ডুয়েটে রেজিস্ট্রারসহ পাঁচ পদে উপাচার্যের পছন্দের ভারপ্রাপ্তরা

  © টিডিসি ফটো

রেজিস্ট্রার, কম্পট্রোলার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, প্রধান প্রকৌশলী এবং গ্রন্থাগারিক- এই পাঁচটি পদ একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে এসব পদে কাউকে স্থায়ী নিয়োগ না দিয়ে ভারপ্রাপ্ত কিংবা অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্তদের দিয়ে চলছে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট)।

ঢাকার অদূরে গাজীপুরে অবস্থিত এ বিশ্ববিদ্যালয়টির একাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তার অভিযোগ, বিভিন্ন সময়ে উপাচার্যের পছন্দের লোকদেরকে এসব পদে দায়িত্ব দেয়া হয়। এতে করে একদিকে যেমন যোগ্যরা বঞ্চিত হচ্ছেন, অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দাপ্তরিক কাজে স্বাভাবিকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি শিক্ষকদের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের কারণে তাদের নিয়মিত পাঠদান ও গবেষণা কাজেও ব্যাঘাত ঘটছে। দীর্ঘদিন ধরে এভাবে ভারপ্রাপ্ত কিংবা অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদের কাজ পরিচালনা করা কতটা আইনসম্মত তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তারা।

পড়ুন: বিদ্যালয়ে স্মার্টফোন নিতে পারবেন না শিক্ষার্থীরা

ডুয়েটের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষকের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন পদ শুন্য হলে সেই পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে লোক নিতে হবে। যদি কাউকে পাওয়া না যায় তাহলে সেক্ষেত্রে সেই পদে ভারপ্রাপ্ত বা অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে সাময়িক সময়ের জন্য কাজ চালানো যায়। সেটা কয়েক মাস বা সর্বোচ্চ এক বছর হতে পারে। তাই বলে বছরের পর বছর ধরে শুন্য পদ পূরনের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি না দেয়া বা কোন কোন পদে বিজ্ঞপ্তি দিলেও লোক না নেয়ার জন্য কৃত্রিম জটিলতা সৃষ্টি করা মানেই হলে পুরো প্রক্রিয়ার মধ্যে ঝামেলা আছে। তাছাড়া একজনকেই বছরের পর বছর অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে রাখাও তো বেমানান। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষকরাও তো রয়েছেন।

শিক্ষকদের অভিযোগ, উপাচার্যের আজ্ঞাবহ হলে খুব সহজেই এসব দায়িত্ব পাওয়া যায়। এ নিয়ে ভবিষ্যতে যাতে কোন ঝামেলা না হয় সেজন্য বিভিন্ন কৌশলে সিন্ডিকেট থেকেও অনুমোদন নেয়া হয়।

পড়ুন: এসএসসি ফেল করে যেভাবে ক্রিকেটার হলেন নাঈম

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, অতিরিক্ত বা ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পালনের জন্য একজন শিক্ষক/কর্মকর্তা প্রতিমাসে তার বেতনের ১২ শতাংশ অতিরিক্ত দায়িত্ব ভাতা পেয়ে থাকেন। এছাড়া বিভিন্ন কমিটিকে থাকার কারণে প্রতি অধিবেশন/মিটিং এর জন্য ৩ হাজার টাকা দেয়া হয়। এর বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও দেয়া হয়।

গত ২৯ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অফিসার্স এসোসিয়েশন’র কার্যনির্বাহী পরিষদের সভায় এ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে অতিদ্রুত এসব পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে যোগ্য ব্যক্তিদের স্থায়ী নিয়োগ দেয়ার দাবি ওঠে। পরে তা রেজুলেশন আকারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলাউদ্দীনের কাছে পেশ করেন এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ।

বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সম্পত্তির তত্ত্বাবধায়ক রেজিস্ট্রার। তিনি সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সচিব। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল গোপনীয় প্রতিবেদন, রেকর্ড ও দলিলপত্র এবং সাধারণ সীলমোহর রক্ষণাবেক্ষণ করা তার কাজ। অতি গুরুত্বপূর্ণ এই পদে ৮ বছরেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষকদের অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে।

পড়ুন: যে অডিও রেকর্ডের কারণে ফেঁসে যান তুরিন আফরোজ

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১১ সালের ২৭ মে সাবেক রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ আলিম দাদ অবসরে যান। এর পর থেকে ওই পদে কাউকে নিয়োগ দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘ ৮ বছরে ৩ জন শিক্ষক অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে রেজিস্ট্রার পদে দায়িত্ব পালন করছেন। এর মধ্যে বর্তমান রেজিস্ট্রার যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান একাই ৭ বছর ধরে ওই পদে রয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট ও হিসাব সম্পর্কিত দায়িত্ব পালন করেন কম্পট্রোলার। এর বাইরেও তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেন। ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে এই পদে ডেপুটি কম্পট্রোলার আনোয়ার হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত কম্পট্রোলারের দায়িত্ব দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘ ৭ বছরেও এই দপ্তরটি ভারমুক্ত হতে পারেনি।

একজন অবসরে যাওয়ার পর ২০১৬ সালের জুলাই মাসে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের পদ শুন্য হয়। এই পদেও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে কাউকে নিয়োগ দেয়া হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এই পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন।

পড়ুন: বাংলাদেশকে না দিলেও মালদ্বীপকে পেঁয়াজ দিচ্ছে ভারত

বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করে প্রকৌশল বিভাগ। এই দপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর পদটি ২০১২ সালের আগষ্টে শূন্য হওয়ার পর কাউকে স্থায়ী নিয়োগ দেয়া হয়নি। অন্যদিকে দীর্ঘ ১৬ বছরেও গ্রন্থাগারিক হিসেবে কাউকে নিয়োগ দেয়নি কর্তৃপক্ষ। ভারপ্রাপ্তদের দিয়েই চলছে এই দপ্তরের কাজ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির একাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের মূল কাজ পাঠদান ও গবেষণা করা। এর বাইরে অনেক সময় অন্যান্য দায়িত্ব পালন করতে হয়। কিন্তু একজন শিক্ষক যত বেশি বাড়তি দায়িত্ব পালন করবেন তার পাঠদান ও গবেষণার কাজে তত বেশি ব্যাঘাত ঘটবে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলাউদ্দীন এ নিয়ে কথা বলতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন। প্রতিবেদককে তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘ফোনে কথা বলবো না। আপনি আসেন সাক্ষাতে কথা বলবো’।

আরো পড়ুন:

ইয়াবা ফেনসিডিলখোর ছিল নুর হোসেন: রাঙ্গা (ভিডিও) 

বুলবুলে সাকিবের খামারে কেমন ক্ষতি হলো

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা


সর্বশেষ সংবাদ