বুয়েটে অচলাবস্থা কাটছে কি না, জানা যাবে আজ

  © ফাইল ফটো

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার বিচারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা আজ বৃহস্পতিবার তাঁদের অবস্থান জানাবেন। তাদের সিদ্ধান্ত থেকে জানান যাবে, বুয়েটের অচলাবস্থা কাটছে কি না।

এদিকে আবরার হত্যা মামলার অভিযোগপত্রের অনুলিপি পাওয়ার চেষ্টা করছে বুয়েট কর্তৃপক্ষ। এর ভিত্তিতে তাঁরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন। বুধবার পুলিশ এই মামলার অভিযোগপত্র দেয়ার পর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও বুয়েট কর্তৃপক্ষ এ তথ্য জানায়।

বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ২৫ জনকে আসামি করে আদালত অভিযোগপত্র (চার্জশিট) জমা দিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। আদালত পুলিশ জিআরও মাজহারুল ইসলাম বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।

বুধবার বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে ডিবি পুলিশের একটি টিম ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এ অভিযোগপত্র নিয়ে যান। আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখায় এ অভিযোগপত্র জমা দেন তারা।

এর আগে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাদবীর ইয়াসির আহাসান চৌধুরী এজাহার গ্রহণ করে ১৩ নভেম্বর প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য করেন। আজ নির্ধারিত দিনেই অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ।

৬ অক্টোবর রাতে শেরেবাংলা হলে নিজের কক্ষ থেকে আবরারকে ডেকে নিয়ে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করে। পরের দিন তার বাবা বরকতুল্লাহ বাদী হয়ে ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

এ মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন- মেহেদী হাসান রাসেল, মুহতাসিম ফুয়াদ, অনিক সরকার, মেহেদী হাসান রবিন, ইফতি মোশররফ সকাল, মনিরুজ্জামান মনির, মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, অমিত সাহা, মাজেদুল ইসলাম, মো. মুজাহিদুল, মো. তানভীর আহমেদ, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মো. জিসান, মো. আকাশ, শামীম বিল্লাহ, মো. সাদাত, মো. তানিম, মো. মোর্শেদ, মোয়াজ আবু হুরায়রা, মুনতাসির আল জেমি, মিজানুর রহমান, শামসুল আরেফিন রাফাত, ইশতিয়াক আহমেদ মুন্না, এস এম মাহমুদ সেতু প্রমুখ। তাদের মধ্যে মুন্না, অমিত সাহা, মিজান, রাফাত ও সেতুর নাম এজাহারে ছিল না। আসামিদের মধ্যে রাসেল ছিলেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক, ফুয়াদ সহসভাপতি, অনিক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, রবিন সাংগঠনিক সম্পাদক, সকাল উপসমাজসেবা সম্পাদক, মনির সাহিত্য সম্পাদক, জিয়ন ক্রীড়া সম্পাদক, রাফিদ উপদপ্তর সম্পাদক, অমিত সাহা উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক এবং তানিম, মুজাহিদুর ও জেমি সদস্য। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, মামলার এজাহারভুক্ত তিন আসামি মো. জিসান, মোর্শেদ ও এহতেশামুল তানিম এখনো পলাতক।

মামলায় এজাহারভুক্ত আট আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা হলেন- নাজমুস সাদাত, ইফতি মোশাররফ, মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, অনিক সরকার, মুজাহিদুর রহমান, মেহেদি হাসান রবিন, তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর ও মনিরুজ্জামান মনির।

চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডে ছাত্রলীগের ২৫ নেতার সম্পৃক্ততা পেয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। তাদের সবাইকেই চার্জশিটভুক্ত করা হয়েছে। সাক্ষী হয়েছেন ৩০ জন। এক মাসের মধ্যে এ মামলার তদন্ত শেষ করল ডিবি পুলিশ।

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ, আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও তদন্তে পাওয়া তথ্যানুযায়ী চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে যে, শিবিরকর্মী সন্দেহে আবরারকে খুন করা হয়েছে। আসামিরা ওই হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশ নিয়েছেন।

চার্জশিটে যে ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে, তাদের মধ্যে ২১ আসামি কারাগারে রয়েছেন। এর মধ্যে এজাহারভুক্ত ১৬ জন এবং এজাহারের বাইরে পাঁচজন আসামি রয়েছেন। এজাহারভুক্ত তিন আসামি এখনো পলাতক।

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, গ্রেপ্তার করা আসামিদের মধ্যে এজাহারভুক্ত আট জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাদের জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডে অপর আসামিদের সম্পৃক্ততাও উঠে এসেছে। এ ছাড়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দুই জন সাক্ষী আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।

এর বাইরে তদন্ত কর্মকর্তারা বুয়েটের শিক্ষক, শেরেবাংলা হলের প্রভোস্ট, চিকিত্সক, নিরাপত্তাকর্মীসহ বিভিন্নজনের সাক্ষ্য নিয়েছেন। চার্জশিটে তাদের সাক্ষী হিসেবে রাখা হচ্ছে। চার্জশিটের সঙ্গে আলামত হিসেবে আবরারের রক্তমাখা জামা-কাপড়, মেসেঞ্জারে আসামিদের লিখিত যোগাযোগ, প্রযুক্তিগত অন্যান্য যোগাযোগ, শেরেবাংলা হলের সিসিটিভি ফুটেজসহ ঘটনাস্থল থেকে জব্দ করা আলামতও জমা দেওয়া হচ্ছে।

আসামিদের অন্তত ১১ জন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের বিভিন্ন পদে ছিলেন। অপর আসামিরাও ছাত্রলীগের কর্মী বা সমর্থক ছিলেন। তবে আবরার হত্যাকাণ্ডের পর ছাত্রলীগ থেকে পদধারীদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া ঘটনার পর বুয়েটে ছাত্র রাজনীতিও নিষিদ্ধ করা হয়।

কিন্তু মামলার তদন্তের সময়ে রাজনৈতিক পরিচয় বাদ দিয়ে তাদের অপরাধী হিসেবেই বিবেচনা করা হয়েছে। চার্জশিটেও এর প্রতিফলন থাকছে। কার কী অপরাধ, কতটুকু অপরাধ—তা চার্জশিটে উল্লেখ করা হচ্ছে।