কর্তৃপক্ষ জেনেও ছিল উদাসীন, ভবিষ্যত জানে না ৪২৪ শিক্ষার্থী

  © ফাইল ফটো

বিশ্ববিদ্যালয় মন্জুরি কমিশন (ইউজিসি) কর্তৃক ইতিহাস বিভাগের অনুমোদনের দাবিতে টানা সাত দিন যাবৎ আন্দোলন চলছে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি)।

২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে সাবেক উপাচার্য খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের উদ্যোগে ইউজিসির অনুমোদন ছাড়াই যাত্রা শুরু করে বিভাগটি। মানবিক অনুষদের অধীনে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেয়া হলেও বঙ্গবন্ধু ইনিস্টিউট অব লিবারেশন ওয়ার এন্ড বাংলাদেশ স্টাডিজের অধীনে নিজস্ব কোনো শিক্ষক ছাড়াই চলতে থাকে এর শিক্ষা কার্যক্রম।

বিলওয়াবসের শিক্ষকসহ তৎকালীন ছাত্র উপদেষ্টা এবং ভর্তি পরীক্ষা কমিটির আহবায়ক জানিয়েছেন, তারা অনুমোদন না থাকা সম্পর্কে জানলেও বিষয়টিকে গুরুত্ব দেননি। ভেবেছিলেন উপাচার্য তার নিজ ক্ষমতাবলে অনুমোদন আনতে সক্ষম হবেন।

বিলওয়াবসের সহকারী অধ্যাপক এবং ইতিহাস বিভাগের অলিখিত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনকারী সানজিদা পারভীন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘২০১৭ সালে মাতৃত্বকালীন ছুটিতে যাওয়ার পূর্বে উপাচার্য আমায় ইতিহাস বিভাগের সিলেবাস প্রণয়নেের নির্দেশ দিয়েছিলেন। আমি তার নির্দেশ পালন করেছিলাম।’

তিনি বলেন, ‘পরবর্তীতে ২০১৮ এর এপ্রিলে মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষে চাকরিতে যোগদানের পর জানতে পারি ইউজিসির অনুমোদন ছাড়াই ইতিহাস বিভাগ চালু করা হয়েছে। অনুমোদন নেই জানার পরেও বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত হইনি, ভেবেছিলাম তিনি হয়তো তার ক্ষমতাবলে অনুমোদন আনতে পারবেন। কিন্তু একাধিকবার চেষ্টা করেও সাবেক উপাচার্য ইতিহাসের অনুমোদন আনতে ব্যর্থ হন।’

সাবেক ছাত্র উপদেষ্টা এবং বশেমুরবিপ্রবি রিজেন্ট বোর্ডের সদস্য প্রফেসর ড. আব্দুর রহিম এ বিষয়ে বলেন, ‘আমি ২০১৮ এর দিকে শুনেছিলাম ইতিহাস বিভাগের অনুমোদন নেই। কিন্তু বিষয়টিকে গুরুত্ব দেইনি। কারণ উপাচার্য একেক পর এক নতুন বিভাগের অনুমোদন নিয়ে আসছিলেন। ভেবেছিলাম এই বিভাগটির অনুমোদন ও আনতে সক্ষম হবেন।’

এই প্রবীণ শিক্ষক উপাচার্যের স্বেচ্ছাচারীতাকে দোষারোপ করে বলেন, ‘সাবেক উপাচার্য স্বেচ্ছাচারী হওয়ায় তিনি কারো পরামর্শকে গুরুত্ব দিতেন না, এ কারণেও আমরা বিষয়টি নিয়ে চুপ ছিলাম।’

বিষয়টি নিয়ে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষা কমিটিতে দায়িত্ব পালনকারী এবং রিজেন্ট বোর্ডের আরেক সদস্য প্রফেসর ড. এম এ সাত্তার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘রিজেন্ট বোর্ডে সাতটি বিভাগের অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। ওই সময় ইতিহাস ব্যতীত ছয়টি বিভাগ চালু করার প্রস্তাব পাস হয় এবং ইতিহাস বিভাগের কিছু কাগজপত্র সংশোধন করে পুনরায় উত্থাপন করতে বলা হয়।’

তিনি বলেন, ‘সাবেক উপাচার্য পরবর্তীতে আর কোনো একাডেমিক কাউন্সিল বা রিজেন্ট বোর্ডের সভা আয়োজন না করেই ইতিহাস বিভাগের কার্যক্রম শুরু করে দেন। তিনি সবকিছু নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী করায় আমাদের কিছু করার ছিলো না। তাছাড়া আমরা ধরেই নিয়েছিলাম তিনি অনুমোদন আনতে সক্ষম হবেন।’

এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে টানা চতুর্থ দিনের মতো অচলাবস্থা বিরাজ করছে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, ইউজিসি অনুমোদন না দেয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কার্যক্রম চলতে দিবেননা।

উল্লেখ্য, প্রায় তিন বছর পর গত ৬ ফেব্রুয়ারি ইউজিসি কর্তৃক পরবর্তী শিক্ষাবর্ষ থেকে ইতিহাস বিভাগে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি না করানোর নির্দেশনা দেয়া হয়। অনুমোদন না থাকলেও বিভাগটিতে ৪২৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তবে তাদের ভবিষ্যত কি সে বিষয়ে কোনো ধারণা নেই শিক্ষার্থীদের।


সর্বশেষ সংবাদ