শিক্ষকের যৌন নিপীড়ন নিয়ে স্ট্যাটাস: বহিষ্কারই হলেন সেই শিক্ষার্থী

*পাঁচ শিক্ষার্থীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুই ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠে। এই ঘটনায় কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান আক্কাস আলীর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগের তদন্ত চলাকালীন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয় একই বিভাগের এক শিক্ষার্থী। তদন্তকালীন স্ট্যাটাস দেয়ায় তাকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। একইসঙ্গে সিইসি বিভাগের আরও পাঁচ শিক্ষার্থীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৯ মে) বশেমুরবিপ্রবি রেজিস্ট্রার ড. মো. নুরুদ্দীন আহমেদের স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থী এহতেশামুল হককে এই বহিষ্কারাদেশ দেয়া হয়। রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, আক্কাস আলীকে নিয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের প্রেক্ষিতে গঠিত তদন্ত কমিটির তদন্তচলাকালীন সময়ে ফেসবুকে অশালীন স্ট্যাটাস দেয়ায় তদন্ত কমিটি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটির সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে তাকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীর এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য থাকলে তা পরবর্তী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে লিখিতভাবে রেজিস্ট্রার দফতরে জমা দিতে বলা হয়েছে।

একইসঙ্গে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে সিএসই বিভাগের আরও পাঁচ শিক্ষার্থীকে। কারণ দর্শানোর নোটিশ পাওয়া ৫ শিক্ষার্থী হলেন, মেহেদী হাসান, বিষ্ণু চন্দ্র সরকার, মো. মেজবাউল হাসান, মো. রাশেদুজ্জামান সিকদার ও সুকান্ত কুমার ঘোষ।

বৃহস্পতিবার (৯ মে) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রার প্রফেসর ড. মো. নূরউদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এই পাঁচ শিক্ষার্থীকে তদন্ত চলাকালীন সময়ে আক্কাস আলীকে নিয়ে অশালীন স্ট্যাটাস দেয়ায় কেনো তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না এ বিষয়ে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর আদেশ দেয়া হয়েছে।

বহিষ্কার আদেশ

 

কারণ দর্শানোর নোটিশ পাওয়া এক শিক্ষার্থী অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, ‘আন্দোলন চলাকালীন সময়ে পত্র পত্রিকায় ও টেলিভিশনের যে সব সংবাদ প্রকাশ ও প্রচার হয়েছে তা আমরা ফেসবুকে দিয়েছি। কিন্তু কোনো ধরনের অশালীন স্ট্যাটাস দেইনি। এখন আমরা ৫ জন এক সাথে বসে আলাপ আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহন করব।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রার প্রফেসর ড. মো. নূরউদ্দিন আহমেদ জানান, আন্দোলন চলাকালে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে  স্ট্যাটাস দেয় ওই শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে এক শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কারসহ পাঁচ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর জন্য আমাকে পত্র দেয় বিশ্ববিদ্যালয় শৃঙ্খলা বোর্ড। সেই অনুযায়ী আমি এক শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কারাদেশ দিয়েছি এবং পাঁচ শিক্ষার্থীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছি।

উল্লেখ্য, বশেমুরবিপ্রবি সিএসই বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান আক্কাস আলীর দ্বারা দুই ছাত্রী যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এর প্রতিবাদে গত ৭ এপ্রিল (রোববার) থেকে শিক্ষার্থীরা ক্লাশ ও পরীক্ষা বর্জন করে ওই শিক্ষকের স্থায়ী অপসারণের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. মো. আব্দুর রহিম খানকে সভাপতি করে ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। একইসাথে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী ১৮ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় শৃঙ্খলা বোর্ড আক্কাস আলীকে আজীবনের জন্য বিভাগীয় প্রধানের পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করে এবং পরবর্তী ৮ সেমিষ্টারের জন্য সকল ধরনের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কায্যক্রম থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়।


সর্বশেষ সংবাদ