কাফনের কাপড় পরে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি আন্দোলনকারীদের

শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়েছে আন্দোলনকারীরা
শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়েছে আন্দোলনকারীরা  © টিডিসি ফটো

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেনের পদত্যাগসহ ৯ দফা দাবিতে কাফনের কাপড় পরে আমরণ অনশনে বসেছে আন্দোলনকারীরা। শনিবার সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে এই আমরণ অনশন শুরু করেন তারা।

এর আগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীরা অনশনে বসলে রাতে ক্যাম্পাসের সব লাইট বন্ধ করে আন্দোলনকারীদের উপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা।

আন্দোলনরত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এসএম ইকরামুল কবির দ্বীপ বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি অবমাননার মতো ঘটনা ঘটেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক। ইতিমধ্যে উচ্চ আদালতে তা প্রমাণিত হয়েছে। উচ্চ আদালত এই ঘটনায় যবিপ্রবি ভিসিসহ জড়িতদের রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

ইকরামুল বলেন, রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে প্রমাণিতদের পক্ষে মামলা পরিচালনায় বিশ্ববিদ্যালয় অর্থ ব্যয় করতে পারে না। এমন দাবি করে আমি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেছিলাম। এজন্য গত ১৮ ফেব্রুয়ারি আমাকেসহ দুইজনকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে। সবমিলে এবার ছয় শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এমন স্বৈরতান্ত্রিকভাবে একটি বিশ্ববিদ্যালয় চলতে পারে না। আমরা এর প্রতিকার চাই।

আজীবন বহিষ্কারের শিকার আরেক শিক্ষার্থী অন্তর দে শুভ বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ভিসির স্বৈরতান্ত্রিক কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করেছি। আমাদের শিক্ষাজীবন তিনি অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দিয়েছেন। এজন্য গত ১৯ ফেব্রুয়ারি আমরা ভিসি পদত্যাগসহ ৯ দফা দাবিতে অনশন শুরু করি। কিন্তু রাতে আমাদের উপর ভিসির নির্দেশে হামলা করা হয়। আমরা মরতে রাজি আছি। কিন্তু দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, আন্দোলনরত এসব শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা করেছে। ডিসিপ্লিন কমিটির সুপারিশে তাদেরকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আদেশে বলা হয়েছে, যবিপ্রবির কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী ও বহিরাগতরা ক্লাস-পরীক্ষা চলাকালীন সময় মাইক বাজিয়ে একাডেমিক কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ। তাই মাইক সরিয়ে নেয়ার পাশাপাশি বহিরাগতদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ত্যাগ করার জন্য নিদেশ দেয়া হচ্ছে।

তাদের দাবিগুলো হলো- অনতিবিলম্বে অবৈধ বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করতে হবে, প্রশাসনের স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বৈরচারী আচরণ বন্ধ করতে হবে, ল্যাব রিটেক ও কোর্স রিটেকের জরিমানা বাতিল করতে হবে, ইম্প্রুভিং সিস্টেম চালু করতে হবে, ক্লাসে উপস্থিতি (৬০-৭০ শতাংশ) হলে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা এবং (৫০-৬০ শতাংশ) হলে দশ হাজার টাকা জরিমানা বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে, রিটেক কোর্সের সিজিপিএ ৪ কাউন্ট করতে হবে, চাকরির নিয়োগের ক্ষেত্রে যবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দিতে হবে, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ভর্তির ক্ষেত্রে যে অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা হয়েছে তার সঠিক তদন্ত করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।

তবে আন্দোলনের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, তারা যে দাবিগুলো নিয়ে আন্দোলন করছে তার বেশিরভাগই অনেক আগে মেনে নেয়া হয়েছে। রিটেক ফি ৭৫ শতাংশ মওকুফ করে দেয়া হয়েছে। প্রায় প্রত্যেকটা বিভাগে শিক্ষক হিসেবে আমাদের গ্র্যাজুয়েটরা রয়েছেন। তারপরও যদি তাদের কোন দাবি দাওয়া থাকে, তারা যদি আমাকে জানায় আমি বিষয়গুলো বিবেচনায় নিব এবং আমি অবশ্যই চাইব আমার শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরে আসুক।


সর্বশেষ সংবাদ