কওমি মাদ্রাসার আয়ে বড় ধাক্কা

  © ফাইল ফটো

দেশে প্রায় ১৫ হাজারের বেশি কওমি মাদ্রাসা রয়েছে। এগুলোর আয়ের অন্যতম উৎস কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি থেকে। গত কয়েক বছর চামড়ার অব্যাহত দরপতনে কওমি মাদ্রাসাগুলো কিছুটা অর্থ সংকটে পড়েছিল। করোনার কারণে এই বছর চামড়া সংগ্রহও হয়েছে কম, আবার গত বছরের চেয়ে আরও দাম কমেছে। সব মিলিয়ে দেশের কওমি মাদ্রাসাগুলো আয়ে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে।

কওমি মাদ্রাসাগুলো চলে সাধারণ মানুষের জাকাত, অনুদান ও কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ করে। জানা গেছে, দেশে নূরানী, হাফেজি মিলিয়ে সারাদেশে ১৫ হাজারের বেশি কওমি মাদ্রাসা রয়েছে। এসব মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৫ থেকে ১৮ লাখের মতো। আর শিক্ষকের সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ। মাদ্রাসার অধিকাংশ ছাত্র গরিব পরিবারের সন্তান এবং ৯৯ শতাংশ ছাত্র আবাসিক। আর সেখানে গরিব ছাত্রদের বিনামূল্যে খাবার দেওয়া হয় মাদ্রাসার লিল্লাহ বোর্ডিং থেকে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সারাদেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোতে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর কোরবানির পশুর চামড়া কম সংগ্রহ হয়েছে। করোনার কারণে দেশে যেমন কোরবানির দাতার সংখ্যা কমেছে, তেমনি বিভিন্ন কারণে কাঁচা চামড়াও কম সংগ্রহ হয়েছে।

আবার গত কয়েক বছর ধরে কাঁচা চামড়ার দাম কমার ধারাবাহিকতায় এই বছর আরও দাম কমেছে। এমনিতে করোনার কারণে মানুষের আয় কমে যাওয়ায় মাদ্রাসাগুলোর অনুদানও কমেছে। এর মধ্যে কোরবানির চামড়া সংগ্রহের এই খাত থেকে আয় আরও বেশি কমার ফলে কওমি মাদ্রাসাগুলোর অর্থনৈতিক সংকট বাড়বে।

কওমি মাদ্রাসা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একসময় চামড়া বিক্রির অর্থ দিয়ে কওমি মাদ্রাসার লিল্লাহ বোর্ডিংয়ের ৫ মাসের খরচ চলতো। যখন চামড়ার মূল্য ২ হাজার থেকে তিন হাজার পর্যন্ত ছিল, তখন আমাদের ছোট মাদ্রাসায় ৫শ চামড়া সংগ্রহ করতে পারলে আড়াই হাজার করে বিক্রি করলে সাড়ে ১২ লাখ টাকা আয় হতো। তা দিয়ে অত্যন্ত ৩ থেকে ৪ মাসের লিল্লাহ বোর্ডিংয়ের ব্যয়টা হয়ে যেত। আর বড় মাদ্রাসাগুলোর চামড়া আয় দিয়ে ৪ থেকে ৫ লিল্লাহ বোর্ডিং চালানোর ব্যবস্থা হয়ে যেত।

এছাড়া রমজানের জাকাত সংগ্রহ, বিভিন্ন সময় মানুষ দানের আয় দিতে অন্যান্য মাসগুলো চলে যেত। বড় কথা হচ্ছে কোরবানির চামড়ার বড় একটি ভূমিকা ছিল।

করোনার কারণে দেশের অন্যান্য বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ন্যায় কওমি মাদ্রাসাগুলোতেও অর্থনৈতিক চাপ পড়েছে বলে জানিয়েছেন বেফাকের সহ-সভাপতি মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া। তিনি বলেন, এখন দেশেও ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা-স্বাস্থ্য সব ক্ষেত্রেই অর্থনৈতিক চাপ পড়েছে। কওমি মাদ্রাসাগুলো আবাসিক প্রতিষ্ঠান এবং সাধারণ মুসলমানদের সাহায্য-সহযোগিতায় পরিচালিত হয়ে থাকে। যেহেতু দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য করোনার প্রভাব পড়েছে, সেই অনুযায়ী মাদ্রাসাগুলোর ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। অর্থনৈতিক চাপ বাড়ছে।

তিনি বলেন, করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে মাদ্রাসাগুলোতে ছাত্র-শিক্ষক না থাকার কারণে চামড়া যেভাবে সংগ্রহ করার দরকার ছিল, সেইভাবে সংগ্রহ করতে পারে নাই। একদিকে চামড়ার সংগ্রহ কম, অন্যদিকে দরপতন। সব মিলিয়ে এর প্রভাব পড়ছে কওমি মাদ্রাসাগুলো ওপর।