পরিসর বাড়ছে অনলাইন ক্লাসের, বড় চ্যালেঞ্জের মুখে অভিভাবকরা

  © বিবিসি

করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে দেশের সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠান কবে আবার স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করবে, জানা নেই কারোর। ফলে অনলাইনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে শিক্ষা কার্যক্রম সচল করছে অনেক প্রতিষ্ঠান। তবে এতে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে অভিভাবকরা। কারণ সন্তানের শিক্ষার দায়িত্ব এখন প্রায় পুরোটাই তাদের ওপর। এ কাজ করতে গিয়ে অনেকে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ছেন বলেও জানিয়েছেন।

অভিভাবকদের মতে, অনলাইন শিক্ষা নিয়ে শুরুতে অস্বস্তি থাকলেও বাস্তবতার কারণে তা মেনে নিতে হয়েছে। তবে আরও দক্ষতার সঙ্গে কাজটি করা যেত। বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট, সরঞ্জামসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে হিমশিম খেতে হয়। সন্তানদের সঠিকভাবে দিক-নির্দেশনা দেওয়ায় একটা চ্যালেঞ্জ। তার ওপর বাড়তি হোমওয়ার্ক রয়েছে। এ নিয়ে এক ধরনের গা ছাড়া ভাব আছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর- এমন অভিযোগও করছেন তারা।

রাজধানীর একটি স্কুলের ইংরেজি ভার্সনের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী রুমানা তাবাসসুম।  গত মার্চ থেকে স্কুল বন্ধ থাকায় শুরুতে স্কাইপেতে একঘণ্টা করে ক্লাস করতো। তবে এখন আরেক প্ল্যাটফর্ম জুমের মাধ্যমে মাত্র চল্লিশ মিনিট করে তিনটি ক্লাস করে। স্বাভাবিক সময়ে কমপক্ষে ছয় ঘণ্টা লাগলেও গত তিন মাসে অনলাইনে সেটি দেড় থেকে দুই ঘণ্টায় নেমে এসেছে। দ্রুত ক্লাস শেষ করতে শিক্ষকরা হোমওওয়ার্ক দিয়েছেন বেশি। ফলে শিশুদের প্রস্তুত করা ভার এখন অভিভাবকদের ওপর।

ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি)-এর একটি গবেষণা বলছে, করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার সময় কমছে। আগে গ্রামের শিক্ষার্থীরা দিনে ১০ ঘণ্টা ব্যয় করত। এখন তা নেমে এসেছে  দুই ঘণ্টায়। ৮০ শতাংশ সময় কমেছে পড়াশোনার। টেলিভিশনে ‘ঘরে বসে শিখি’ ও ‘আমার ঘরে আমার স্কুল’ অনুষ্ঠান দেখছে মাত্র ১৬ শতাংশ শিক্ষার্থী। সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনলাইন ক্লাসের বেহাল দশা। বেশিরভাগ শিক্ষার্থী অনলাইনে ক্লাস করার মতো অবস্থায় নেই।

রাজধানীর একটি ইংলিশ মিডিয়াম মাধ্যম স্কুলের এ শিক্ষার্থীর মা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বেতনের অর্ধেক মায়েদের দেওয়া উচিত ছিল। অনলাইন ক্লাস চলাকালে পাশে বসে থাকতে হয়। বাচ্চারা বিষয়টা বুঝতে পারে না অনলাইনে। তার ওপর নেটওয়ার্কের সমস্যা। বিদ্যুৎ চলে যায়। শিক্ষকরা বাড়ির জন্য বেশি পড়া দিয়ে দায়িত্ব শেষ করছেন। বিষয়টা মনিটরিংয়ের থাকলে ভালো হতো।

ভিন্নধর্মী স্কুল সহজপাঠের সিদ্দিক বেলাল বলেন, ‘আরও ভালো হয়তো করা যেত। তবে অনলাইনে এই যোগাযোগ থাকা খুব কাজের হয়েছে। সামনাসামনি যেমন পাঠদান, তা অনলাইনে কখনোই হবে না। কিন্তু চেষ্টা করেছি যাতে শিশুরা সবকিছু ভুলে না যায়। তারা যাতে সিলেবাস শেষ করার গাইডলাইন পায়।’

তিনি বলেন, ‘অনলাইনে নানা সৃজনশীল কাজে উদ্বুদ্ধ করা সম্ভব। ফটোগ্রাফি, শর্টফিল্ম বানানো, চিত্রাঙ্কন, গান, শরীরচর্চা ও যোগব্যয়ামের ক্লাস হতে পারে। এসব শিশু-কিশোরদের মানসিক স্বাস্থ রক্ষায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। অভিভাবক বাড়িতে যদি বই নিয়ে অভ্যাস করতে পারেন, সেটাও কম নয়। আমরা বলতে চাই না ঠিক কাজটিই করছি, তবে বিকল্প কোনো অপশন নেই।'

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক সাংবাদিকদেরকে বলেন, ‘করোনার সময়ে সীমাবদ্ধতার মধ্যে দিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। বরাদ্দ নেই, অনেক শিক্ষক বিনা টাকায় কাজ করছেন। তারপরও উন্নত করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’