ফের বিক্ষোভে শিক্ষার্থীরা, উত্তপ্ত বুয়েট

বুয়েটে ক্যাম্পাস আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। ১০ দফা দাবির মধ্যে যেগুলো দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য সেগুলো বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবে বলে জানায় শিক্ষার্থীরা। এই দাবিতে উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনা শেষে আবারও আজ শুক্রবার রাতে বিক্ষোভে নামছে শিক্ষার্থীরা।

এসময় শিক্ষার্থীরা ‘খুনিদের ফাঁসি চাই’, আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’, ‘ফাঁসি ছাড়া যাব না’ , ‘খুনিদের স্থায়ী বহিষ্কার চাই’, ‘শিক্ষা-সন্ত্রাস একসাথে চলে না’; স্লোগানে সরগরম করে রাখছে ক্যাম্পাস।

আলোচনা সভায় আগামী ১৪ অক্টোবর বুয়েটের অনুষ্ঠিতব্য প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করার দাবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক হয়েছে। ১৪ অক্টোবর যথাসময়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার পক্ষে রয়েছেন শিক্ষকরা। অপরদিকে ওইদিন পরীক্ষা স্থগিত করে পেছানোর দাবি তুলেন আবরার হত্যায় ১০ দফা দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এই দাবিতে একমত না হতে পারেনি শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। 

উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনা শেষে শিক্ষার্থীরা আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের প্রতিক্রিয়া জানাবেন রাত সাড়ে নয়টায়। এর আগে নিজেদের মধ্যে আলোচনা সেরে নিচ্ছেন তারা। শিক্ষার্থীদের অপর একাংশ বিক্ষোভ করছেন। সেখানে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করে তুলছেন ক্যাম্পাস। 

এর রাত ৮ টার দিকে বুয়েটের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে উপাচার্যের আলোচনা শেষ হয়েছে।শিক্ষার্থীদের ১০ দফার দাবির জবাব দেন উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, বুয়েটে সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি থাকবে না। আবরারের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে এবং মামলার খরচ বুয়েট কর্তৃপক্ষ বহন করবে। বিচারকাজ দ্রুত শেষ করতে সরকারকে চিঠি দেওয়া হবে। বুয়েটে র‌্যাগিং বন্ধ হবে।

উপাচার্যের আশ্বাস শেষে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমরা আশ্বাস এবং মন ভুলানো কথা চাই না। আমরা একই দাবি বারবার জানিয়ে আসছে এবং আপনারাও একই কথা বলে আসছি। কিন্তু এই সাইকেল আর কতদূর চালাতে হবে। আমরা দাবির বাস্তবায়ন এবং দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখতে চাই।

এছাড়া দাবি বাস্তবায়নের পর ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা। বলছেন, যে দাবিগুলো পূরণ করা সম্ভব এই দাবিগুলোর বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন এবং পাশাপাশি ভর্তি পরীক্ষা বন্ধ থাকবে। 

উপাচার্য আলোচনা সভা থেকে ওঠে যাওয়ার আগে বলেন, ‘আমি দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে উঠছি। শেষবারের মতো অনুরোধ করছি, আমাদের সম্মান ধুলায় লুটাতে দিও না। ভর্তি পরীক্ষা হতে দাও। অফিসগুলো খুলে দাও।’

কিন্তু শিক্ষার্থীরা কোনো উপাচার্যের আহবানে সাড়া দেননি। তাদের দাবি, ১০ দফা দাবি বাস্তবায়ন হলে প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম চলবে। এর আগ পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়াও ঘোষণা দেয় তারা।

আবরার ফাহাদ বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (১৭তম ব্যাচ) ছাত্র ছিলেন। তিনি থাকতেন বুয়েটের শেরেবাংলা হলের নিচতলায় ১০১১ নম্বর কক্ষে। গত রোববার রাত আটটার দিকে তাঁকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় একই হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে। ওই কক্ষে তাঁকে নির্যাতন করে বুয়েট ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। রাত ৩টার দিকে হল থেকেই তাঁর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর পর থেকে শিক্ষার্থীরা আবরার হত্যার ঘটনায় খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি, বুয়েট ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করাসহ ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। শিক্ষার্থীরা বলছেন, তাঁদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে।


সর্বশেষ সংবাদ