সড়ক দুর্ঘটনায় ছাত্রের মৃত্যু

সড়কে ৯০ শতাংশ ফিটনেসবিহীন যান পেলেন চুয়েটের শিক্ষার্থীরা

  © টিডিসি ফটো

সড়ক দুর্ঘটনায় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী তাহমিদুল ইসলাম চৌধুরীর অকালমৃত্যুতে ক্যাম্পাসে শোকের ছায়া বিরাজ করছে। গত শনিবার চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে ট্রাকের সঙ্গে সিএনজির সংঘর্ষে গুরুতর আহত হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে দু’দিন পর সোমবার মারা যান তিনি।

এদিকে, ক্যাম্পাসের সামনে ব্যস্ততম এই সড়কে যাতে আর কারও অকালমৃত্যু না হয় সেজন্য বুধবার বিকেলে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে সিএনজির ফিটনেস এবং চালকের লাইসেন্স আছে কিনা তা যাচাই-বাছাই করেন। এতে দেখা গেছে, ওই সড়কের ৯০ শতাংশ গাড়ির ফিটনেস ও চালকের লাইসেন্স নেই।

শিক্ষার্থীরা জানান, মাত্র আধা ঘণ্টার ব্যবধানে তারা ৫০টি লাইসেন্স ও ফিটনেসবিহীন সিএনজি শনাক্ত করেছেন। এসময় তারা শনাক্তকৃত যানগুলোর চাবি ও মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্সকার্ড জব্দ করে রেখে দেন। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপে তারা সড়ক থেকে সরে যায়।

সরেজমিনে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা চাবি জব্দ করে রাখার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের অভিমুখ সড়কে অনেক সিএনজি জড়ো হয়ে যায়। যার কারণে ট্রাফিক জ্যামের সৃষ্টি হয়। পরে রাউজান-রাঙ্গুনিয়া থানার সার্কেল অফিসার মুঠোফোনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ উপ-পরিচালক হুমায়ুন কবিরের মারফতে আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা সড়ক থেকে উঠে আসে এবং যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

এ ব্যাপারে চুয়েটের ছাত্রকল্যাণ উপ-পরিচালক হুমায়ুন কবির বলেন, শিক্ষার্থীরা কোন প্রকার ভাংচুরবিহীন শৃঙ্খলার সাথে সিএনজির বৈধতা যাচাই করছে। মুঠোফোনে রাউজান-রাঙ্গুনিয়া থানার সার্কেল অফিসার কামাল হোসেন সিএনজির বৈধতা যাচাই করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সম্মুখে প্রতিদিন অস্থায়ী চেকপোস্ট বসানোর মৌখিক আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা সিএনজি চালকদের চাবি স্বহস্তে ফিরিয়ে দেয়।

এ সময় রাউজান-রাঙ্গুনিয়া সড়কের ট্রাফিক পুলিশ মো. কায়েস শিক্ষার্থীদের সামেনে সিএনজি চালকদের লাইসেন্স কার্ড ছাড়া সড়কে বের না হওয়ার ঘোষণা দেন। পাশাপাশি পুলিশের কাছ থেকে টোকেন নিয়ে সড়কে যান চলাচল বন্ধ এবং বিআরটিসি থেকে কিভাবে ও কতদিনের মধ্যে লাইসেন্স নেয়া যায় সে ব্যাপারে চালকদের পরামর্শ দেন।

শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ৪র্থ বর্ষের ফরহাদ শাহী আফিন্দী জানান, আমরা গতকাল ও আজকে চালকদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য আধা ঘণ্টা চুয়েট গেটে অবস্থান নিই। সিএনজির ফিটনেস ও চালকের লাইসেন্স যাচাই করি। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই সড়কের ৯০ শতাংশ গাড়ির ফিটনেস ও চালকের লাইসেন্স নাই। যেহেতু এই সড়কে চুয়েট শিক্ষার্থীর মৃত্যুর মিছিল থামছেই না, তাই ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী সবার নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে আমরা অহিংস কার্যক্রম শুরু করেছি। আমার ভাইয়ের মৃত্যুর জন্য দায়ী চালককে অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে এবং এই সড়কে কোনো লাইসেন্সবিহীন গাড়ি চলতে পারবে না।

এর আগে দুপুরে শিক্ষার্থীরা চুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রফিকুল আলম বরাবর বিভিন্ন দাবি-দাওয়া সংবলিত একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন। স্মারকলিপিতে দাবির মধ্যে রয়েছে-ঘাতক চালককে আগামী ৭২ ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতার করে সঠিক বিচারের আওতায় আনা, আজ থেকে আগামী ৭২ ঘন্টার মধ্যে ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন চালকের গাড়ি চালানো এবং ফিটনেসবিহীন পরিবহন চলাচল চট্টগ্রাম-কাপ্তাই মহাসড়কে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ, সড়কে পর্যাপ্ত পরিমাণ গতিরোধক এবং জেব্রা-ক্রসিংয়ের ব্যবস্থা, কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে শুরু করে লিচুবাগান পর্যন্ত রাস্তার উভয় পাশে পর্যাপ্ত পরিমাণ আলাের ব্যবস্থা করা, চুয়েট থেকে বহদ্দারহাট পর্যন্ত সকলের চলাচলের জন্যে নতুন বাস সার্ভিস আগামী এক সপ্তাহের মাঝে চালু করা, চট্টগ্রাম-কাপ্তাই মহাসড়ক চারলেনে উন্নীত করণের লক্ষ্যে দৃশ্যমান পদক্ষেপ আগামী ১৫ দিনের মধ্যে গ্রহণ করা।

স্মারকলিপিতে শিক্ষার্থীরা দাবিসমূহের অগ্রগতি সম্পর্কে জানার জন্যে আগামী রবিবারবিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের উপস্থিতিতে স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, উপজেলা পরিষদ এবং সিএনজি অটোরিকশা, বাস, ট্রাক মালিক সমিতির সাথে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি সভার আয়োজন করার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ