শুরু থেকে চুয়েটের বর্তমান এবং প্রাক্তন শিক্ষার্থীগণ দ্বিমত পোষণ করলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছ থেকে কোন লিখিত বা অলিখিত বিবৃতি পাওয়া যায়নি। ইতোমধ্যে বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষাকে নাকচ করে দিয়েছে। এরূপ পরিস্থিতিতেও চুয়েট প্রশাসনের নীরবতা পালনকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন চুয়েটের বর্তমান এবং প্রাক্তন শিক্ষার্থীবৃন্দ ।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মোঃ রফিকুল আলম বলেন, সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় চুয়েট অংশগ্রহণ করবে কিনা এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রাখে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল। তারা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন।

উল্লেখ্য গত ২৩ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশশনের(ইউজিসি) চেয়ারম্যান ড.কাজী শহীদুল্লাহর সভাপতিত্বে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠকের পর ২৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের একমত পোষণের প্রেক্ষিতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষার বিষয়টি জানান।