শোকজ, বহিষ্কার ও আন্দোলনে কাটল বশেমুরবিপ্রবির বছর

একের পর এক শোকজ, বহিষ্কার ও আন্দোলনকে কেন্দ্র করে প্রায় সারা বছরই আলোচিত ছিলো গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি)। এক বছরে মোট ১৯ শিক্ষার্থীকে শোকজ আর বহিষ্কার করা হয়েছে ২৬ জন। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বিদায় নিয়েছেন একজন উপাচার্য। ২০১৯ সালের বিভিন্ন আলোচিত ঘটনাকে নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদনটি।

★জানুয়ারি
নতুন তিন বিভাগ ও এক ইনস্টিটিউটের যাত্রা শুরু: শিক্ষক, ক্লাসরুম, আবাসন সংকট এবং ল্যাব সংকটের মধ্যেই শিক্ষাকার্যক্রম শুরু করা হয় নতুন তিনটি বিভাগ এবং একটি ইনস্টিটিউটের। ফুড এন্ড এগ্রোপ্রসেসিং ইঞ্জিনিয়ারিং, আর্কিটেকচার এবং বোটানিতে নেয়া হয় প্রায় ১৫০ শিক্ষার্থী। অপরদিকে মাদারীপুরের শিবচরে অবস্থিত শেখ হাসিনা আইটি ইনস্টিটিউটে নেয়া হয় প্রায় ৮০ জন শিক্ষার্থী।

বুয়েটকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন রোবোগ্যাং: তৃতীয় বারের মতো রোবোটিকস সোসাইটি কর্তক আয়োজিত রোবো কার্নিভালে বুয়েটসহ দেশসেরা ২০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ৮০০ প্রতিযোগীকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় বশেমুরবিপ্রবির রোবোগ্যাং।

খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের পুনর্নিয়োগ: ২৮ জানুয়ারি দ্বিতীয় মেয়াদে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সদ্য বিদায়ী প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিন।

★এপ্রিল
যৌন নির্যাতনের অভিযোগে শিক্ষকের বিরুদ্ধে আন্দোলন: দুই ছাত্রীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও সহকারী অধ্যাপক আক্কাছ আলীর শাস্তির দাবিতে আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়। সহস্রাধিক শিক্ষার্থী অবস্থান নেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে। অবশেষে শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলনের মুখে ১৬ এপ্রিল আক্কাছ আলীকে চেয়ারম্যান পদ থেকে স্থায়ী বহিষ্কার সহ সকল প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম থেকে চারবছরের জন্য অব্যাহতি দেয়া হয়।

বর্ষবরণ ১৪২৬: নানা আয়োজনে উৎসবমুখর পরিবেশে নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়েছিলো বশেমুরবিপ্রবি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে র‌্যালি, পান্তা ইলিশ আয়োজনের পাশাপাশি সকল বিভাগের অংশগ্রহণে আয়োজন করা হয়েছিলো বৈশাখী মেলার।

★মে
ধানের ন্যায্যমূল্য দাবি করায় ১৪ শিক্ষার্থীকে শোকজ: ধানের ন্যায্যমূল্য দাবি করে মানববন্ধন করায় ৩০ মে শোকজ নোটিশ প্রদান করা হয় ১৪ শিক্ষার্থীকে, যা সারাদেশে সমালোচনার ঝড় তুলেছিলো।

★সেপ্টেম্বর
ক্লাসরুমের অপরিচ্ছন্নতা নিয়ে ফেসবুকে স্টাটাস দেয়ায় ছয় শিক্ষার্থী বহিষ্কার: ক্লাসরুমের অপরিচ্ছন্নতা নিয়ে ফেসবুকে স্টাটাস দেয়ায় ৬ সেপ্টেম্বর ইলেকট্রনিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের ছয় শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়।

ফেসবুক স্টাটাসকে কেন্দ্র করে ছাত্রী বহিষ্কার: ফেসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে ১১ সেপ্টেম্বর দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত আইন বিভাগের একজন ছাত্রীকে বহিষ্কার করা হয়। পরবর্তীতে সারাদেশের সমালোচনা ও ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের প্রতিবাদের মুখে ১৮ সেপ্টেম্বরে বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করা হয়।

উপাচার্য বিরোধী আন্দোলন, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও উপাচার্যের পদত্যাগ: ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে চার ছাত্রনেতার ফেসবুক লাইভের প্রেক্ষিতে দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারীতার অভিযোগে উপাচার্যবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। পরবর্তীতে রাতের আধারে ১৪ দফা দাবি মেনে নিয়ে ছাত্র নেতাদের আন্দোলন বন্ধের ঘোষণা দিতে বাধ্য করা হলেও সাধারণ শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যায়। আন্দেলন থামাতে ২১ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয় কিন্তু শিক্ষার্থীরা এই ঘোষণা উপেক্ষা করে আন্দোলন চালিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

এসময় শিক্ষার্থীদের প্রতিহত করতে শহর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করা হয় যাতে প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়। এর মাঝে সংবাদমাধ্যমগুলোতেও উঠে আসে খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবেদন। পরবর্তীতে বশেমুরবিপ্রবির চলমান ঘটনার বিষয়ে ২৩ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে ইউজিসি। তদন্ত কমিটি শিক্ষার্থীদের অভিযোগের সত্যতা পায় এবং উপাচার্যের অপসারণ সুপারিশ করে। অবশেষে ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে পুলিশ পাহারায় ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন খোন্দকার নাসিরউদ্দিন এবং ৩০ সেপ্টেম্বর পদত্যাগপত্র জমা দেন।

★অক্টোবর
রুটিন উপাচার্য নিয়োগ: ৭ অক্টোবর উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব পালনের জন্য প্রফেসর ড. মো. শাহজাহানকে নিয়োগ প্রদান করা হয়।

★নভেম্বর:
মহাবিপদ সংকেত উপেক্ষা করে ভর্তি পরীক্ষা: ৯ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রকোপে ১০ নাম্বার মহাবিপদ সংকেত উপেক্ষা করেই অনুষ্ঠিত হয় ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ, বিজ্ঞান অনুষদ এবং আর্কিটেকচারের ভর্তি পরীক্ষা। প্রায় ৫০ হাজার শিক্ষার্থী এই দিনে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও প্রশ্নফাঁস চক্রে জরিত থাকায় ১৪ শিক্ষার্থী বহিষ্কার: ২১ সেপ্টেম্বর সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িত থাকায় ১৭ নভেম্বর ৫ শিক্ষার্থীকে স্থায়ী বহিষ্কার সহ এক শিক্ষার্থীকে দুই সেমিস্টারের জন্য বহিষ্কার করা হয়। এছাড়া একই দিনে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ভর্তিপরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের প্রচেষ্টা করায় ৭ জন শিক্ষার্থীকে দুই সেমিস্টারের জন্য একাডেমিক বহিষ্কার সহ হল থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়।

র‌্যাগডে: ২১ ও ২২ নভেম্বর আড়ম্বরপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয় বশেমুরবিপ্রবির ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের সমন্বিত র‌্যাগডে প্রোজ্জ্বল-১৫। দুই দিনব্যাপী এই আয়োজনের প্রথমদিনে আবির উৎসব এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। আর দ্বিতীয় দিনে জনপ্রিয় ব্যান্ড আর্বোভাইরাস, আভাসসহ ক্যাম্পাসভিত্তিক ব্যান্ডসমূহ অংশগ্রহণে কনসার্ট অনুষ্ঠিত হয়।

★ডিসেম্বর
৯ বছর পর কংক্রিটের শহীদ মিনার: প্রতিষ্ঠার ৯ বছর পর প্রথমবারের মত কংক্রিটের শহীদ মিনার নির্মাণ হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের মধ্য দিয়ে শহীদ মিনারের উদ্বোধন করা হয়।


সর্বশেষ সংবাদ