আদালতে আবরার হত্যার রোমহর্ষক বর্ণনা দিলেন রবিন

 মেহেদী হাসান রবিন ও নিহত আবরার
মেহেদী হাসান রবিন ও নিহত আবরার

বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার আসামি বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডের রোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন।

আজ সোমবার তিনি ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে বলেন, আবরারকে আমিও চড় থাপ্পড়, কিল ঘুষি মেরেছি। আবরারকে একটি কক্ষে মারধর করার পর অসুস্থ হয়ে পড়লে আরেকটি কক্ষে নিয়ে আবার মারা হয়।

গতকাল পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা লালবাগ জোনাল টিম, গোয়েন্দা (দক্ষিণ) বিভাগের পুলিশ পরিদর্শক মো. ওয়াহিদুজ্জামান। তিনি রবিনের জবানবন্দি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় লিপিবদ্ধ করার আবেদন করেন। ঢাকার মহানগর হাকিম মো. তোফাজ্জল হোসেন তার জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন। গত ৮ অক্টোবর অন্যান্য আসামিদের সঙ্গে রবিনকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, রবিন আদালতকে জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কয়েকটি স্ট্যাটাসে আবরারের প্রতি সবার নজর পড়ে। আবরার শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে সন্দেহ হয়। আবরার হত্যাকাণ্ডের ৪/৫ দিন আগে থেকেই তাকে খোঁজা হচ্ছিল। বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল একটি মেসেঞ্জার গ্রুপে আবরারকে শায়েস্তা করার আহ্বান জানালে অনেকেই এতে সায় দেয়। কিন্তু আবরার হলে না থাকায় তিনি ফোরর পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার সিদ্ধান্ত হয়।

গত ৬ অক্টোবর বিকেলে আবরার হলে ফিরলে সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তাকে ডেকে শায়েস্তা করা হবে। ওইদিন রাত ৮টার দিকে মেহেদী হাসান রাসেল আবরারকে ডেকে আনতে নির্দেশ দেন। জেমি, মোয়াজসহ কয়েকজন তাকে ডেকে আনেন। রাত ৮ টার পর ২০১১ নম্বর কক্ষে আবরারকে আনার পর একে একে তোহা, মনির, রাফাত, বিল্লাহ, মাজেদ, মোয়াজ, অনীক, জেমি, তানভীর, তানিমরা আসেন। রবিনও যান। আবরারকে অনেক প্রশ্ন করা হয়। হলে কে কে শিবির করে তা জিজ্ঞাসা করা হয়। আবরার নিশ্চুপ থাকেন। এরপর রবিনই তাকে চড়-থাপ্পর মারা শুরু করেন। তারপরও আরো কয়েকজন চড়-থাপ্পড় কিলঘুষি মারেন।

এক পর্যায়ে একজন পাশের কোনো কক্ষ থেকে ক্রিকেট স্ট্যাম্প নিয়ে আসেন। ওই স্ট্যাম্প দিয়ে ইফতি মোশাররফ সকাল, অনীক সরকার মারেন। এ সময় ক্রিকেট স্ট্যাম্প ভেঙে যায়। পরে ওই ভাঙা স্ট্যাম্প দিয়েও আবরারকে সকলে মিলে পিটায়। পরে লাঠিসোটাও নিয়ে এসে কেউ কেউ পিটায়। মুজাহিদ ও কয়েকজন স্কিপিং দড়ি দিয়েও পিটায়।

মেহেদী স্বীকারোক্তিতে আরো বলেন, সকাল, জিসান, তানিম, সাদাত, মোরশেদ বিভিন্ন সময়ে ওই কক্ষে আসেন ও আবরারকে মারেন। মোয়াজ, বিটু, তোহা, বিল্লাহ ও মুজাহিদও ঘুরে ফিরে এসে আবরারকে মারপিট করেন। ২০১১ নম্বর কক্ষে প্রথমে তাকে মারা হয়। পরে অসুস্থ হয়ে পড়লে কিছুটা সময় দিয়ে তাকে ২০০৫ নম্বর কক্ষে নেওয়া হয়। সেখানেও তাকে মারধর করা হয়। এক পর্যায়ে আবরার নিস্তেজ হয়ে পড়েন। তিনি কয়েকবার বমিও করেন। এতেও মার থামেনি। তারপর আবরারকে ধরাধরি করেন তানিম, মেয়াজ, জেমি সিঁড়ির দিকে নিয়ে যায়। পেছনে মোরশেদ, মুজাহিদ, তোহা, বিল্লাহ, মাজেদও ছিলেন। এক পর্যায়ে ডাক্তার ডাকা হয়। ডাক্তার এসে বলেন আবরার মারা গেছেন।

আবরার হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে এ পর্যন্ত পাঁচজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা হলেন, বুয়েটের ছাত্র ইফতি মোশাররফ সকাল, মেফতাহুল ইসলাম জিওন, অনিক সরকার ও মো. মোজাহিদুর।


সর্বশেষ সংবাদ