চুল বড় রাখায় বুয়েট শিক্ষার্থীর কান ফাটালো ছাত্রলীগ

আহত অভিজিৎ কর
আহত অভিজিৎ কর

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক শিক্ষার্থীকে মারধর করে কানের পর্দা ফাটিয়ে দিয়েছে বুয়েট ছাত্রলীগের এক কর্মী। গত বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) রাতে এই ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

মারধরের শিকার ওই শিক্ষার্থীর নাম অভিজিৎ কর। সে ক্যামিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। অভিযুক্ত সৌমিত্র লাহিড়ী মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।

এ বিষয়ে জানতে মঙ্গলবার রাত নয়টার দিকে মারধরের শিকার অভিজিতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পসকে জানান, গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আহসানউল্লাহ হলের ২০৫ নং গনরুমের ১ম বর্ষের সকল শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় বর্ষের ‘বড় ভাইরা’ ডাকেন। কিছুক্ষণ পরে, তারা প্রথম বর্ষের সবাইকে একজন একজন করে সামনে ডাকেন। একটা ছেলেকে দাঁড়ি রাখার জন্য থাপ্পড় মারা হয়। আরেকটা ছেলে নাকি কবে কোন বড় ভাইয়াকে সালাম দেয় নাই, সেজন্য তাকেও মারধর করা হয়।’

কয়েক জনের পর অভিজিৎকে ডাকা হয়। তখন, সৌমিত্র লাহিড়ী অভিজিৎকে তার চুল বড় কেন এবং শেষ কবে সে চুল কাটিয়েছে জিজ্ঞেস করলে অভিজিৎ শেষ দুই সপ্তাহ আগে চুল কাটিয়েছে জবাব দেয়। তারপর আবার সৌমিত্র জিজ্ঞেস করে চুল বড়ো কেনো? এই প্রশ্নের জবাব দিতে না পারায় তখনই সৌমিত্র খুব জোড়ে অভিজিৎ এর কানে জোড়ে একটা থাপ্পর মারে। তখন কানে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করায় এবং অবস্থা খারাপ হওযাতে 'বড় ভাইরা' অভিজিৎকে রুমে পাঠিয়ে দেন।'

পরে ডাক্তারের কাছে গেলে ডাক্তার অভিজিৎকে কানের পর্দা ছিড়ে গেছে এবং কানের ভিতরে রক্ত জমেছে বলে জানান। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিরেক্টর অব স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার (DSW) ড. মিজানুর রহমানের কাছে অভিযোগ করেন বলে জানান অভিজিৎ। এর পরিপ্রেক্ষিতে আহসানুল্লাহ হলের প্রাধ্যক্ষ্য ও আবাসিক শিক্ষকদের নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে জানান অভিজিৎ।

এদিকে অভিযুক্ত সৌমিত্র লাহিড়ীর সঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

ঘটনা সম্পর্কে জানার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিএসডব্লিউ ড. মিজানুর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিয়েও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে জানতে চাইলে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জামি উস সানি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবারের ঘটনা আপনারা যা শুনেছেন সেটা সত্য। আমার হলেই ঘটনা ঘটেছে। ওই ছেলের কানের মধ্যে একটু সমস্যা হয়েছে। ডাক্তার কানে পানি ঢুকতে না দেওয়ার জন্য বলেছে। তবে এমনিতে কান ঠিক আছে।’

তবে অভিযুক্ত সৌমিত্র তার অনুসারী কি না জানতে চাইলে তিনি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগেই তো আমাদের কমিটি হয়েছে। কিন্তু আমাদের গ্রুপে তার নাম নেই। এসব ছেলেরা কিছুদিন পোগ্রাম করে নিজেকে বিভিন্ন গ্রুপের পরিচয় দিতে থাকে।’


সর্বশেষ সংবাদ