আবারো আন্দোলনে বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা

  © টিডিসি ফটো

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক (আইআর) বিভাগের চেয়ারম্যান খোন্দকার মাহমুদ পারভেজের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে ওই বিভাগের শিক্ষার্থীরা। চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া, শিক্ষার্থীদের সাথে স্বৈরাচারী আচরণ এবং অনৈতিকভাবে শিক্ষার্থীদের নাম্বার কম দেয়ার অভিযোগ তুলে রবিবার সকালে ক্লাস বর্জন করে বিভাগের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে তারা।

আইআর বিভাগের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, খোন্দকার পারভেজ সাবেক উপাচার্য খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের ভাতিজা। ২০১৭ সালে সর্বপ্রথম সেকশন অফিসার হিসেবে বশেমুরবিপ্রবিতে যোগদান করেন তিনি। পরবর্তীতে অনার্স মাস্টার্সে দ্বিতীয় শ্রেণী থাকা সত্বেও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদান করেন। এরপর মাত্র দেড়বছরেই সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। প্রথমদিকে শিক্ষার্থীদের প্রতি স্নেহপূর্ণ আচরণ করলেও চেয়ারম্যান হওয়ার পর স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠেন এই শিক্ষক। কথায় কথায় শিক্ষাজীবন নষ্ট করে দেয়ার হুমকি দিতে শুরু করেন তিনি। নিজের ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য এসাইনমেন্ট ও পরীক্ষায়ও অকারণেই নাম্বার কম দেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, "তিনি সম্প্রতি একটি কোর্সের এসাইনমেন্টে ৩৪ জনকে শূণ্য  দিয়েছেন। আমরা যখন কারণ জানতে চেয়েছি তিনি বলেছেন তার ইচ্ছে হয়েছে তাই শূন্য দিয়েছে। একজন শিক্ষক কিভাবে এমন হতে পারে! তার আচরণে মনে হয়েছে আমরা তার খেলার পুতুল।" নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক শিক্ষার্থী জানান, "তিনি ভিসির ভাতিজা হিসেবে অবৈধভাবে নিয়োগ পেয়েছেন। ক্লাসেও ঠিকভাবে পড়াতে পারেননা। উইকিপিডিয়া দেখে দেখে বানান করে পড়ান। এছাড়া কোনো বিষয়ে প্রশ্ন করলেই রেগে যান, হুমকি দেন শিক্ষাজীবন নষ্ট করে দেয়ার।"

এদিকে এসকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন খোন্দকার মাহমুদ পারভেজ। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে তিনি জানিয়েছেন তার অনার্স মাস্টার্সে দ্বিতীয় শ্রেণী রয়েছে সত্যি কিন্তু তার নিয়োগ অবৈধ নয়। "বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ অধিকতর যোগ্য প্রার্থীদের ক্ষেত্রে দুটি শর্ত শিথিলযোগ্য" নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত এমন শর্তে চাকরি পেয়েছেন তিনি। এক্ষেত্রে বশেমুরবিপ্রবিতে তার পিএইচডি চলমান থাকায় এবং রবীন্দ্র জার্নালে চারটি প্রকাশনা থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় তাকে অধিকতর যোগ্য প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করেছে বলে জানিয়েছেন তিনি। নিয়োগ ব্যতিত অন্যান্য অভিযোগের বিষয়ে বলেন "আমি ওদের খুব ভালোবাসি, অন্যায় হলে শিক্ষক হিসেবে একটু বকাবকি করি কিন্তু কখনো হুমকি দেইনি। সবসময় চেষ্টা করেছি ওদের সহযোগিতা করতে।" সহযোগিতা করলে শিক্ষার্থীরা কেনো এসব অভিযোগ করছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "ওদের বেশি ভালোবাসিতো তাই আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করছে।"

এদিকে সকাল সোয়া দশটার দিকে আন্দোলন স্থলে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রক্টর ড. রাজিউর। তিনি শিক্ষার্থীদের বলেন, তোমরা অভিযোগগুলো লিখিতভাবে জমা দাও। "আমরা তোমাদের সকল অভিযোগ এবং দাবি দাওয়া অবশ্যই শুনবো কিন্তু সবকিছুর একটা আইনি প্রক্রিয়া রয়েছে। তোমাদের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে এবং অভিযোগ প্রমানিত হলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।"

এবিষয়ে জানতে চাইলে প্রক্টর ড. রাজিউর বলেন, শিক্ষার্থীদের লিখিত অভিযোগ জমা দিয়ে ক্লাসে ফিরতে বলা হয়েছে।

এদিকে প্রক্টরের আশ্বাসেও আন্দোলন প্রত্যাহার করেনি শিক্ষার্থীরা। তারা জানান, আজকের মধ্যেই চেয়াম্যানের পদ থেকে মাহমুদ পারভেজ পদত্যাগ না করলে তারা আরও কঠোর আন্দোলনে যাবে।


সর্বশেষ সংবাদ