বশেমুরবিপ্রবি

বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল: নির্মাণকাজ শুরুর আগেই খরচ আড়াই কোটি

  © টিডিসি ফটো

জাতির জনকের নামাঙ্কিত গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি) ‘বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজ শুরু না হলেও ২০১৫ সাল থেকে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালকে নির্মাণাধীন দেখাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এমনকি বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল কমপ্লেক্সের টেন্ডার না হলেও সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে টেন্ডার প্রকাশ হয়েছে এবং কাজ চলছে বলে দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিন।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ২০১৪ সালে ‘বশেমুরবিপ্রবি অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের’ অধীনে ২৩টি খাতে মোট ১০৫ কোটি টাকার বাজেট পাস হয়, যার মধ্যে ‘বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল কমপ্লেক্স’ নির্মাণ অন্যতম। ওই সময়ে ২০১১ এর রেইট শিডিউল অনুযায়ী ২৪০ বর্গমিটার স্থান জুড়ে ম্যুরাল নির্মাণের জন্য দুই কোটি ৫০ লাখ টাকা দেয়া হয় এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমা দেয়া হয় ২০১৪ থেকে ২০১৭।

পর্যাপ্ত লোকবল না থাকায় প্রকল্পসমূহের কাজ শুরু করতে বিলম্ব হয় এবং কার্য সম্পাদনের জন্য ২০১৮ পর্যন্ত সময় নেয়া হয়। পরে ২০১৫ সালের ১৪ মে একাডেমিক ভবন-৩, ছাত্র হল, ছাত্রী হল ও সিনিয়র শিক্ষকদের ভবন নির্মাণের দরপত্র আহবানের মাধ্যমে প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়।

পরবর্তীতে কর্মকর্তাদের ডরমেটরি, কর্মচারীদের ডরমেটরি, পোস্ট গ্রাজুয়েটদের ডরমেটরি ও পুকুর খননসহ আরো বেশ কিছু ভৌত অবকাঠামো নির্মাণের কাজও শুরু হয়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে ৫ বছরেও নির্মাণ কাজ শুরু হয়নি বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল কমপ্লেক্সের।

তবে কাজ শুরু না হলেও এ সকল খাতে ব্যায় প্রদর্শন বন্ধ রাখেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ২০১৪-১৬ পর্যন্ত অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের ২৩টি খাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। যার মধ্যে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল কমপ্লেক্সে ব্যয় এক কোটি ৫০ লাখ টাকা।

জানা গেছে, ২০১৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ২৩টি উন্নয়ন খাতের জন্য ২৫০ কোটি ৫৬ লক্ষ টাকার বর্ধিত বাজেট অনুমোদিত হলে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালের জন্য বরাদ্দ রাখা হয় ১৫ কোটি ৪৪ লক্ষ টাকা। আর এই বর্ধিত বাজেটেও ম্যুরাল এবং শহিদ মিনারের অদৃশ্য নির্মাণ বজায় রেখেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ২০১৮ এর জুন পর্যন্ত ২৩টি খাতে দেখানো ৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ের মধ্যে বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল কমপ্লেক্স অদৃশ্য নির্মানকাজে ব্যয় দেখানো হয়েছে দুই কোটি ৫০ লাখ টাকা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটসহ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রকাশিত ডায়েরি, ক্যালেন্ডার ও স্মারণিকাতেও বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল কমপ্লেক্সকে নির্মানাধীন উল্লেখ করা হয়েছে। তবে নির্মাণের যে স্থান দেখানো হয়েছে, সরেজমিনে সেই স্থানে গিয়ে ঘাস এবং আগাছা ব্যতিত কিছুই পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের সাথে কথা বললেও তারা কেউই বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালের অবস্থান সম্পর্কে জানাতে পারেননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী জানান, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকেই শুনে আসছি বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল কমপ্লেক্স নির্মাণাধীন। তবে এখন পর্যন্ত আমরা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল কমপ্লেক্স নির্মাণের কোনো ধরনের উদ্যোগ দেখতে পাইনি। এটা খুবই দুঃখজনক যে বঙ্গবন্ধুর জন্মভূমিতে তার নামে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ে তার ম্যুরাল নিয়ে মিথ্যাচার হচ্ছে।’

এ বিষয়ে ২০১৭ সালে প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্বে থাকা প্রফেসর ড. আব্দুর রহিম খানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টা সম্পর্কে সঠিকভাবে কিছু জানেন না বলে জানান এবং প্রকল্প উপ-পরিচালক তুহিন মাহমুদের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।

পরবর্তীতে তুহিন মাহমুদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস’কে বলেন, ‘প্রকল্পগুলোর জন্য অর্থ বরাদ্দ পেতে এ ধরণের তথ্য উপস্থাপন করা হয়। শুরুতে এটি শুধু ম্যূরাল ছিল, এখন ম্যূরাল কমপ্লেক্স করা হবে। আমরা টাকা ছাড় করানোর জন্য এ ধরণের তথ্য দিয়েছি। শিগগিরই টেন্ডার দেওয়া হবে।’

এসময় ২০১৪ সালেও কাজ শুরু হলেও এখনো শুরু করা যায়নি কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে এর বরাদ্দ আড়াই কোটি থেকে ১৮ কোটি হয়েছে। এখন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, শিগগিরই টেন্ডার হবে।’

তিনি বলেন, ‘বাজেটগুলো অনেক কমিটি দেখভাল করে। এ প্রকল্পও অনেক কমিটির নজরদারি রয়েছে। বাজেটের অর্থ খরচ না হলে তা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়ে দেওয়া হয়।’

এদিকে টেন্ডার প্রকাশ নিয়ে উপাচার্যের দেয়া বক্তব্যের বিষয়ে জানার জন্য একাধিকবার তাকে কল দেয়া হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। পরে এসএমএস ও ই-মেইলে যোগাযোগ করেও তাঁর কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, বশেমুরবিপ্রবি অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ ২০১৫ সালে শুরু হলেও এখন র্পর্যন্ত ২৩টি খাতের একটিরও কাজ শেষ হয়নি।


সর্বশেষ সংবাদ