শাবিপ্রবির পা ৩০-এ, যত অর্জন

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কেক কাটা হয়
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কেক কাটা হয়  © টিডিসি ফটো

নানান আয়োজনে দেশের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ২৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়েছে। বিগত বছরগুলোতে ১৩ ফেব্রুয়ারি এই দিবস পালন করা হলেও এবার বাংলা দিনপঞ্জি পরিবর্তিত হওয়ায় ১৪ ফেব্রুয়ারি (বাংলা পহেলা ফাল্গুন) বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন করা হয়েছে।

আজ শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়টি ৩০ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে আলোচনা সভা, শোভাযাত্রা ও কেক কাটার আয়োজন করা হয়। সকালে পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে শুরু হয় এসব কর্মসূচির। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের নেতৃত্বে একটি আনন্দ শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশ নেন। শোভাযাত্রাটি ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে মুক্তমঞ্চে এসে সমাবেশে মিলিত হয়।

সমাবেশে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে সর্বপ্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। সময়ের বিবর্তনে ২৯টি বছর অতিক্রম করেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়। জ্ঞান ও প্রযুক্তিতে এই বিশ্ববিদ্যালয় অনেক দূর এগিয়ে গেছে, দেশের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে রয়েছে। পাশাপাশি উদ্ভাবনের দিক থেকেও আমারা সর্বোচ্চ স্থানে। শিক্ষা ও গবেষণার দিক থেকে শাবিপ্রবি এখন অনেক এগিয়ে। দেশ ও দেশের বাইরে সুনামের সাথে কাজ করছে আমাদের গ্রাজুয়েটরা।

এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ, প্রো-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো আনোয়ারুল ইসলাম, সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মস্তাবুর রহমান, শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. এস এম সাইফুল ইসলাম, নব নির্বাচিত সভাপতি অধ্যাপক ড. রাশেদ তালুকদার, উদযাপন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. আখতারুল ইসলামসহ বিভিন্ন অনুষদের ডিন, প্রভোস্ট, দফতর প্রধান, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

পরে আমন্ত্রিত অতিথিদের নিয়ে কেক কাটার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করা হয়।

সিলেট নগরীর ৫ কিলোমিটার দূরে আখালিয়ায় ৩২০ একর ভূমিতে ১৯৯১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি (১লা ফাল্গুন) মাত্র ৩টি বিভাগ, ১৩ জন শিক্ষক ও ২০৫ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল দেশের অন্যতম এ বিশ্ববিদ্যালয়টি। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭টি অনুষদের অধীনে ২৮টি বিভাগ ও ২টি ইন্সটিটিউট রয়েছে। যেখানে ১০ হাজারের অধিক শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ১১টি কলেজ রয়েছে।

শাবিপ্রবি দেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভর্তি কার্যক্রম ও পুরো ক্যাম্পাসে ওয়াইফাই নেটওয়ার্কসহ আরও বেশ কিছু ক্ষেত্রে সফলতা দেখাতে সক্ষম হয়। বিভিন্ন সময় শাবিপ্রবি দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে এবং গবেষণা ক্ষেত্রে অর্জন করেছে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জন অনেক। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সেমিস্টার পদ্ধতি চালু করা, এসএমএসের মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি চালু, দেশের প্রথম বাংলা সার্চ ইঞ্জিন পিপিলিকা তৈরি করা, পুরো ক্যাম্পাস সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা, নিজস্ব ডোমেইনে ই-মেইল চালু, দেশীয় প্রযুক্তির ট্র্যাকিং ডিভাইস তৈরি, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য বাংলা ভাষার প্রথম সফটওয়্যার 'মঙ্গল দ্বীপ' উদ্ভাবন, প্রথমবারের মতো দেশে চালকবিহীন বিমান ড্রোন আবিষ্কার,যানবাহন ট্র্যাকিং ডিভাইস উদ্ভাবন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সম্পন্ন একুশে বাংলা কীবোর্ড, প্রথম কথা বলা রোবট (রিবো), হাঁটতে চলতে সক্ষম রোবট ‘লি’ তৈরি, অনলাইনে টান্সক্রিপ্ট উত্তোলনের সুবিধা চালু, ক্যান্সার নির্ণয়ের নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন হয় এই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে।

এছাড়াও ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং-ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাকশন এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এবং পেট্রোলিয়াম এন্ড মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং এর মতো বিভাগগুলো দেশে প্রথমবারের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু করা, বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সেকেন্ড মেজর কোর্স নেবার সুবিধাসহ অনেক কিছুর দাবি করার মতো অর্জন রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানটির।

গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মহাকাশ সংস্থা নাসা আয়োজিত স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জে প্রথমবারের মতো অংশ নিয়ে ৭৯টি দেশের বাছাইকৃত ২৭২৯টি দলের সঙ্গে লড়াই করে শীর্ষ চারে জায়গা করে নেয় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দল ‘টিম অলিক’।

সর্বশেষ দেশের প্রযুক্তিখাতে অবদানের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েটকে পেছনে ফেলে দেশসেরা ডিজিটাল ক্যাম্পাস অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।

পাশাপাশি বিজ্ঞান গবেষণায় কৃতিত্ব অর্জন স্বরূপ স্পেনের সিমাগো রিসার্চ গ্রুপ ও যুক্তরাষ্ট্রের স্কপাস থেকে প্রকাশিত দেশের ১০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শীর্ষস্থান অর্জন, গবেষণার মাধ্যমে ক্যান্সার সনাক্তকরণ পদ্ধতি আবিষ্কার, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইআইসিটি) খাতে বিশেষ অবদানের প্রথমবারের মতো ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড পুরষ্কার-২০১৭’ অর্জনসহ দেশ এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অনেক ক্ষেত্রেই বিশেষ অবদান রাখছে এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।


সর্বশেষ সংবাদ