ঘাতক শামীমকে টিউশন দিয়েছিল আবরার

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার অন্যতম আসামি শামীম বিল্লাহকে টিউশন ঠিক করে দিয়েছিল আবরার নিজেই। এ কথা জানিয়ে শনিবার সন্ধ্যায় আবরারের ছোট ভাই ফাইয়াজ নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে একটি স্ট্যাটাস দেন। ওই স্ট্যাটাসে আবরার হত্যার ‌মূলহোতা রুমমেট মিজানুর রহমান ছাড়াও অভিযুক্ত হোসেন মোহাম্মদ তোহা, শামীম বিল্লাহ ও মোয়াজ আবু হোরায়রাকে নিয়ে কথা বলেছেন ফাইয়াজ।

তাদের সবার সঙ্গে আবরারের ভালো সম্পর্ক ছিল বলে স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেন তিনি। ফাইয়াজ বলেন, ঘাতক শামীম বিল্লাহকে টিউশন ঠিক করে দিয়েছিল ভাইয়া। আবরার ফাহাদকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যায় যে ১১ জন সরাসরি অংশ নিয়েছিল তাদের মধ্যে শামীম অন্যতম।

ফাইয়াজ ফেসবুকে লিখেন, ‘ভাইয়া মারা যাওয়ার আগে ভাইয়ার শেষ কথা যা তখন পাশে থাকা ব্যাচমেটদের বলেছিল— ‘তোদের সাথে কোনো ভুল করে থাকলে আমাকে মাফ করে দিস। আল্লাহ আমাকে মাফ করে দিও। বলে কালেমা পড়ে।’

অথচ এই খুনিদের মধ্যে:
১.মিজান: হলের অনেকেই তাকে অনেক খারাপ জানলেও তারা ভাইয়ের কাছ থেকে জানতে পারে মিজান নাকি অনেক ভালো। বাকি রুমমেটদের মতবাদ অনুযায়ী রুমে মিজানের সবচেয়ে বেশি সখ্যতা ছিল ভাইয়ার সাথে। কোথাও বাইরে খেতে গেলে নাকি ভাইয়াকে ছাড়া যেতই না।
২.মোয়াজ: ভাইয়ার রোল ৯৮ তার ১০৬। ভাইয়ার সাথে তার ভালো বন্ধুত্ব থাকলেও সে সেখানে উপস্থিত ছিল।
৩.তোহা: ভাইয়ার ১০৭এর রুমমেট। যার সাথে দীর্ঘ সময় থাকায় ভালো সম্পর্ক ছিল।
৪.শামীম বিল্লাহ: একে টিউশন ঠিক করে দিয়েছিল ভাইয়া।
৫.খুনিদের মধ্যে ২জন কয়েকদিন আগেই সিলেটে গেছিল ভাইয়ার সাথে।
আসলে এদের তো সন্দেহ করার কোনো সুযোগ ছিল না যে এরাই এমন ষড়যন্ত্র করছে।

আগে একটা প্রবাদ পড়তাম: দুঃসময়ের বন্ধুই প্রকৃত বন্ধু (A friend in need is a friend indeed),,,,
বাবা-মা ছোট থেকে বলত বন্ধু থাকা ভালো না যখন কিছু হবে না তখন এরা সবসময় সাথে থাকবে কিন্তু বিপদে পড়লে দেখবি কোনো বন্ধুকে খুজে পাবি না। তখন অগ্রাহ্য করলেও এখন ঠিক বুঝেছি কথাগুলা আসলেই ঠিক ছিল। যতই ভাই বলে ডাকা হোক না কেন বিপদে রক্তের সম্পর্ক ছাড়া কেউ আসে না।

প্রসঙ্গত ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় খুন হন বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ। ভারতের সঙ্গে চুক্তির বিরোধিতা করে গত ৫ অক্টোবর ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন ফাহাদ। পরেরদিন ৬ অক্টোবর রাতে শেরেবাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে তাকে ডেকে নিয়ে বেধড়ক পেটানো হয়।

এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পিটুনির সময় নিহত আবরারকে ‘শিবিরকর্মী’ হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা চালায় খুনিরা। তবে আবরারের রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না বলে নিশ্চিত করেছেন তার পরিবার।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় ২৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ। গত বুধবার দুপুরে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ।

সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) হেমায়েত উদ্দিন খান বলেন, এই মামলায় অভিযুক্ত ২৫ জনের মধ্যে চারজন পলাতক আছেন। বাকিরা গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। এ ঘটনার দায় স্বীকার করে আটজন আদালতে আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বাকি ১৩ জনের ১৬১ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ